Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 3:46 am

প্রথম দিনেই ব্যাক ফুটে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক : ইন্দোরের উইকেটে ব্যাট করা সহজ। গত কিছুদিন এমন কথায় ক্রিকেট বিশেজ্ঞরা বলে আসছিলেন। তাদের কথা কিন্তু সত্য প্রমাণও করেছেন ভারতের মায়াঙ্ক আগারওয়াল আর চেতেশ্বর পূজারা। কিন্তু যখন বাংলাদেশের কথা আসবে, তখনই আর সেটা বলা যাবে না। কেননা গতকাল টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই টাইগাররা খাবি খেয়েছেন ভারতীয় পেস-স্পিনে। এজন্য কিন্তু দায়ী ইমরুল কায়েস-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। তারা অহেতুক শট খেলতে গিয়ে নিজেদের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে দলের চাপ বাড়িয়েছেন। পরে সেখান থেকে নিজেদের আর বের করতে পারেননি মুমিনুল-মুশফিকরা। তাই দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম দিনেই ব্যাকফুটে টিম টাইগার্স।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বেশ ধারাবাহিক হলেও টেস্ট ম্যাচ সামনে এলেই দুমডেমুচড়ে যায় বাংলাদেশের ব্যাটিং। গত কয়েকটি সিরিজে কিন্তু এ চিত্রই ফুটে উঠেছে। গতকালও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যে কারণে টাইগাররা মাত্র ১৫০ রানেই গুটিয়ে যায়। মুশফিকুর রহিম করেন সর্বোচ্চ ৪৩ রান। আর নতুন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের ব্যাট থেকে আসে ৩৭ রান। এছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান বলার মতো তেমন কিছুই করতে পারেননি। গতকাল দিন শেষে টাইগারদের সান্ত¡না যদি কিছু হয়, সেটা রোহিত শর্মার উইকেট; যা এনে দিয়েছেন আবু জায়েদ রাহি। তারপরও স্বাগতিকরা করেছে এক উইকেটে ৮৬। উইকেটে রয়েছেন চেতেশ্বর পূজারা ৪৩* ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল ৩৭* রানে। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের চেয়ে টিম বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে ৬৪ রানে।

টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা যে কোনো দলের জন্যই কঠিন। এ বাস্তবতা ভেবে গতকাল টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মুমিনুল হক। ব্যাপারটি অনেকের কাছেই লেগেছে বিস্ময়। কেননা গতকাল ইন্দোরের উইকেটে ছিল হালকা ঘাস। আর্দ্রতাও ছিল। তাই এমন কন্ডিশনে আগে বল হাতে নেওয়ায় শ্রেয় মনে করছিলেন সবাই।

বাংলাদেশের দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও সাদমান ইসলাম শুরুটা করেছিলেন নড়বড়ে। কোনো বলেই ঠিক স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন না তারা। এর মাশুলও দুই ব্যাটসম্যান দেন দ্রুত। উমেশ যাদবের বলে তৃতীয় সিøপে ক্যাচ দেন ইমরুল। এর পরপরই সাদমান উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইশান্ত শর্মার বলে। শুরুর এ ধাক্কা কাটিয়ে ওঠায় চেষ্টায় ছিলেন মোহাম্মদ মিথুন ও মুশফিকুর রহিম। একটু একটু করে উইকেটে জমে যাওয়ার চেষ্টাও ছিল। রানও আসছিল এক-দুই করে। কিন্তু ১৯ রানের জুটি গড়ে বিচ্ছিন্ন হন তারা। মোহাম্মদ শামির বলে এলবিডাব্লিউ হয় মিথুন। এ কঠিন পরিস্থিতিতে মুশফিকুর রহিম-মুমিনুল হক বিপর্যয় সামলে কোনোভাবে এগিয়ে চলেন। কিন্তু সে চলাটাও হলো অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে। মুশফিক দুবার রাহানে আর কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে বাঁচলেও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৪৩ রান করে ফেরেন তিনি। এদিকে সিøপে রাহানের হাতে মুমিনুল বেঁচে ৩৭ রান করেন। দুজনের চতুর্থ উইকেট জুটিতে তোলা ৬৮ রান বাংলাদেশের হতশ্রী ইনিংসের সামান্য উজ্জ্বল দিক।

এদিকে দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে মাহমুদউল্লাহ শুরু থেকেই চেয়েছিলেন বড় শট খেলে প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হতে। এজন্য রাহানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ‘জীবন’ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এগোতে পারেননি খুব বেশি দূর। রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে দৃষ্টিকটুভাবে সুইপ করতে গিয়ে আউট হন ১০ রানে। এরপর বলার মতো লিটন দাস চারটি চার হাঁকিয়ে বিদায় নেন। বাংলাদেশও তাই গুটিয়ে যায় ১৫০ রানে। ২৭ রানে মোহাম্মদ সামি নিয়েছেন তিনটি উইকেট।

ভারতের যে ব্যাটিং লাইনআপ তাতে ১৫০ রান কোনো ব্যাপারই নয়। কিন্তু গতকাল শুরুতেই দারুণ এক ডেলিভারিতে আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানিয়ে ফেরান রোহিত শর্মাকে। পরে এ পেসারই ফেরাতে পারতেন ফর্মের তুঙ্গে থাকা আগারওয়ালকে। কিন্তু সিøপে সহজ ক্যাচটি নিতে পারেননি ইমরুল কায়েস। এ সুযোগে ভারত ওপেনার পূজারাকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে চলেছেন। দিন শেষে তাই তারা বাংলাদেশের জন্য হয়ে দাঁড়িয়েছেন অস্বস্তির কারণ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৮.৩ ওভারে ১৫০ (সাদমান ৬, ইমরুল ৬, মুমিনুল ৩৭, মিথুন ১৩, মুশফিক ৪৩, মাহমুদউল্লাহ ১০, লিটন ২১, মিরাজ ০, তাইজুল ১, আবু জায়েদ, ইবাদত; ইশান্ত ১২-৬-২০-২, উমেশ ১৪.৩-৩-৪৭-২, সামি ১৩-৫-২৭-৩, অশ্বিন ১৬-১-৪৩-২, জাদেজা ৩-০-১০-০)।

ভারত ১ম ইনিংস: ২৬ ওভারে ৮৬/১ (মায়াঙ্ক ৩৭*, রোহিত ৬, পূজারা ৪৩*; ইবাদত ১১-২-৩২-০, আবু জায়েদ ৮-০-২১-১, তাইজুল ৭-০-৩৩-০)।