খ্রিস্টীয় বর্ষ ২০১৭ শুরু হচ্ছে আজ। এ আনন্দঘন দিনে আমরা শেয়ার বিজের পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা। আশা করি নতুন বছর সবার জন্য বয়ে আনবে আনন্দবার্তা এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবে বছরের প্রতিটি দিন। দেশের কর্মক্ষম প্রত্যেক নাগরিকের কর্মমুখরতায় গতিশীল হয়ে উঠবে আমাদের অর্থনীতি। তার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা যুক্ত হয়ে জীবনযাত্রার মান হবে উন্নত।
বস্তুত ক্যালেন্ডারে ২০১৬ সালের পরিসমাপ্তি ঘটেছে এরই মধ্যে। ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজারসহ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আরও কিছু খাতের এ বছরের চিত্র সংক্ষিপ্ত আকারে এরই মধ্যে প্রকাশ করেছি আমরা। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত বছর পুঁজিবাজার ফিরেছে ইতিবাচক ধারায়। ব্যাংকিং খাতের অবস্থা সেরকম ভালো কাটেনি। বেশ কয়েকটি জালিয়াতির ঘটনা, খেলাপি ঋণ ও অলস অর্থই ছিল এ খাতে আলোচনার প্রধান বিষয়। আমাদের রফতানি খাত মূলত তৈরি পোশাকনির্ভর। এ শিল্পের মালিকদের জন্যও গত বছর তেমন ভালো কাটেনি। তাদের মোকাবিলা করতে হয়েছে বৈশ্বিক সংকট। প্রবাসী আয়ও কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। মনে আছে, পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির সংবাদও প্রকাশ করেছি আমরা। প্রশ্ন হলো, যেসব খাতে এ বিনিয়োগ বাড়ার কথা ছিল, সেগুলোয় বেড়েছে কি? এখন এর উত্তর খুঁজতে বলবো সংশ্লিষ্টদের। এডিপি বাস্তবায়ন এ বছর মোটামুটি কাক্সিক্ষত হারে হয়েছে বলা যায়। রাজস্ব আদায়ও আশানুরূপ। উৎপাদন ও সেবা খাত ভালো পারফর্ম করেছে বিদায়ী বছরে।
গত বছর দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল জঙ্গিবাদ। ভিনদেশি নাগরিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনাও দেখতে হয়েছে আমাদের। জঙ্গিবাদ দমনে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে বলেই মনে হয়। কিন্তু নতুন কর্মসৃজনে বিশেষত তরুণ ও কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর যে প্রত্যাশা ছিল, তা আশানুরূপ হয়নি। যথাসময়ে কাজ না পেলে মানুষের মধ্যে যে হতাশা ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, তার প্রভাব পড়ে নানাভাবে। এসব মোকাবিলার জন্যও সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে। নানা আলোচনার মধ্যেও গত বছর দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল স্থিতিশীল। এটা আশার সংবাদ বটে। এমন পরিবেশ নতুন বছরে বিরাজমান থাকলে অর্থনীতিও এর সুফল পাবে।
শেয়ার বিজ নতুন আঙ্গিকে প্রকাশের এক মাস পূর্তি হলো আজ। ধারণা করি, পাঠকরা আমাদের নতুন যাত্রাকে পর্যবেক্ষণ করছেন নিবিড়ভাবে। এ পথচলায় যেসব সীমাবদ্ধতা অনুভব করেছি, সেগুলো আমরা কাটিয়ে উঠতে চাই নতুন বছরে। অনেকে হয়তো লক্ষ করেছেন, এ সময় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির প্রোফাইল প্রকাশ করা হয়েছে। সংবাদ প্রতিবেদনে বাজারের ঘটনাবলির পাশাপাশি তুলে ধরা হচ্ছে এর অন্তর্নিহিত কারণ ও বিশ্লেষণ। বস্তুত উন্নত স্বদেশ সৃজনের লক্ষ্যে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ পুঁজিবাজারকে ফোকাস করেই আমরা পথ চলতে চাই। এতে সহযাত্রী হতে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি।
ব্যবসার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে বেশ কিছু নীতি সংশোধনের দাবি গত বছর তুলেছিলেন ব্যবসায়ী নেতারা। এর মধ্যে যেগুলোর মাধ্যমে অর্থনীতি ও সাধারণের বৃহত্তর কল্যাণ সম্ভব, সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হোক। নতুন বছরে দেশে ব্যবসার পরিবেশ উন্নততর করা গেলে ব্যাংকিং খাতেও বিরাজমান স্থবিরতা কেটে যাবে। পুঁজিবাজারের অন্যতম শক্তিশালী খাতটি ইতিবাচক ধারায় ফিরলে ওই বাজারেও তার প্রভাব পড়বে। বিদেশি বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত পরিমাণে ও উপযুক্ত ক্ষেত্রে পাওয়ার জন্যও দিতে হবে দৃষ্টি। এখন আমরা রয়েছি নি¤œ-মধ্যম থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রচেষ্টায়। এটা অর্জনে অর্থনীতির উল্লিখিত খাতগুলোকে আরও গতিশীল করতে হবে। এ লক্ষ্যে জনসাধারণের এগিয়ে আসার পাশাপাশি সরকারের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশিত।