প্রথম স্প্যাম ইমেইল

শুরুর দিকে পণ্যের প্রচারণার জন্য স্প্যাম ইমেইল পাঠানো হতো। তখন এর অপপ্রয়োগের সুযোগ নেয় অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। কালক্রমে এর সঙ্গে যুক্ত হয় হ্যাকাররা।
অল্প সময়ের মধ্যে যন্ত্রণার এক উদাহরণে পরিণত হয় স্প্যাম ইমেইল ব্যবহারকারীদের কাছে। আবর্জনা হিসেবে পরিচিত এ ধরনের মেইল। অস্বাভাবিক অফার নিয়ে আসে স্প্যাম ইমেইল। এক্ষেত্রে সাধারণত বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানের নামে মেইল পাঠানো হয় প্রাপকের কাছে। বিশাল অঙ্কের টাকা, সম্পত্তি সম্প্রদান, লটারি জেতা, কিংবা সুন্দরীর ব্যক্তিগত ছবি দেখানো প্রভৃতি দেওয়া হয় এতে। পুরোটাই ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। এসব প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতানো ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরির চেষ্টা করা হয়।
ইমেইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে স্প্যামের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে। পাল্টেছে এর ধরনও। এক দশক আগেও স্প্যাম ইমেইলের বেশ দাপট ছিল। অনেকে এসব ছল-চাতুরীর শিকার হয়েছিলেন।
প্রথম স্প্যাম ইমেইলটি পাঠানো হয় আরপানেট ব্যবহার করে। ১৯৭৮ সালের ৩ মে (উইকিপিডিয়া অনুযায়ী ১ মে) ৩৯৩ ব্যবহারকারীর কাছে স্প্যাম মেইল পাঠায় গ্যারি টুয়ের্ক নামে একজন বিক্রয় প্রতিনিধি। তিনি ডিজিটাল ইকুইপমেন্ট করপোরেশন (ডিইসি) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে এই ইমেইলটি পাঠান। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। তিনি এর মধ্য দিয়ে ডিইসি’র কম্পিউটার, বিশেষ করে কোথায় তাদের কম্পিউটার পাওয়া যাবে, সেই বার্তা দিয়েছিলেন ইমেইলটিতে। যাই হোক, ইমেইলটির সব বার্তা বড় হাতের ইংরেজি অক্ষরে লেখা হয়েছিল বলে প্রথমে প্রাপকদের কাছে অদ্ভুত ঠেকে। তারা ভীষণ বিরক্ত হয়েছিলেন বার্তাটি পেয়ে। প্রসঙ্গত, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর গবেষণা সংস্থা অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (আরপা) পরীক্ষামূলকভাবে দেশটির কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারের মধ্যে কম্পিউটারভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে গড়ে তোলে নেটওয়ার্ক, যা আরপানেট নামে পরিচিত ছিল। ১৯৯০ সালে বন্ধ করা হয় নেটওয়ার্কটি।
প্রথম স্প্যাম পাঠানোর পর দাবানলের মতো তা ছড়িয়ে পড়ে। অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। সহস্রাব্দের শুরুতে টেকবিশ্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায় স্প্যাম ইমেইল। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপকে সমর্থন জানানÑতিনি
সিএএন-স্প্যাম অ্যাক্ট অব ২০০৩-তে স্বাক্ষর করেন। ২০০৪ সালে মাইক্রোসফটের প্রধান প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস স্প্যাম ইমেইল সমস্যা সমাধানে নানা কর্মসূচি চালু করেন। ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিকোলাস টমব্রোস নামে প্রথম কোনো ‘স্প্যামার’কে অভিযুক্ত করা হয়। তাকে তিন বছরের নজরদারিত্ব, ছয় মাসের গৃহবন্দি ও ১০ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়। এ তালিকা এখন বেশ লম্বা।
স্প্যাম ইমেইল বোঝার জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই। অস্বাভাবিক অফার পেলে সাড়া না দেওয়াই ভালো। স্পর্শকাতর ইমেইল, যেমন কোনো নারীর ব্যক্তিগত ছবি দেখার সুযোগ কখনও নেওয়া উচিত নয়। বৃহৎ সংস্থার ভুল বানানের ইমেইল পেলেও বুঝবেন, এটা স্প্যাম।

রতন কুমার দাস

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০