নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় প্রায় আট হাজার। গতকাল রোববার বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের ১০ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী ও জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যানসার ইপিডেমিওলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করে ক্যানসার নিয়ে কাজ করা ৩০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের এই মোর্চা।
এতে লিখিত বক্তব্যে ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার বলেন, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১৩ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, মারা যায় প্রায় আট হাজার। আক্রান্ত রোগীর তুলনায় মৃত্যুহার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব এবং নারীদের সংকোচবোধের কারণে দেরিতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে সার্বিকভাবে ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থা অপ্রতুল। স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ, প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয় ও ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের কোনো জাতীয় কর্মকৌশল, কর্মপরিকল্পনা ও কর্মসূচি নেই।
তিনি আরও বলেন, লক্ষণ না থাকলেও ঝ্ুঁকিপূর্ণ নারীদের সহজ ও ব্যথাহীন পদ্ধতি প্রয়োগ করে গোপন থাকা ক্যানসার নির্ণয় করাকে ক্যানসার স্ক্রিনিং বলা হয়। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় স্তন ক্যানসার নির্ণয় করা গেলে এবং সময়মতো পরিপূর্ণ চিকিৎসা দিতে পারলে শতকরা ৯০ ভাগ রোগীর সুস্থ হওয়া সম্ভব। দুঃখের বিষয়, আমরা এখানে অনেক পিছিয়ে থাকায় তিন-চতুর্থাংশ রোগ ধরা পড়ে শেষ পর্যায়ে।
তিনি আরও বলেন, বিএসএমএমইউ’র গাইনি বিভাগের চালু করা জরায়ুমুখের ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্তন ক্যানসারের যে স্ক্রিনিং দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলোয় সরকারের সহযোগিতায় চালু আছে, তা অসংগঠিত ও অসম্পূর্ণ। অবিলম্বে স্তন, জরায়ুমুখ ও মুখগহ্বরের ক্যানসারÑএই তিনটির জন্য সমাজভিত্তিক, সংগঠিত ও সমন্বিত জাতীয় স্ক্রিনিং কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন শুরু হওয়া দরকার।
২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর ১০ অক্টোবর দেশে বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের আহ্বানে বেসরকারিভাবে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস পালিত হয়ে আসছে বলে জানানো হয়। এ সময় দিবসটি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে মাসব্যাপী কর্মসূচিও ঘোষণা করে বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম।
কর্মসূচিগুলো হলোÑ১০ অক্টোবর সারা দেশে স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস উদ্যাপন এবং স্তন ক্যানসার সচেতনতায় আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা ও সহজ ভাষায় লেখা লিফলেট বিতরণ।
একই দিন ঢাকায় কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান হবে মহাখালীর আইইডিসিআরের মিলনায়তনে। অনুষ্ঠান শেষে এখান থেকে ফোরামের একটি টিম বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয়টি জেলা অভিমুখে রওনা হবে চার দিনের গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রায়। জেলা ও উপজেলায় পথসভা, শোভাযাত্রা, সেমিনারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি মানুষের হাতে সরাসরি সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেয়া হবে। ১০ অক্টোবর ঢাকা থেকে রওনা হয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব, কুলিয়ারচর, কটিয়াদি উপজেলা সদর ও জেলা সদরে কাজ করবে। পরদিন দুপুর ১২টায় গুরুদয়াল কলেজে অনুষ্ঠান শেষে নান্দাইল, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা হয়ে ময়মনসিংহে পৌঁছাবে। এভাবে নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, টাঙ্গাইল জেলা সদর ও কয়েকটি উপজেলায় এই শোভাযাত্রা সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবে।
এছাড়া ফোরামের অন্যতম সদস্য সংগঠন কমিউনিটি অনকোলজি সেন্টার ট্রাস্ট শুক্রবার ছাড়া পুরো অক্টোবর মাস প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ফ্রি স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং করবে। একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী চিকিৎসক প্রথমে পরীক্ষা করবেন। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। কোনো ইনভেস্টিগেশন লাগলে তা ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টে করা যাবে ধানমন্ডির মেডিনোভা ও সোবহানবাগের বায়োমেড ল্যাব থেকে। দরিদ্র রোগীদের জন্য সিওসি ট্রাস্টের রোগীকল্যাণ তহবিলের সহযোগিতায় বিনা মূল্যে করে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
এই সেবার জন্য নিবন্ধন করা যাবে ০১৭৮৯৪৪৪৭৬৭, ০২-২২৩৩১০৬৫৫ নম্বরে, ফোন করে কিংবা ০১৯৭৭-৫৯১৯০৭ নম্বরে এসএমএস করে রোগীর নাম, বয়স, ঠিকানা ও ফোন নম্বর পাঠিয়ে। পাশাপাশি অনলাইনেও নিবন্ধনের সুযোগ থাকবে। সোবহানবাগে সালিমা ইনস্টিটিউটেও অক্টোবরের ৩ তারিখ থেকে সরাসরি স্ক্রিনিং করা যাবে।
নারী উদ্যোগ কেন্দ্র ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে নারীদের ক্যানসার নিয়ন্ত্রণে বিস্তারিত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। ৭ ও ১০ অক্টোবর যথাক্রমে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে এর উদ্বোধন হবে। নারীপক্ষ, ওয়াইডব্লিউসিএ, হারমনি ট্রাস্ট, অপরাজিতাসহ বিভিন্ন সংগঠনেরও সচেতনতামূলক কর্মসূচি থাকবে।