নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরে দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক বিভিন্ন ইস্যুতেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার। যোগাযোগসহ বিভিন্ন বিষয়ে বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর সংস্থা (বিমসটেক), দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) ও বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত- নেপালসহ (বিবিআইএন) বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ব্যবস্থায় বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোয় ভারতের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ থাকায় এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। গতকাল সোমবার রাজধানীর এক সিম্পোজিয়ামে এসব কথা বলেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ল’ অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) আয়োজিত ‘বিমসটেক ও আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা’ শীর্ষক সিম্পোজিয়ামটি গতকাল বিলিয়া সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এতে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের পরিচালনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিলিয়ার উপ-পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন এবং পেশাদার কূটনীতিক ও বিমসটেকের পরিচালক এসএম নাজমুল হোসেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্ক ও বিমসটেক বিষয়ক অনুদফতরের ডিজি তারেক আহমেদও বক্তব্য রাখেন।
সভাপতির বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কয়েক বছর আগেও আন্তর্জাতিক মুক্তবাণিজ্যের ধারণার ভিত্তিতে একটা অগ্রগতি আশা করা হচ্ছিল। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় দেশগুলো ভিন্ন ব্যবস্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছে যা বিশ্বব্যাপী মুক্তবাণিজ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। ফলে দোহা রাউন্ডের মতো আলোচনার অবস্থাগুলো এখন আইসিইউতে আছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মতো অনেক ছোট দেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। এ অবস্থার মোকাবিলায় ছোট দেশগুলো আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বাংলাদেশও কৌশলগতভাবে সে রকম একটি মাহেন্দ্রক্ষণে আছে। এর সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।
বক্তারা বলেন, এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে ছোট দেশের হীনমন্যতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি আস্থা সৃষ্টির উদ্যোগ (সিবিএম) নিতে হবে। এজন্য বিমসটেক, সার্ক ও বিবিআইএন’র মতো আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ব্যবস্থাগুলো গতিশীল করতে ভারতের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে, যেহেতু ভারত এগুলোর সবগুলোতেই অংশীদার। এ সময় বক্তারা বিদ্যমান এই তিনটি আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ব্যবস্থার কোনোটিই অবহেলা করার মতো নয় বলে মত দেন।
আলোচনায় অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হলে বাংলাদেশের জন্য অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে ভারত, চীন উভয়ের কাছ থেকেই বাংলাদেশ সুবিধা পাবে। অপর আলোচক এসএম নাজমুল হাসান বলেন, যখন প্রতিবেশী দেশ উন্নত হয় তখন আমরাও উন্নত হবো। তিনি বিমসটেকের উদ্ভব ও বিকাশের কথা উল্লেখ করে বলেন, অবিলম্বে ৬৬টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে যা এ অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে বাণিজ্য ও যোগাযোগের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশ।
এ সময় এ কূটনীতিক আরও বলেন, বিমসটেকের মধ্যে অভ্যন্তরীন যোগাযোগ উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে অনেকগুলোই ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে। এগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বার্ষিক শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের পরিমাণ বর্তমান ৩৯ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ৬৯ কোটি হবে। সড়ক ও জলপথে বাণিজ্যের পরিমাণ বর্তমানে মাত্র ১০ কোটি ডলার, যা ৫০ কোটি ডলারে উন্নীত হবে আঞ্চলিক সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে।
Add Comment