প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ছয় বছরেও তামাক কর নীতি প্রণীত হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক: জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে দক্ষিণ এশিয়া স্পিকার সামিটে ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি দেশে একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রণয়নের ঘোষণা দেন। কিন্তু ঘোষণার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তা প্রণয়নের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। একইসঙ্গে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি পূরণেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে অতিদ্রুত প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার পূরণ ও নির্দেশ বাস্তবায়নে একটি শক্তিশালী ও সমন্বিত তামাক কর নীতি প্রণয়ন করা জরুরি। গত মঙ্গলবার ‘কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী তামাক কর নীতি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো (বিইআর), বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট (বাটা) এবং বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির (বিএনটিটিপি) উদ্যোগে অনলাইন মিটিং সফটওয়ার জুমে ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনটিটিপির আহবায়ক ড. রুমানা হক।

অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম আবদুল্লাহ, একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা এবং ডাসের প্রকল্প উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুল। এছাড়া অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের অর্ধশতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি হলো তামাকজাত দ্রব্যের দাম ও কর বাড়িয়ে এর সহজলভ্যতাকে কমিয়ে আনা। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট করারোপ পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে হলে আসন্ন অর্থবছর থেকে সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ ও একটি শক্তিশালী জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই।

তারা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে সে লক্ষ্য পূরণের জন্য একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি গ্রহণের কথা বলেছেন। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণে অতি সত্বর জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়ন করতে হবে, যার মধ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপসহ কর আদায় পদ্ধতি ও পর্যবেক্ষণ, ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং, কর ফাঁকি বন্ধ, আমদানি-রপ্তানি, তামাক কর-সংক্রান্ত প্রশাসনিক বিষয়াদিসহ তামাক কর-সংশ্লিষ্ট সব বিষয়াদি যুক্ত থাকবে।

তারা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী কোনো ঘোষণা দিলে সেটা পালন করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু কর নীতি প্রণয়নের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও সেটারও কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা এটার দায় এড়াতে পারে না। বিষয়টি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। একইসঙ্গে বিইআর ও বিএনটিটিপি যৌথভাবে একটি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তামাক কর নীতির যে খসড়া প্রস্তুত করেছে, সেটা নিয়েও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর একটি শক্তিশালী তামাক কর নীতি প্রস্তুত করতে পারে। এসময় আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি, সুনির্দিষ্ট কর আরোপ, সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিশ্চিত করা, তামাকজাত দ্রব্য থেতে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব আয়ের একটি অংশ তামাক ব্যবহারজনিত রোগের চিকিৎসায় ব্যয় করা এবং একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় তামাক কর নীতি প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০