প্রত্যাশা পূরণ হয়নি রবির বিনিয়োগকারীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশি কোম্পানি হিসেবে রবি আজিয়াটা লিমিটেড ভালো লভ্যাংশ দেবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন বিনিয়োগকারীরা। বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণার পর থেকে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা নানা প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন। কোম্পানিটি এবার ডিভিডেন্ডে চমক দেখাতে পারে বলে মন্তব্য করেছিলেন অনেকে। কিন্তু সেই প্রত্যাশা অনুযায়ী ডিভিডেন্ড না পাওয়ায় হতাশ হয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে পুঁজিবাজারে গত সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে শেয়ারটি দরপতনের তালিকায় শীর্ষে ছিল।

গত বুধবার (১৬ মার্চ) টেলিযোগাযোগ খাতের প্রতিষ্ঠান রবি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য দুই শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এর আগে কোম্পানিটি তিন শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। অর্থাৎ ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা সব মিলিয়ে পাঁচ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ পাচ্ছেন। পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঘোষিত লভ্যাংশ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের জন্য কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আগামী ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ এপ্রিল।

তবে রবিকে এই ডিভিডেন্ড দিতে রিজার্ভ ব্যবহার করতে হয়েছে। ২০২১ সালে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩৪ পয়সা। কিন্তু কোম্পানিটির বোর্ড ওই বছরের ব্যবসায় মোট ৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ মুনাফার অতিরিক্ত ১৬ পয়সা রিজার্ভ থেকে দিতে হবে।

আর্থিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ’২১) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় কমেছে। কোম্পানিটির গত বছরের প্রথম ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ’২১) যে হারে ব্যবসা হয়েছে, তার প্রতিফলন শেষ প্রান্তিকে দেখা যায়নি। আলোচিত সময়ে রবির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ৩২ পয়সা। তবে বছর শেষে এই মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ পয়সায়। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেষ প্রান্তিকে ইপিএস হয়েছে মাত্র ০২ পয়সা।

ডিএসইর ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত তথ্যমতে, রবি আজিয়াটা লিমিটেডের ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস হয়েছিল ০৭ পয়সা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে যা ০৯ পয়সা ও তৃতীয় প্রান্তিকে ১৭ পয়সা আয় হয়েছিল। এতে ৩টি প্রান্তিকের একত্রে বা ৯ মাসে ইপিএস দেখানো হয়েছিল ৩২ পয়সা। আর গত বুধবার ২০২১ সালের পুরো বছরের যে আর্থিক হিসাব প্রকাশ করেছে, সেখানে ইপিএস দেখিয়েছে ৩৪ পয়সা। এই হিসাবে শেষ প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফায় ব্যাপক কমে গেছে।

এর আগে বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণার পর থেকে কোম্পানিটির বিনিয়োগকারীরা নানা প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। আরিফুর রহমান নামে এক বিনিয়োগকারী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছিলেন, একই ধরনের ব্যবসায় থাকা গ্রামীনফোণ বিনিয়োগকারীদের ফাটাফাটি ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। রবি গ্রামীণফোনের মতো বড় ডিভিডেন্ড না দিতে পারলেও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ইজ্জত নষ্ট করবে না।

শাহাবুদ্দিন নামে আরেক বিনিয়োগকারী উচ্চাশা ব্যক্ত করে লিখেছিলেন, ডিভিডেন্ড ঘোষণার পর রবির খেলা শুরু হবে। এবার এক টানে ৭০ টাকা পার হবে।

তবে এসবের কিছুই ঘটেনি। প্রত্যাশা অনুযায়ী অনেক সাদামাটা ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে রবি। বাজার সংশ্লিষ্ট অনেকে বলছেন, এতে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশায় পানি ঢেলে দেয়া হয়েছে। ফলে শেয়ারটি নিয়ে হতাশা ছড়িয়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে।

এই হতাশা স্পষ্ট হয়েছে গত বুধবারের লেনদেনে। ওই দিন ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২২৮টির বা ৬০ শতাংশ শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। শেয়ার প্রতি তিন শতাংশের বেশি মূল্য হ্রাসের মাধ্যমে দরপতনের শীর্ষে ছিল রবি।

এ বিষয়ে মাসুম জামান নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, গ্রামীণফোনের সঙ্গে তুলনা করলে রবির এমন ডিভিডেন্ড প্রত্যাশিত নয়। বিনিয়োগকারীরা যেমন আশা করেছিলেন তাতে গুড়েবালি। যার কারণে হয়তো শেয়ারের দাম কমেছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া রবি আজিয়াটার পাঁচ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ২০২১ সালে শেয়ারপ্রতি ৩৪ পয়সা করে নিট ১৭৮ কোটি ৯ লাখ টাকার মুনাফা করেছে। তবে কোম্পানিটির পরিচালনা বোর্ড ওই বছরের জন্য ৫ শতাংশ হারে ২৬১ কোটি ৯০ লাখ টাকার ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এক্ষেত্রে মুনাফার অতিরিক্ত ৮৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা রিজার্ভ থেকে দিতে হবে।

অন্যদিকে, একই বছরে এক হাজার ৩৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে শেয়ারপ্রতি ২৫ টাকা ২৮ পয়সা করে নিট তিন হাজার ৪১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার মুনাফা করেছে আরেক মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০