‘প্রতিষ্ঠানের স্বার্থরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ফাইন্যান্স কর্মকর্তা’

 

একটি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিভাগ-প্রধানের সাফল্যের ওপর নির্ভর করে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইও’র সফলতা। সিইও সফল হলে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেশি হয়। খুশি হন শেয়ারহোল্ডাররা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সিইও’র সুনাম। প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), কোম্পানি সচিব, চিফ মার্কেটিং অফিসারসহ এইচআর প্রধানরা থাকেন পাদপ্রদীপের আড়ালে। টপ ম্যানেজমেন্টের বড় অংশ হলেও তারা আলোচনার বাইরে থাকতে পছন্দ করেন। অন্তর্মুখী এসব কর্মকর্তা সব সময় কেবল প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকেন। সেসব কর্মকর্তাকে নিয়ে আমাদের নিয়মিত আয়োজন ‘টপ ম্যানেজমেন্ট’। শেয়ার বিজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এবার শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. জাফর ছাদেক, এফসিএ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. হাসানুজ্জামান পিয়াস

মো. জাফর ছাদেক, এফসিএ শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও)। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পরে সম্পন্ন করেন পেশাগত ডিগ্রি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি। তিনি দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) একজন সম্মানিত ফেলো

শেয়ার বিজ: ক্যারিয়ারের গল্প দিয়ে শুরু করতে চাই

মো. জাফর ছাদেক: ২০০৬ সালে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডে অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগে যোগদানের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করি। ওই প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন কাজ করার পর একই বছরে শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের ফাইন্যান্স বিভাগে এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে যোগ দিই। পরে পদোন্নতি পেয়ে সিএফও হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নিই ২০১৫ সালে।

শেয়ার বিজ: পেশা হিসেবে ফাইন্যান্সকে কেন বেছে নিলেন?

জাফর ছাদেক: স্কুলে পড়ালেখার সময় পরিচিত জনদের কাছে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি সম্পর্কে গল্প শুনতাম। সবাই বলতো পেশাটি বেশ সম্মানজনক। পাস করা একটু কঠিন, তবে ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। মূলত তখন থেকেই চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সির প্রতি আগ্রহ জন্মে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের জন্য ফাইন্যান্স পেশায় ভুমিকা রাখার সুযোগ বেশি। বর্তমানে ফাইন্যান্স পেশার ভ‚মিকা কেবল হিসাব-নিকাশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের কাজ করেন ফাইন্যান্স কর্মকর্তা। চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা তাদের জ্ঞানের প্রয়োগ করতে পারেন এ বিভাগে কাজ করে। তাছাড়া এ পেশার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে, যে কারণে ফাইন্যান্স পেশাকে বেছে নিয়েছি।

শেয়ার বিজ: প্রতিষ্ঠানে দক্ষ সিএফও বা ফাইন্যান্স কর্মকর্তার ভুমিকা গুরুত্ব সম্পর্কে বলুন

জাফর ছাদেক: আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত এবং বিশ্লেষণের মধ্যেই শুধু সিএফওর ভুমিকা সীমাবদ্ধ নয়। প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘমেয়াদি যে লক্ষ্য তা অর্জনে পর্যাপ্ত আর্থিক জ্ঞান ও দক্ষতা থাকা একজন সিএফও’র জন্য আবশ্যক। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ আর্থিক নিয়ন্ত্রণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সিএফও’র বড় দায়িত্ব। প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধিতে যথাযথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে থাকেন ফাইন্যান্স কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত প্রতিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণে সিএফও’র ভুমিকা থাকে।

শেয়ার বিজ: ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট (এফআরএ) প্রতিষ্ঠানের ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে?

জাফর ছাদেক: দীর্ঘদিনের আলোচিত বিষয় এফআরএ। যদিও আর্থিক খাতে একাধিক নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা থাকার পরও সেগুলোকে অধিকতর কার্যকরী না করে এফআরএ প্রণয়ন করা হয়েছে, তা সত্তেও সঠিকভাবে যাতে নতুন এই আইন নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে কাজ করতে পারে, সেজন্য দক্ষ প্রফেশনাল বিশেষ করে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের অধিকতর অংশগ্রহণ জরুরি।

যেহেতেু আইন হয়ে গেছে, এখন আইনের সঠিক বাস্তবায়ন করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে আইনকানুন মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে এবং এফআরএ’র সঠিক বাস্তবায়ন হয়, তাহলে তা ভালো হবে আশা করা যায়।

 শেয়ার বিজ: বাংলাদেশের করনীতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

জাফর ছাদেক: আমাদের দেশে করপোরেট ট্যাক্সের হার অন্য দেশের তুলনায় বেশি। অনেক ক্ষেত্রে ডাবল ট্যাক্স নেওয়ার একটা বিষয়ও রয়েছে। তাছাড়া কর দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকা সত্তে¡ও প্রতিষ্ঠানের কিছু খরচ কর কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখান করে, যা ব্যবসার জন্য মোটেও ভালো নয়।

ব্যক্তিখাতে প্রতিবছর করের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, কিন্তু তুলনামূলকভাবে কর প্রদানকারীর সংখ্যা বাড়ে না। অনেক এলাকা কর আওতার বাইরে। নতুন অনেক মানুষ কিংবা তুলনামূলক ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করের আওতায় আসছে না। তাছাড়া কর দিতে গিয়ে আমরা অনেক ঝামেলার সম্মুখীন হই। হার কমিয়ে কর এলাকা বাড়ানো উচিত। কর প্রদানের প্রক্রিয়া আরও সহজ করা এবং কর কর্তৃপক্ষকে আরও ফ্রেন্ডলি হওয়া উচিত। জোরজবরদস্তি না করে মানুষকে কর প্রদানে উৎসাহিত করতে হবে।

শেয়ার বিজ: বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় বিদেশি সিএ ফার্মের সহযোগিতা নেওয়ার প্রবণতা বেশি কেন?

জাফর ছাদেক: বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বের নানা দেশে ব্যবসা পরিচালনা করে। তাদের শেয়ারহোল্ডারও থাকে বিভিন্ন দেশের। বিশ্বব্যাপী তারা একই অডিট ফার্ম অথবা তাদের প্রতিনিধি/সদস্য ফার্মের মাধ্যমে কাজ করাতে চায় যাতে করে একই স্ট্যান্ডার্ড বজায় থাকে। এতে শেয়ারহোল্ডারসহ সব পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের অনেক অডিট ফার্ম বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে।

 শেয়ার বিজ: ব্যাংকিং সেক্টরে একজন সিএফও জন্য চ্যালেঞ্জিং বিষয় কী?

জাফর ছাদেক: ফাইন্যান্সিয়াল ডিসিপ্লিন ঠিক রাখা, সঠিকভাবে ব্যবসায়িক কর্মপরিকল্পনা ঠিক করা, ব্যাংকিং সেক্টরে পরবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা, কর্মকৌশল নতুন নতুনভাবে নির্ধারণে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করা, প্রতিষ্ঠানের টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য সব ধরনের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার নির্দেশনা ও আইনকানুন মেনে কমপ্লাইড থাকা ইত্যাদি বিষয় অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। এছাড়া একজন সিফওকে ব্যাংকিং সেক্টরে নিত্যনতুন পরিবর্তনসহ সব বিষয়ে ভালোভাবে অবগত থাকতে হবে।

 

শেয়ার বিজ: যারা পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন

জাফর ছাদেক: ফাইন্যান্স পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুকদের স্বাগত জানাই। ক্যারিয়ার শুরুর আগে পেশাগত ডিগ্রি নিলে ভালো হয়। হাতে-কলমে অনেক কিছু শেখা যায়। আইনকানুন সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। ফলে কর্মক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সহজ হয়।

 

শেয়ার বিজ: সফল ফাইন্যান্স কর্মকর্তা হওয়ার জন্য আপনার পরামর্শ কী?

জাফর ছাদেক: সফলতার জন্য সৎ, পরিশ্রমী ও ধৈর্যশীল হতে হবে। নিজেকে আপডেট রাখার জন্য নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে। কোনো কাজ করার আগে তা ভালোভাবে বুঝতে হবে। ব্যবসা সম্পর্কে জানতে হবে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০