বিডিনিউজ
‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার দেয়া বাড়ি তৈরিতে কোনো ‘অনিয়ম’ সহ্য করা হবে না। নির্মাণকাজ যাচাইয়ে এরই মধ্যে পাঁচটি দল মাঠে নেমেছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একযোগে এসব দল বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে রওনা হয়। প্রথম দফায় সারাদেশের জেলা-উপজেলাকে পাঁচটি ভাগ করে পরিদর্শন কাজ শুরু হয়েছে।
পরিদর্শনে যাওয়া একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন নিজেই। শুক্রবার তার নেতৃত্বে দুটি দল মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি পরিদর্শন করে। পরে দল দুটি আলাদা হয়ে যায়।
মুন্সীগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িগুলো পরিদর্শনের সময় মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না, এটা প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প, স্বপ্নের প্রকল্প। একটা গরিব লোক, যিনি ঘর পাচ্ছেন, এটা তার একটা স্বপ্নের সূচনা হয়। কাজেই এটা নিয়ে আমরা কোনো অবহেলা করব না এবং কোনো অবহেলা সহ্যও করব না।’
পাঁচটি দল পর্যায়ক্রমে সব জেলায় যাবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে যেসব এলাকায় এ কথাগুলো (অনিয়মের অভিযোগ) উঠছে যে, এ কথাগুলো সঠিক কি না। সেটা যাচাইয়ের জন্য কমিটি করে তদন্ত করতে বলি।’
মুন্সীগঞ্জে কিছু বাড়ির মেঝে ফেটে যাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এটা নিয়ে আমরা কমিটি গঠন করেছি। প্রাথমিকভাবে আমি যে তথ্য পেয়েছি, ওখানে ইটের সোলিং দেয়ার কথা, সেটা তারা দেয়নি। ঢালাইটাও মানসম্মত নয়। কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী মেরামত শুরু করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ সদরে এ কাজের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তারা সবাই ওএসডি হয়েছেন।’
উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা সবাই মিলে কাজটা করছেন বলে উল্লেখ করে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এ করোনাকালীন এক লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি ঘর দেয়া, এটা কম কথা নয়। তাদের কাজকে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাই এবং কৃতজ্ঞতা জানাই। কিন্তু আমাদের মনটাই খারাপ হয় যখন আমরা দু-চারটা সমস্যার কথা শুনি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জš§ শতবর্ষে সারাদেশের ভূমিহীন ও গৃহহীন আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করে তাদের জমিসহ ঘর উপহার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বর্ষার শুরুতেই কয়েকটি স্থানে ভূমি ধসে ঘর ভেঙে পড়ায়, কয়েকটি ঘরে ফাটল দেখা দেয়ায় নির্মাণের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পাশাপাশি অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, অবহেলা ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগোচ্ছে সরকার। অভিযোগ তদন্ত করে এরই মধ্যে পাঁচ সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।
অনিয়ম যাচাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঁচটি দলকে বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগত মান, অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে কি না, তা যাচাই করে ছবিসহ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা এবং বগুড়া জেলার বগুড়া সদর, শেরপুর ও শাহজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত ও নির্মাণাধীন বাড়িগুলো পরিদর্শন করবে। উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমানের নেতৃত্বে অপর একটি দল হবিগঞ্জ সদর, মৌলভীবাজার সদর ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাড়িগুলো পরিদর্শন করবে। বাকি তিনটি দলের মধ্যে প্রকল্পের প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি দল ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলা এবং উপ-প্রকল্প প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলায় যাবে। এছাড়া সহকারী প্রকল্প পরিচালক বদরুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল পাবনা, মানিকগঞ্জ ও নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাড়িগুলো সরেজমিনে পরিদর্শন করবে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’ বাস্তবায়নে এ পর্যন্ত সর্বমোট এক লাখ ১৮ হাজার ৩৮০টি পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমিসহ দুই কক্ষবিশিষ্ট আধা পাকা বাড়ি দেয়া হয়েছে।