নিজস্ব প্রতিবেদক: সুপ্রিমকোর্টের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে সরকার প্রধান বিচারপতির ওপর ‘চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে’। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বৈঠকের যে খবর পত্রিকায় এসেছে, তাতে তারা উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল রোববার নয়াপল্টনে ছাত্রদলের এক অনুষ্ঠানের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ফখরুল সরকারকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি তো এখন প্রধান বিচারপতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন, জোর করে তাকে দিয়ে রায় পরিবর্তন করানোর জন্য আপনারা প্রকাশ্যে বলছেন।’
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা বাতিল করে দেওয়া আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকে তা নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ চলছে। এই রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ কড়া সমালোচনা করলেও বিএনপি এটাকে ‘ঐতিহাসিক’ বলছে।
ফখরুল বলেন, ‘সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ কী করবেন আমরা জানি না। প্রধান বিচারপতি কী করবেন আমরা জানি না। বাংলাদেশের জনগণ কখনও আপনাদের (সরকার) এই অন্যায় মেনে নেবে না। বাংলাদেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল দুঃশাসনকে পরাজিত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।’
‘নির্দলীয় সহায়ক সরকারের মাধ্যমে নিরপেক্ষ নির্বাচন’ করার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলোকে ধ্বংস না করে, বিচার বিভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে সোজা রাস্তায় আসুন, সোজা পথে ফিরে আসুন, সিধা পথে চলুন।’ তা না হলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ‘পালানোর পথ পাবে না’ বলে মন্তব্য করেন এ বিএনপি নেতা।
শনিবার রাতে প্রধান বিচারপতির বাসায় ওবায়দুল কাদেরের বৈঠকের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে গেছি, আমরা শঙ্কিত হয়ে গেছি পত্রিকার খবর দেখে। ওবায়দুল কাদের সাহেব গতকাল (শনিবার) রাতে প্রধান বিচারপতির বাসায় গেছেন। কখন গেছেন? আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করে তারপরে তিনি প্রধান বিচারপতির বাসভবনে গেছেন। আমি আরও বিস্মিত হলাম, সেখানে তিনি নৈশভোজ করেছেন!’
প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা দুঃখিত হই, লজ্জিত হই, শঙ্কিত হই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করবার জন্য, আবার নতুন কী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে!’
ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের প্রয়োজনে, জনগণের প্রয়োজনে, সময়ের প্রয়োজনে আজ মুখ খুলতে হবে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, এই দুঃশাসনের বিরুদ্ধে, এই পাশবিক নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে। ভুলে গেলে চলবে না যে, তারা আমাদের ভাইদেরকে এক এক করে মেরেছে, ভুলে গেলে চলবে না যে, তারা আমাদের সহকর্মীদের গুলি করে দিয়েছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। গত ৮ আগস্ট লন্ডনের মুরফিল্ড আই হসপিটালে খালেদার ডান চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের পরিচালনায় ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব আহসানও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মহানগর বিএনপির মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, হাবিবুর রশীদ হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, যুবদলের এসএম জাহাঙ্গীর হোসেন, ওলামা দলের শাহ নেসারুল হক এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
Add Comment