প্রথম আলো আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র ও মানুষের শত্রু

শেয়ার বিজ ডেস্ক: জাতীয় সংসদে দৈনিক প্রথম আলোর কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘প্রথম আলো আওয়ামী লীগের শত্রু, প্রথম আলো গণতন্ত্রের শত্রু, প্রথম আলো দেশের মানুষের শত্রু।’ জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ অধিবেশনে গতকাল সোমবার সমাপনী ভাষণ দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রথম আলোর প্রসঙ্গ আসে।

স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন ও ফটোকার্ড নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানা বক্তব্য ও কর্মসূচির মধ্যে প্রথমবারের মতো বিষয়টি নিয়ে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। তার অভিযোগ, কিছু বুদ্ধিজীবী, ও যারা ‘বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন’ তারা, ‘সামান্য কিছু পয়সার লোভে’ অগণতান্ত্রিক ধারা আনতে এদের (প্রথম আলো) তাঁবেদারি ও পদলেহন করে। সূত্র: বিডিনিউজ।

সংসদ নেতা বলেন, ‘(প্রথম আলো) দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে। এখন দেখা যায়, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাজাপ্রাপ্ত তাদের পক্ষ হয়ে তারা ওকালতি করে যাচ্ছে। গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে তারা এমন একটা সরকার আনতে চাচ্ছে যার কোনো গণতান্ত্রিক অস্তিত্বই থাকবে না।’

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে একজন শ্রমজীবী মানুষকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘পেটে ভাত না জুটলে স্বাধীনতা দিয়া কী করুম। বাজারে গেলে ঘাম ছুটে যায়। আমাগো মাছ, মাংস আর চাইলের স্বাধীনতা লাগব।’ ওই মন্তব্য ধরে শিরোনাম করা হলেও ছবি দেয়া হয় আরেক শিশুর, যার কথা প্রতিবেদনের ভেতরে ছিল। ওই ছবি ও শিরোনাম দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি কার্ড পোস্ট করা হয়, যা ব্যাপক আলোচনার জš§ দেয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা ওই প্রতিবেদনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ উপাদান থাকার কথা বলেন।

পরে প্রথম আলো প্রতিবেদনটি থেকে ছবি সরিয়ে শিরোনাম বদলে দেয়। পাশাপাশি তাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় দেয়া পোস্টও প্রত্যাহার করা হয়।

পরদিন একাত্তর টিভি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে দাবি করা হয়, দিনমজুর জাকির হোসেনের নামে যে বক্তব্যটি প্রকাশ করা হয়, সেটি আসলে একটি শিশুর মুখ দিয়ে বলানো হয়েছে। সে জন্য শিশুটিকে ১০ টাকা ‘ঘুষ’ও দেয়া হয়েছে। তবে যার নামে বক্তব্য ছাপা হয়েছে, সেই ‘জাকির হোসেনের’ তালাশ করেনি টেলিভিশনটি।

প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনের প্রতিবেদক শামসুজ্জামান শামসকে ২৯ মার্চ ভোরে তার সাভারের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডি। প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর তাকে আদালতে তোলা হয়। এর মধ্যে এক যুবলীগ নেতা এবং এক আইনজীবী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন শামসের বিরুদ্ধে। আইনজীবীর করা মামলায় প্রথম আলো সম্পাদককেও আসামি করা হয়।

ওই মামলায় জামিন আবেদন নাকচ করে শামসকে পাঠানো হয় কারাগারে। ২ এপ্রিল উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন পান প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। পরদিন জামিন হয় শামসের। মুক্তি পাওয়ার ছয় দিন পর অন্য মামলায়ও জামিন হয় তার।

তবে সেই সংবাদের রেশ এখনও রয়ে গেছে। প্রথম আলোর নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সরকার সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা নানা কর্মসূচি পালন করছেন। প্রথম আলোর পক্ষেও নানা বক্তব্য বিবৃতি আসছে।

প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনের সমালোচনা করে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাত্র একটা ছোট্ট শিশুর হাতে ১০টা টাকা দিয়ে, তাকে দিয়ে একটা মিথ্যা বলানো, শিশুর মুখ থেকে কিছু কথা বলানো কী কথা? ভাত-মাংসের স্বাধীনতা চাই। একটা ৭ বছরের শিশু, তার হাতে ১০ টাকা তুলে দেয়া এবং তার কথা রেকর্ড করে তা প্রচার করা, স্বনামধন্য একটা পত্রিকা, খুবই পপুলার, নাম তার প্রথম আলো। কিন্তু কাজ করে অন্ধকারে।’

সংসদ নেতার বক্তব্যের সমর্থনে সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে ‘ঠিক’, ‘ঠিক’ উচ্চারণ করেন। কেউ কেউ বলতে থাকেন, ‘শেইম, শেইম’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলিÑএরা এদেশে কখনও স্থিতিশীলতা থাকতে দিতে চায় না।’

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রথম আলোর অবস্থান নিয়েও সমালোচনা উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘২০০৭ সালে যখন ইমার্জেন্সি (জরুরি অবস্থা) হয়, তখন তারা উৎফুল্ল। দুটি পত্রিকা আদাজল খেয়ে নেমে গেল। তার সঙ্গে আসেন একজন সুদখোর (ড. মুহম্মদ ইউনূস)। বড়ই প্রিয় আমেরিকার।’

ড. ইউনূসের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, একটা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। সরকারের বেতন তুলতেন যে এমডি, তিনি মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কোথা থেকে পেলেন যে আমেরিকার মতো জায়গায় সামাজিক ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেন? দেশে-বিদেশে এ অর্থ কোথা থেকে আসে, এটা জিজ্ঞেস করেছে কখনও তারা? এদের কাছ থেকে দুর্নীতির কথা শুনতে হয়! দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ, এদের কাছ থেকে মানবতার কথা শুনতে হয়! গরিবের রক্ত চোষা টাকা পাচার করে বিদেশে বিনিয়োগ করে শতকোটি টাকার মালিক হয়ে আবার আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়ে যায় এবং এসব লোক এদেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকারও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা তাদের গণতন্ত্র চর্চা করে আটলান্টিকের পাড় পর্যন্ত। এটা পার হয়ে গেলে আপনাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা কি পাল্টে যায়? কেন আপনারা একটা মিলিটারি ডিকটেটরকে সমর্থন দিচ্ছেন? আমি এ প্রশ্নটা (প্রথম আমেরিকা সফরের কথা তুলে ধরে) করেছিলাম, আজকেও বলি।’

তিনি বলেন, ‘যে দেশটা আমাদের কথায় কথায় গণতন্ত্রের ছবক দেয়, আমাদের বিরোধী দল থেকে শুরু করে কিছু কিছু লোক তাদের কথায় খুব নাচন কোদন করছেন, ওঠবস করছেন, উৎফুল্ল হচ্ছেন। হ্যাঁ, তারা যে কোনো দেশে ক্ষমতা উল্টাতে পারে, পাল্টাতে পারে। বিশেষ করে মুসলিম দেশগুলোতে আরও বেশি কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গণতন্ত্রের আমাদের যে এত জ্ঞান দিচ্ছে, কথায় কথায় ডেমোক্রেসি, হিউম্যান রাইটসের কথা বলে, তাদের দেশের অবস্থাটা কী?’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০