নিজস্ব প্রতিবেদক: এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর সম্মেলনে যোগ দেয়ার অভিজ্ঞতা জানাতে সংবাদ সম্মেলনে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যে ‘দাম্ভিকতা’ রয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরুল বলেন, ‘সোমবার আমাদের অনির্বাচিত, স্বঘোষিত, প্রবল প্রতাপশালী, অহংকারী ও দাম্ভিক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নো প্রেশার উইল ওয়ার্ক অন মিÑতার ওপর কোনো চাপই কাজ করবে না। এখানেই বোঝা যায়, তার (প্রধানমন্ত্রীর উক্তিতে) এদেশের প্রতি, এই মানুষের প্রতি তার যে কোনো দায়িত্ব নেই, তার যে সম্মান নেই, তার যে কোনো রকম জনগণের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই রাষ্ট্রকে একটা সত্যিকার অর্থে কার্যকর রাষ্ট্র করার চিন্তা তার নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কোনো চাপেই’ তার সরকারের কিছু আসে-যায় না বলে মন্তব্য করেন। এছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে বিএনপির সঙ্গে কোনো ধরনের সংলাপের সম্ভাবনাও তিনি উড়িয়ে দেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সংলাপ করে কী লাভ হয়েছে, সে প্রশ্নও তিনি তোলেন।
সংলাপ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যকে ‘সত্যের অপালাপ’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। ২০১৮ সালের ওই নির্বাচনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতাও তিনি তুলে ধরেন। ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে সংলাপের ফল কী? আমাদেরও প্রশ্নÑহোয়াট ওয়াজ দ্য রেজাল্ট। তিনি প্রধানমন্ত্রীÑযেভাবেই আসুক তিনি। আমাদের সবার সামনে মিটিংয়ে অঙ্গীকার করেছিলেন, নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। পুলিশ আর গ্রেপ্তার করবে না, পুলিশ কোনো মামলা দেবে না, কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না নির্বাচন পর্যন্ত…। তার বক্তব্যের তিন দিন পর থেকে সারাদেশে পুলিশি নির্যাতনে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা সব পালিয়ে গেছে। ঘরে থাকতে পারেনি, রাস্তায়ও থাকতে পারেনি। আমি বিএনপি মহাসচিব, আমি আমার এলাকায় প্রথম গিয়ে ঢুকেছি। আমি যে এলাকায় গেছি, সেখানে আমার গাড়ির ওপরে আক্রমণ হয়েছে, আমার কনভয়ের ওপরে আক্রমণ হয়েছে। পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে।’
ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের সাত-আট দিন আগে থেকে সেখানে নতুন নতুন প্লট তৈরি করা হয়েছে। তারা (ক্ষমতাসীনরা) যে নির্বাচনী অফিস তৈরি করেছিল, সেগুলো তারা নিজেরাই আগুন লাগিয়ে দিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, মোটরসাইকেল পুড়িয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এটা শুধু আমার এলাকায় নয়, সারাদেশে সব জায়গায় করা হয়েছে। এসবের পরও আজকে যদি শেখ হাসিনা বলেন যে, হোয়াট ওয়াজ দ্য রেজাল্ট। রেজাল্ট তো ইউ নো হোয়াট হ্যাড ইউ ডান।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারপরে কী করে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) আশা করেন, তিনি সরকারে থাকবেন আর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন করবে। একা বিএনপি তো নয়, আজকে সব রাজনৈতিক দল কেন বলছে যে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া যাবে না? এমনকি সিপিবি, তারা পর্যন্ত বলেছে যে, নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। এই বিষয়গুলো ?যখন তিনি বলেন, তখন তিনি চূড়ান্তভাবে সত্যের অপলাপ করেন। জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করেন এবং তিনি একটা প্রচণ্ড রকম দাম্ভিকতায় ভুগছেন যে, তিনি গণতন্ত্রের যে বেসিক কথাÑসেই বেসিক কথাগুলো থেকে তিনি বাইরে চলে যাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো আগে বলেছি যে, তার সঙ্গে সংলাপ করব না। তিনি তো কথাই রাখেন না। আমরা ডায়ালগের কথা সেজন্য বলিনি। একবারের জন্য আমরা ডায়ালগের কথা বলিনি। যারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিনা কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে জেলে আটকে রাখে, তাদের সঙ্গে আমরা কী সংলাপ করব? ওই মামলায় প্রত্যেককে সাত দিনের মধ্যে জামিন দেয়া হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়াকে এখন পর্যন্ত জামিন দেয়া হয়নি।’
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গত সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত জানাতে মঙ্গলবার এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি চলমান যে আন্দোলন করছে, সে বিষয়ে ‘কোনো ছাড় দেয়া হবে না’ বলেও সংবাদ সম্মেলনে হুশিয়ার করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সংলাপ দুদিক থেকে নাকচ হওয়ায় আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে কি নাÑএমন প্রশ্নে দলের অবস্থান তুলে ধরেন তিনি। ফখরুল বলেন, ‘আমরা তার আগে সংলাপ নাকচ করে দিয়েছি। আগামী নির্বাচন শুধু অনিশ্চিত নয়, আওয়ামী লীগ দায়ী হবে আগামী নির্বাচনে যদি আরও খারাপ কিছু ঘটে। আমরা আর ছাড় দেব না, এদেশের মানুষের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমার কথা বলছি না। চলেন না বের হই একসঙ্গেÑলেটস গো আউট, টক টু দ্য পিপলসÑফারমার্স, রিকশাপুলার্স। নিরপেক্ষভাবে চলেন, আপনি ইনভেস্টিগেশন করেনÑদেখবেন মানুষ কী বলে। পিপল ওয়ান্ট আ চেঞ্জ। দিস ইজ ট্রুথ।’
গণমাধ্যমকে উদ্দেশ করে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা অনেক কিছু করতে পারেন। এদেশে মিডিয়া যা করেছে, মিডিয়ার জন্য পরিবর্তনটা অনেক ত্বরান্বিত হয়েছে। চিন্তা করেন, এরশাদের পতনের কথা। পত্রিকা বন্ধ করে দিলেন আপনারা। তারপরে সেটা অনেক এগিয়ে গেল। আমরা সব মানুষ কি চাটুকার হয়ে যাব? সব মানুষ কি স্বার্থপর হয়ে যাবে? আমরা সব মানুষ কি নিজের স্বার্থটা ছাড়া আর কিছুই দেখব না? সেলফ সেন্সরশিপ করতেই থাকব? আমরা তো মরে যাব কয়েক দিন পরে। দিস ইজ ইওর কান্ট্রিÑএটা মনে রাখতে হবে।’
নির্বাচন কমিশন সংলাপে ডাকলে বিএনপি যাবে কি নাÑপ্রশ্ন করা হলে দলের মহাসচিব বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন কোন নির্বাচন কমিশন? যে নির্বাচন কমিশন কালকে (সোমবার) বলেছে যে, আমার (ইসি) কোনো দায় নেই যে, অন্য দলগুলো এলো কি এলো না। তাকে কি আমি নির্বাচন কমিশন বলব? তার কী দায়-দায়িত্ব আছে, বলব?’
জনগণের কথা চিন্তা করেও তো বিএনপি নির্বাচন কমিশনে যেতে পারেÑএমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা জনগণের কথা চিন্তা করেই তো এই দাবিগুলো করছি। আমরা তো বলছি না যে, বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাও। আমরা বলেছি, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করো, একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করো। আমরা তো এখনই বলছি না যে, আমাদের আপনারা এখনই ক্ষমতায় বসিয়ে দিন। আমরা বলছি, নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে, সমানভাবে, সমান অধিকার নিয়ে করতে পারিÑসেই জিনিসটা চাচ্ছি। উই ওয়ান্ট আ লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। আপনি একদিকে আমার সব লোককে ধরে ধরে জেলে নেবেন, আপনি মিটিংয়ের মধ্যে আক্রমণ করবেন, মারবেন। আপনি শান্তির সমাবেশ করবেন আর আমাকে মারতে মারতে ঢুকায় দেবেনÑএটা তো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না।’
ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের পরিবেশটা কোথায়, বলেন? ম্যাডামকে (খালেদা জিয়া) জেলে রাখবেন। তাকে ছাড়েন। মামলাগুলো সব প্রত্যাহার করেন। নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করেন। তখন আপনি বলবেন, এখন কেন যাচ্ছেন না। তার আগে একথা আপনি বলতে পারেন না।’
অন্যদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও সমবায়কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন।