শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, খুলনা: বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক (আকাশ, পানি ও পানির নিচে) সক্ষমতায় অত্যাধুনিক টহলজাহাজ ‘প্যাট্রল ক্রাফট’ ও ‘লার্জ প্যাট্রল ক্রাফট’, পানির নিচে সাবমেরিন অপারেশনের জন্য ‘টাগবোর্ড’ নির্মাণসহ দেশে প্রথম টহলজাহাজ তৈরি করল শিপইয়ার্ড। প্রতিপক্ষের বিমান এবং জাহাজবিধ্বংসী ৩৭ ও ২৫ মিলিমিটারের চারটি কামান-সংবলিত এই প্যাট্রল ক্রাফটের গতিবেগ ঘণ্টায় ২৩ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ৩৭ মাইল)। প্রতিটি জাহাজ নির্মাণে গড়ে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়, কিন্তু বিদেশ থেকে এ মানের জাহাজ আমদানি করতে গেলে ব্যয় হতো প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
সমুদ্র সীমানায় নিরাপত্তা, সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর আন্তর্জাতিক মানের চারটি টহলজাহাজ নির্মাণও শেষ হয়েছে। ৯৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নিষাণ, দুর্গম, হালদা ও পশুর নামে জাহাজগুলো পরীক্ষামূলকভাবে ভৈরব ও রূপসা নদে চলাচল করেছে। আগামী বুধবার ‘নিশান’ ও ‘দুর্গম’ নামের টহলজাহাজ দুটি উদ্বোধন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
টহলজাহাজ নির্মাণে এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ, পাশাপাশি দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খুলনা শিপইয়াডের্র কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পানির নিচে থাকা সাবমেরিন শনাক্ত ও ধ্বংসের জন্য স্বয়ংক্রিয় সুবিধা আছে জাহাজ দুুটিতে।
খুলনা শিপইয়ার্ডের এমডি কমোডর আনিছুর রহমান মোল্লা বলেন, আমাদের সমুদ্রসীমায় যদি কোনো শত্রæপক্ষের সাবমেরিন আসে সেগুলো ডিক্টেট ও ট্র্যাক করে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ করতে পারবে এ দুই টহলজাহাজ। খুলনা শিপইয়ার্ড এলপিসি ও ডিজিএম প্রকল্প পরিচালক এম রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, দেশে টহলজাহাজ নির্মাণ করায় সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা বেঁচে গেছে। বাইরের দেশে বাংলাদেশের সম্মান বেড়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (উৎপাদন) ক্যাপ্টেন এম নুরুল ইসলাম শরীফ জানান, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বঙ্গোপসাগরের বিশাল সমুদ্র এলাকা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখ্যযোগ্য অবদান রাখছে। সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা, সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে নৌবাহিনীর দায়িত্ব পালনের জন্য যুদ্ধজাহাজের বিকল্প নেই। সে কারণে ৬৪ দশমিক দুই মিটার দৈর্ঘ্য ও ৯ মিটার প্রস্থ করে বিএন নিশান ও দুর্গম নামে দুটি টহলজাহাজ নির্মাণ করা হয়েছে। জাহাজ দুটি নির্মাণে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ মানের জাহাজ বিদেশে তৈরি করতে এক হাজার কোটি টাকা খরচ হতো। জাহাজ দ্ুিট নির্মাণে ২৪ মাস সময় লেগেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ গত বছর ৩১ ডিসেম্বর বিএম দুর্গমের লাঞ্চিং (পানিতে ভাসানো) প্রোগ্রামের সূচনা করেন। টহলজাহাজ দুটি নির্মাণে চীন কারিগরি সহায়তা দেয়। জাহাজ দুটির প্রত্যেকটির ঘণ্টায় গতিবেগ ২৫ নটিকেল মাইল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, একই সঙ্গে ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন দুটি টাগবোট নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই জাহাজগুলো সাবমেরিন চলাচলে সহায়তা করবে। হালদা ও পশুর নামের প্রতিটি জাহাজের দৈর্ঘ্য ৩২ মিটার। মালয়েশিয়া এতে কারিগরি সহায়তা দেয়। টহলজাহাজ দ্ুিটতে আধুনিক সামরিক সক্ষমতা এবং সাবমেরিনের বিরুদ্ধে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারের সুবিধাও রয়েছে।
প্রকৌশলী বিভাগের সূত্র জানায়, এর আগে খুলনা শিপইয়ার্ড পদ্মা, সুরমা, অতন্দ্র, অদম্য ও অপরাজেয় নামে পাঁচটি টহলজাহাজ নির্মাণ করে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে শিপইয়ার্ড ৬৪ কোটি ৬২ লাখ এবং গত অর্থবছরে ৭৯ কোটি টাকা লাভ করে। শিপইয়ার্ড এ পর্যন্ত ৭২৫টি জাহাজ নির্মাণ ও দুই হাজার ২২৪টি জাহাজের মেরামত কাজ সম্পন্ন করেছে।