নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ মোকাবিলায় ১১ দফা দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু এ চিঠি জমা দেন।
চিঠিতে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ঢাকায় গণস্বাস্থ্য ভ্রাম্যমাণ করোনা চিকিৎসাদলের প্রতি দুই সপ্তাহে এক হাজার কভিড-১৯ রোগীর সাশ্রয়ী উন্নত চিকিৎসার উদ্যোগের কথা অবহিত করে করোনায় সরকারের ১১টি জরুরি কর্তব্য উল্লেখ করেন।
এর মধ্যে রয়েছেÑঅক্সিজেন, ওষুধ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী থেকে বিশেষ এসআরওর (স্টেটোরি রেগুলেটরি অর্ডার) মাধ্যমে সব ধরনের শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, মূসক প্রভৃতি প্রত্যাহার করা। আইসিইউ পরিচালনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক ও নার্স প্যারামেডিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ২০০ চিকিৎসক ও ৫০০ নার্স টেকনিশিয়ানকে আইসিইউতে দ্রুত হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা, নন-ইনভেসিব শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া, শ্বাসতন্ত্রে টিউব মারফত অক্সিজেন সরবরাহ, অন্য নিয়ন্ত্রিত শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া এবং শ্বাসনালি ট্যাকিয়া ছিদ্র করে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এক মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। সব ওষুধের দাম ও রোগ পরীক্ষার পদ্ধতির চার্জ সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দেয়া।
আরও রয়েছে কারাগারে আবদ্ধ সব ব্যক্তিকে দ্রুত টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা এবং খুনের দায়ে ও দুর্নীতির কারণে দণ্ডিত অভিযুক্ত ছাড়া অন্য সবাইকে জামিনে মুক্তি দেয়া। সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজে প্রতিবছর ২০ হাজার ছাত্র ভর্তি করা ও এমবিবিএস পাসের পর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এক বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করা। অতীতে এ নিয়ম চালু করে দুই সপ্তাহ পর প্রত্যাহার করে ভুল করা হয়েছিল।
আগামী বাজেটে সব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নিরাপত্তা বেষ্টনী সংস্কার, গভীর নলকূপ ও বিদ্যুতায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন, মেডিকেল, নার্সিং, ফিজিওথেরাপি ও টেকনিশিয়ানদের জন্য ডরমেটরি, ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ডাইনিংরুম এবং পাঁচ চিকিৎসক ও ১০ নার্স, ফিজিওথেরাপি ও টেকনিশিয়ান প্রধানদের জন্য ছয়-সাতশ বর্গফুটের বাসস্থানের কথা বলা হয়েছে চিঠিতে। একই সঙ্গে বহির্বিভাগসহ ৩০ শয্যার হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি ও অপারেশন থিয়েটার নির্মাণের জন্য ছয় কোটি টাকা এবং অপারেশন থিয়েটার, এক্সরে, আল্ট্রাসনোলজি, চক্ষু ও বিভিন্ন ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতির জন্য অন্যূন চার কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। এরূপ উন্নয়নে ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ মানুষের জন্য আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। লকডাউন কার্যকর করার জন্য দরিদ্র ও নি¤œবিত্ত পরিবারদের সরাসরি আর্থিক প্রণোদনার পরিবর্তে বিনা খরচে মাসিক রেশনে চাল, ডাল, আটা, আলু, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন প্রভৃতি দিতে হবে। রেশন বিতরণের জন্য সামরিক বাহিনী, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এনজিওকর্মীদের ব্যবহার সুফল দেবে।
চিঠিতে তিনি আরও বলেন, ট্রিপসের বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের মাধ্যমে টিকা উৎপাদন সুবিধা সৃষ্টির জন্য নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আপনার বিশেষ দূত করে ইউরোপে পাঠান। টিকা উৎপাদনের জন্য শূন্য দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করুন, সুফল পাবেন। গত বছর দ্রুত সিনোভাকের ট্রায়াল অনুমোদন না দিয়ে যে ভুল করা হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি এন্টিজেন অনুমোদন এক বছরে হয়নি। ড. বিজন কুমার শীলের ভিসা না হওয়ায় বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না। ছয় মাস আগে চার বিজ্ঞানীর তত্ত্বাবধানে রিয়েল টাইম পিসিআর ল্যাবরেটরি স্থাপিত হলেও ব্যবহার শুরু করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এখন পর্যন্ত অনুমতি দেয়নি। ক্ষতি হচ্ছে দেশের, বিষয়টি আপনাকে আবার অবগত করলাম।