Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:12 am

প্রধানমন্ত্রীর ‘ধানাইপানাই’ সফরে অর্জন শূন্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বব্যাংক কার্যালয় ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের শীর্ষ প্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে বাংলাদেশের কোনো ‘অর্জন হয়নি’ বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ‘ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ধানাইপানাই’, তবে ‘এসবে’ কাজ হবে না। শেখ হাসিনা যখন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যস্ত সময় পার করছেন, সে সময় গতকাল বুধবার দুপুরে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে এই মূল্যায়ন করেন বিএনপি মহাসচিব।

বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সফরে তিনি দেখা করেন আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার সঙ্গেও। এই সফরে বিশ্বব্যাংকের পাঁচটি প্রকল্পে ২ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণচুক্তি হয়।

এর আগে জাপান সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশে ফেরার আগে যাবেন যুক্তরাজ্যে। সেখানে রাজা চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ফখরুল বলেছেন, ‘এই সফরে অর্জন শূন্য।’

সরকার ‘মিথ্যা প্রচার’ চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই, এই ধরনের মিথ্যা গোয়েবলসীয় প্রচার করে। তারা প্রচার করতে চায় যে, এই সফরটা তাদের অত্যন্ত সফল হয়েছে।’

এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে

বৈঠক করেন।

আইএমএফ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগতির ‘প্রশংসা করেনি’ দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘আইএমএফ বলেছে যে, তার (শেখ হাসিনা) নেতৃত্বে… এটা ডাহা মিথ্যা কথা।… আমরা ইতোমধ্যে কাগজপত্র দেখেছি। … তারা (আইএমএফ) ইতোমধ্যে একটা স্টেটমেন্ট পর্যন্ত দিয়েছে যে, আমরা (আইএমএফ) এ কথা বলিনি। শুধু তার সঙ্গে মিটিংয়ের কথা বলেছি। একইভাবেই বিশ্বব্যাংকের ঋণ পূর্বনির্ধারিত। আগেই কথা হয়েছে যে, তারা এই ঋণ দেবে। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে অ্যাচিভমেন্ট ইজ জিরো।’

মিথ্যা কথা বলে মানুষকে একদিন বোকা বানানো যায়, কিন্তু বেশিদিন সম্ভব

নয়Ñ এই প্রবাদও মনে করিয়ে দেন বিএনপি নেতা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এবার তারা ব্যর্থ হবে। কারণ, জনগণ তাদের মিথ্যাচার বুঝে গেছে, জনগণ তাদের সরিয়ে জনগণের একটা শাসন প্রতিষ্ঠা করবে।’

তিনি বলেন, ‘এগুলো বা পুরো বিষয়টা (প্রধানমন্ত্রীর সফর) হচ্ছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। এই সমস্ত সফর, ধানাইপানাই করা, এসব করে কোনো লাভ হবে না। জনগণের লক্ষ্য একটাই, তাদের (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতা থেকে সরতে হবে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে, আইনের শাসনকে ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণ যেন সত্যিকার অর্থেই একটা গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করতে অনাগ্রহের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন, তা নিয়েও কথা বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আমরা তো তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চাইনি। কারণ, আমাদের যে পূর্ব-অভিজ্ঞতা, সেই অভিজ্ঞতা তো তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার যুক্তি থাকতে পারে না এজন্য যে, তারা পুরোপুরিভাবে মিথ্যা কথা বলে এবং তারা বিট্রে করে, বিশ্বাসঘাতকতা করে জাতির সঙ্গে। সেই কারণে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জনগণ রাজপথে ফয়সালা করে নেবে।’

বিএনপি ‘অগ্নিসন্ত্রাস’ করেÑপ্রধানমন্ত্রীর এই অভিযোগের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাসের ধারক-বাহক আওয়ামী লীগই। তারাই অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে, তারাই এটা কনটিনিউ করে, নিজেরা করে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপায়। এখানে আওয়ামী লীগের জš§ সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে এবং সন্ত্রাস করেই তারা টিকে থাকে। তাদের বডি কেমেস্ট্রিতে দুই জিনিস আছে। একটা সন্ত্রাস, আরেকটা দুর্নীতি। এই দুইটা ছেড়ে তারা থাকতে পারে না।’

গতকাল বেলা ১১টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আসেন এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমেদ। তিনি মির্জা ফখরুল ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বিএনপির পরিকল্পিত ‘যুগপৎ আন্দোলনের’ কর্মকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।

অলি আহমেদ বলেন, ‘১৪-১৫ বছর ধরে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দেশ শাসন করছে না। একদলীয় শাসনের অধীনে আমরা বর্তমানে আছি। এই অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য বিএনপির নেতৃত্বে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করে যাচ্ছি। এই আন্দোলন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, এই আন্দোলন মন্ত্রী হওয়ার জন্য নয়, এই আন্দোলন দেশের ১৮ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য। এ দেশের জনগণের মুক্তি যত দিন না হয়, আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।’

আজ বৃহস্পতিবার এলডিপির লিয়াজোঁ কমিটির সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক রয়েছে।

এর আগে গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠক সেরেছে বিএনপি।