মাসুম বিল্লাহ: অর্থনীতিতে চাকা আরও গতিশীল করতে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে ৩০ শতাংশ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের। কিন্তু সে নির্দেশনা পরিপালন হচ্ছে না। এর প্রধান কারণ, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগের অভাব। এমন বিষয়ই উঠে এসেছে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায়।
জানা যায়, সরকারের ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টগুলো (এসডিজি) অর্জনে পিপিপির ভিত্তিতে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে ভৌত অবকাঠামো ও সেবা খাতে প্রতিবছর গড়ে জিডিপির ছয় শতাংশ (১৫ বিলিয়ন ডলার) ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। এর মধ্যে প্রতিবছর গড়ে জিডিপির এক দশমিক আট শতাংশ পিপিপির মাধ্যমে বিনিয়োগের সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সরকারের এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
পিপিপির মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনামূলক কার্যক্রম নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, কারিগরি সহায়তার জন্য পিপিপি কর্তৃপক্ষকে ১০০ কোটি টাকার একটি ঘূর্ণায়মান (রিকভারিং) তহবিল দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০১১ সালে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন দিয়ে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড নামে একটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এরপরও মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো পিপিপির আওতায় কোনো প্রকল্প নিচ্ছে না। তাই প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যাতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩০ শতাংশ প্রকল্প পিপিপির আওতায় গ্রহণ করে, সে জন্য নীতিমালা প্রণয়নের কথা ভাবছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা দলিল প্রণয়নে নেতৃত্ব দানকারী পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, সরকারের যেসব লক্ষ্য রয়েছে, সেগুলো অর্জন করতে হলে অবশ্যই পিপিপির আওতায় প্রকল্প বাড়াতে হবে। কারণ আমাদের অর্থনীতির সিংহভাগ ব্যক্তি খাতের দখলে। তাই উন্নয়ন প্রকল্পে এ খাতকে অন্তর্ভুক্ত করতে না পারলে উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন কঠিন হবে। পিপিপির মাধ্যমে প্রকল্প নেওয়া হলে অর্থ ব্যয়ের দক্ষতা ও জবাবদিহি বাড়বে।
জানা যায়, এডিপির ৩০ শতাংশ প্রকল্প যাতে পিপিপির আওতায় নেওয়া হয় তা নিশ্চিত করতে সম্প্রতি অর্থ বিভাগে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। সভায় আলোচনা শেষে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মধ্যে অন্যতম সিদ্ধান্ত হলোÑএডিপির ৩০ শতাংশ পিপিপির আওতায় গ্রহণের জন্য এডিপি ও আরএডিপি প্রণয়নের সময় নিশ্চিত করতে হবে। আগামী অর্থবছরে ৪৭টি প্রকল্প যাতে পিপিপির মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নে পিপিপি কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে একজন পিপিপি ফোকাল পয়েন্ট ও একজন বিকল্প ফোকাল পয়েন্টের ব্যবস্থা করা যেতে পারে এবং পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে এটি পিপিপি সেল গঠন করা যেতে পারে।