ক্রীড়া ডেস্ক: স্বপ্নের ফাইনাল থেকে মাত্র এক পা দূরে এখন ফ্রান্স। গতকাল কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াই অনেকটা একেপেশে করে দিয়ে ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়নরা ২-০ গোলে হারাল উরুগুয়েকে। এই জয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে সবার আগে সেমিফাইনালের টিকিট পেয়ে গেল ফরাসিরা। আর আক্ষেপ নিয়ে বিদায় নিল লুইস সুয়ারেজের দল। শেষ আটের লড়াইয়ে এসে যে ইউরোপিয়ান দলটির গতির কাছে হেরে গেল তারা! ম্যাচে জয়ের নায়ক আঁতোয়ান গিজমান। একটি গোল করেছেন তিনি। সতীর্থ রাফায়েল ভারানেকে দিয়ে করিয়েছেন আরেকটি গোল!
নিজনি নভোগ্রাদে গতকাল প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে শুরু থেকে একটু রক্ষণাত্মক ছিল ফ্রান্স। সেই সুযোগে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে উরুগুয়ে। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে ঠিক ততটাই নিজেদের খোলস ছেড়ে বের হয়ে আসে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ীরা। একপর্যায়ে বিরতির আগে ভারানের গোলে লিড নেয় ফরাসিরা। দ্বিতীয়ার্ধে ফ্রান্সের জয় নিশ্চিত করার গোলটি করেন তারকা ফরোয়ার্ড গ্রিজমান। উরুগুয়ে অবশ্য চেষ্টার কোনো কমতি করেনি। কিন্তু ফরোয়ার্ডের ব্যর্থতা আর প্রতিপক্ষের গোলরক্ষকের অসাধারণ দক্ষতার কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতেই হয়েছে লুইস সুয়ারেজদের।
যদিও ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুয়োগ পেয়েছিল উরুগুয়ে। রদ্রিগো বেন্তানকুর বাঁ প্রান্ত দিয়ে বাড়ানো বল দিয়েগো লাক্সালত আয়ত্তে নিয়েছিলেন। প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নিয়েছিলেন দারুণ শট, কিন্তু গোল পোস্টের ডান পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় বল। এরপর আক্রমণে ওঠে ফ্রান্স। সেই সুবাদে ১১তম মিনিটে দলটি পেয়ে যায় ফ্রিকিক। কিন্তু সুযোগটি কাজে লাগেতে পারেননি আঁতোয়ান গ্রিজমান। তার নেওয়া শট চলে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। এর কিছুক্ষণ পরই গোল হজমের শঙ্কায় পড়েছিল ফরাসিরা। সতীর্থের বাড়ানো বল ধরে দুর্দান্ত শট নিয়েছিলেন ডিয়েগো গডিন। কিন্তু দারুণ প্রচেষ্টায় তাকে রুখে দেন ফ্রান্সের গোলরক্ষক হুগো লরিস। পাঞ্চ করে বল পাঠিয়ে দেন মাঠের বাইরে। পরে ফ্রিকিক থেকেও জালের দেখা পায়নি উরুগুয়ে।
১৬তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ মিস করেন এমবাপে। অলিভিয়ে জিরুদের ক্রস থেকে উরুগুয়ের বক্সে উঁচু বল পেয়ে যান ফাঁকায় দাঁড়ানো কিলিয়ান এমবাপে। নেন হেড, কিন্তু বল লক্ষ্যে রাখতে পারেননি ফ্রান্সের তারকা এ ফরোয়ার্ড। তাতে হতাশ হন আগের ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে দুই গোল করা পিএসজির এ ফরোয়ার্ড। এর ছয় মিনিট পর ফরাসি তারকা বেনজামিন পাভার্ডের ক্রস রুখে দেন উরুগুয়ে গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরা।
সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে গতকাল শুরু থেকে কিছুটা ডিফেন্সিভ কৌশল নিয়েছিল ফ্রান্স। অবশ্য এর মধ্যে নিজের আয়ত্তে বল পেলেই ১৯৯৮ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা যাচ্ছিল কাউন্টার অ্যাটাকে। কিন্তু কিছুতেই জালের দেখা পাচ্ছিল না দলটি। শেষ পর্যন্ত ৪০তম মিনিটে রাফায়েল ভারানে দুর্দান্ত হেডে গোল করে এগিয়ে দেন ফ্রান্সকে। ফ্রিকিক থেকে গ্রিজমানের শট মাথা ছুঁইয়ে বাঁ পোস্টের একবারে কোনা দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন তিনি। তাতে আনন্দে মেতে ওঠে ফ্রান্স। অবশ্য বিরতির আগে সমতায় ফেরানোর দারুণ সুযোগ এসেছিল উরুগুয়ের সামনে। কিন্তু ফ্রান্সকে এ যাত্রায় বাঁচিয়ে দেয় গোলরক্ষক লরিচের দুর্দান্ত সেভ। সেটপিস থেকে লাফিয়ে ডিফেন্ডার মার্তিন কাসেরেসের হেড ডানে পুরো ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। খুব কাছ থেকে দিয়েগো গডিনের ফিরতি শট অনেকে ওপর দিয়ে যায়। তাতে অনেকটা হতাশা নিয়েই বিরতিতে যায় উরুগুয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আরও আক্রমণের গতি বেড়ে যায় ফ্রান্সের। সেই সূত্র ধরে ৫০তম মিনিটে এমবাপের ফ্রিকিক থেকে ডি-বক্সে পাওয়া বলে হেড নেওয়ার দারুণ চেষ্টা করেছিলেন পল পগবা। কিন্তু উঁচু হয়ে তিনি বল ছোঁয়ার আগেই উরুগুয়ে গোলরক্ষক মুসলেরা পাঞ্চ করে বিপদমুক্ত করেন। তবে একটুর জন্যও দলটির গোলের ক্ষুধা মেটেনি। সেই আকাক্সক্ষা পূরণ হতেও ১৯৯৮ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সময় লাগেনি। ৬১তম মিনিটে গ্রিজমান পেয়ে যান প্রতিপক্ষের জাল। কোরোঁতাঁ তোলিসোর ক্রস ২৫ গজ দূর থেকে ধরে জোরালো শটে গোল করেন ফ্রান্সের তারকা এ ফরোয়ার্ড। ভুলটা অবশ্য ছিল উরুগুইয়েন গোলরক্ষক মুসলেরার। তিনি গ্রিজমানের শট আয়ত্তে না নিয়ে ফেরাতে চেয়েছিলেন। বল আঙুল গলে গোললাইন পেরিয়ে যায়। ২-০ গোলে পেছনে পড়ে অনেকটাই খেঁই হারিয়ে বসে উরুগুয়ে, যে কারণে ম্যাচের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দু’বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা পায়নি জালের দেখা। এর ফলে রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালের টিকিট পাওয়ার আনন্দে মেতে ওঠে ফ্রান্স।
প্রথম দল হিসেবে সেমিফাইনালে ফ্রান্স
