Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:46 am

প্রতি মাসে রাজস্ব আহরণ করতে হবে ২৭৫০০ কোটি টাকা

রহমত রহমান: প্রতি বছর বাড়ছে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা। সক্ষমতা বিচার আর দিকনির্দেশনা না দিয়েই বাড়ানো হয় লক্ষ্যমাত্রা। ফলে প্রতি বছর বাজেটের আগ মুহূর্তে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হয়। আর অটোমেশনের কথা বলা হয় প্রতি বাজেটে। কিন্তু তার ফল হয় শূন্য। এনবিআর থেকে প্রতি বছর যৌক্তিক লক্ষ্যমাত্রা দিতে বলা হয়, যাতে কর্মকর্তারা রাজস্ব আহরণে চাপ না নিয়ে মনোনিবেশ করতে পারে। কিন্তু সেই আশা হয়ে যায় গুড়েবালি।

##চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা

##প্রতিদিন রাজস্ব আহরণ করতে হবে ৯০৪ কোটি ১১ লাখ টাকা

##চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি এনবিআর, অটোমেশন হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য এনবিআরকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে; যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। এ লক্ষ্যমাত্রা মোট বাজেটের ৫৮ দশমিক ১ শতাংশ। ফলে আগামী অর্থবছর প্রতি মাসে আহরণ করতে হবে ২৭ হাজার ৫০০ কোটি আর প্রতিদিন প্রায় ৯০৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। যেখানে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর প্রতিদিন আহরণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৮২৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, আগামী অর্থবছর ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি ৩৭ দশমিক ৯ শতাংশ রাজস্ব আহরণ করতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট থেকেই আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ১৬২ কোটি টাকা, যা চলতি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা বেশি। সে অনুযায়ী আগামী অর্থবছর প্রতিদিন ভ্যাট আহরণ করতে হবে ৩৪২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর এর পরিমাণ প্রায় ৩০১ কোটি টাকা। আর আয়কর থেকে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা আগামী অর্থবছর আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে, চলতি বছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যা ১ হাজার ৫১ কোটি টাকা বেশি। আগামী অর্থবছর প্রতিদিন আহরণ করতে হবে ২৮৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছর যা করতে হচ্ছে প্রায় ২৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

এদিকে আগামী অর্থবছর শুল্ক খাতে রাজস্ব আহরণ করতে হবে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছর থেকে ৩ হাজার ৩১২ কোটি টাকা বেশি। প্রতিদিন আহরণ করতে হবে ২৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে আগামী অর্থবছর সম্পূরক শুল্কের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১০ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা বেশি।

আমদানি শুল্কের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থাৎ ৩৭ হাজার ৮০৭ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৪ হাজার ১২৩ কোটি টাকা বেশি। রপ্তানি শুল্ক থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছর সংশোধিত বাজেটের থেকে ৬ কোটি টাকা বেশি। আবগারি শুল্কের লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এ খাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। আর অন্যান্য কর বাবদ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। চলতি বছর এ খাতের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রতি মাসে এনবিআরের আহরণ লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৫ হাজার ৪১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। মার্চ মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে আদায় হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৩৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকার বেশি। এপ্রিল মাসে এই আদায় অনেক কমে যায়। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের গড় আদায়ের মাত্র ৪১ শতাংশ আসে ওই মাসে।

এনবিআর সূত্র জানায়, অর্থনীতিতে করোনাভাইরাস মহামারি ধাক্কার পর গত মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ২৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা কমিয়ে ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকা করা হয়। সেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এপ্রিল মাস পর্যন্ত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। সেখানে আদায় করা সম্ভব হয়েছে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকেও ১০ মাসে প্রায় ৬২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় পিছিয়ে আছে।

এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, এই মহামারি মধ্যেও গত ১০ মাসে যা আদায় হয়েছে, তা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকা বা দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি। আহরণে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল আয়কর খাত। এরপর রয়েছে ভ্যাট। তবে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে জটিলতা আর ইএফডি মেশিন বসাতে না পারায় ভ্যাটে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। তবে আগামী অর্থবছর ইএফডি বাস্তবায়নের কথা বাজেটে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে শুল্ক খাত। বিগত ২৫ বছরেও এ খাতে এত কম প্রবৃদ্ধি হয়নি।

এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি আছি। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাব অব্যাহত থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে।’ কৌশলগত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে কর ফাঁকি রোধে সবকিছু অটোমেশন করা হবে। পাশাপাশি করজালের আওতা বাড়ানো হবে।’

এ বিষয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘বাজেটের আকার বড় হলে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রাও বড় হয়। সাধারণত সরকারের সামনে উচ্চ প্রবৃদ্ধির আকাক্সক্ষা থাকে বিধায় সামর্থ্যরে তুলনায় অর্জনের টার্গেটটিও উচ্চাভিলাষী হয়। ফলে দেখা যায়, রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বিগত বছরের প্রকৃত রাজস্ব সংগ্রহের তুলনায় ৪০ শতাংশেরও অধিক ধরা হয়। বাস্তবে বড়জোর ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়, যদি দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে সচল থাকে। কিন্তু প্রতি বছরই কোনো না কোনো প্রতিবন্ধকতার কারণে রাজস্ব সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়ে ওঠে না। এর ওপর বিভিন্ন সেক্টরে শুল্ক কর ও ভ্যাট ছাড় তো আছেই। এসব কারণে রাজস্ব টার্গেট বড় হলে শত চেষ্টা করেও অবাস্তব লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে না পারায় ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যায়।’