নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রত্যেক নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ করতে চায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। শিশু জন্মের পরপরই তার তথ্য সংগ্রহ করা হবে। তারপর বড় হতে হতে তার যেসব শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিবাহ, সন্তান এমন সব তথ্যই হালনাগাদ করা হবে। এমনকি মারা গেলেও তাদের তথ্য মুছে ফেলা হবে না। মারা গেলে মৃত্যুর তথ্য হালনাগাদ করে তা সংরক্ষণ করা হবে। সবাই এ তথ্য দেখতে পারবে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়া কেউ সেই তথ্য মুছে ফেলতে বা কাটাছেঁড়া করতে পারবে না। এখান থেকে তথ্য নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), পাসপোর্টসহ অন্য যত সংস্থা আছে, তারা তাদের তথ্য হালনাগাদ করতে পারবে। এ ব্যবস্থার নাম হবে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার (এনপিআর)।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস ভবনে ‘স্টেকহোল্ডার (মিডিয়া) কনসালটেশন ওয়ার্কশপ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানান পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তবে বিবিএস এখনও এনপিআরের কাজ শুরু করেনি। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পেলেই এটি শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এ বিষয়ে সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, এনপিআরে পাঁচ বছরের হোক অথবা শূন্য বছরের হোক, জন্ম হওয়ার পর থেকেই করা যাবে। সব মানুষের তথ্য একটা সূত্রে থাকবে। ব্যবহারকারী যারা হবেন, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন ১৮ বছরের বেশি বয়সীদের তথ্য এখান থেকে নিয়ে নিতে পারবে। তাহলে আর তাদের আলাদা করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে না। তেমনি আমাদের জš§-মৃত্যু নিবন্ধন যারা করছেন, তারাও এখান থেকে তথ্য নিতে পারবেন। যাদের বয়স শূন্য তাদের তথ্য নিয়ে জš§ সনদ দিয়ে দিতে পারবেন তারা। যখনই যার প্রয়োজন হয়, এখান থেকে তথ্য নিতে পারবে। অনেক সময় কে কোন পরিবারের সদস্য, কার সন্তান কে, কার সঙ্গে কার বিয়ে হয়েছিল এগুলো নির্ধারণ করতে গিয়ে
অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এনপিআর কার্যকর হলে এ বিষয়ে অনেক জটিলতা কমে যাবে। এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন পেলে এটি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হবে।
বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এনপিআরের বিষয়ে প্রধান অতিথি (সচিব মোহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী) দু-একটা বিষয় বলেছেন। গতকাল (বুধবার) আমাকে সিলেট থেকে একজন টেলিফোন করেছেন। তিনি দীর্ঘ সময় বিদেশে ছিলেন। বিদেশ থেকে তিনি দেশে এসেছেন। এসে দেখেন, তার সম্পূর্ণ সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। কীভাবে হলো? অন্য একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে আসা বক্তির নাম ও তার বাবার নামে এনআইডি করে পুরো জমি তার নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন। বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তি আমাকে টেলিফোন করে বলেছেন, ২০১১ সালের জনশুমারিতে যে তালিকা আছে তার বাবা এবং তার নামে, সেই তালিকাটা যেন আমি তাকে দিই। তা দিয়ে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করবেন, ওই ব্যক্তি তার পরিবারের না। আমি মামলায় যাবো, মামলায় যেতে এ কাগজগুলো দরকার পড়বে। সেগুলো এগুলো আমি সংগ্রহ করছি।
তিনি আরও বলেন, যদি আমাদের ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রেশন থাকতো তাহলে কিন্তু এই ঝামেলা হতো না। কার জন্ম কোথায়, কার বাবার নাম কী, জন্মের সময়ই এটা পরিষ্কার থাকতো। তাহলে জটিলতা কম হতো। আমরা আশাবাদী, ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রেশন নিয়ে আমরা অগ্রসর হবো। সবার সহযোগিতা চাইব যাতে আমরা এটা সফলভাবে করতে পারি।
তাজুল ইসলাম বলেন, জাপানে পাঁচ বছর পরপর যে জনশুমারিটা হয়, করোনার মধ্যেও তারা সেটা করে ফেলেছে। কারণ তাদের এই রেজিস্ট্রেশন আছে। রেজিস্ট্রেশন থেকে শুধু তারা তথ্য নিয়ে সেটা প্রকাশ করেছে। অথচ আমরা কোনো কাজই করতে পারিনি। কারণ আমাদের ফিজিক্যাল ওয়ার্ক। করোনার সময় ফিজিক্যালি যাওয়ার সম্ভব হয়নি বা মাঠে নামা সম্ভব হয়নি। সেজন্য আমরা প্রিপারেটরি ওয়ার্কগুলোও করতে পারিনি। রেজিস্ট্রেশন হলে সবার জন্য উপকার হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন প্রধান তথ্য কর্মকর্মা সুরথ কুমার সরকার, বাংলাদেশ বেতারের উপমহাপরিচালক এএসএম জাহিদ প্রমুখ। কর্মশালাটিতে অংশ নেন পরিকল্পনা কমিশন, ইআরডি ও বিবিএস বিটে দায়িত্বপালনকারী বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) সদস্যরা এ কর্মশালায় অংশ নেন।