Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 11:28 pm

প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ১১ অভিযোগ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগের খবর পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সম্প্রতি প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ সুনির্দিষ্ট ও গুরুতর অভিযোগগুলো আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের কাছে তুলে ধরেছেন। সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে দাফতরিক বিবৃতির মাধ্যমে গতকাল এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এস কে সিনহার সঙ্গে একই বেঞ্চ বসতে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি অপারগতা প্রকাশ করেছিলেন বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে। এর আগে গত শুক্রবার রাতে  এক মাসের ছুটিতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন এস কে সিনহা। অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে বিমানবন্দরে রওনা হয়ে ওই রাতে গণমাধ্যমকে একটি লিখিত বিবৃতিতে এস কে সিনহা বলেছিলেন, ‘আমি খানিকটা বিব্রত’। তার পরই গতকাল সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে ইতোমধ্যে সুপ্রিমকোর্টের তরফ হতে কোনো প্রকার বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয়নি। কিন্তু উদ্ভ‚ত পরিস্থিতিতে নির্দেশক্রমে বিবৃতি প্রদান করা হলো।’

বিবৃতির মূল বক্তব্যে বলা হয়, ‘ছুটি ভোগরত প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ১৩ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। ওই লিখিত বিবৃতিটি সুপ্রিমকোর্টের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ওই লিখিত বিবৃতি বিভ্রান্তিমূলক।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ব্যতীত অপর পাঁচ বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। বিচারপতি মো. ইমান আলী দেশের বাইরে থাকায় ওই আমন্ত্রণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। অপর চারজন অর্থাৎ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। দীর্ঘ আলোচনার একপর্যায়ে রাষ্ট্রপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগসংবলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। তার মধ্যে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরও সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।’

সুপ্রিমকোর্টের বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘বিচারপতি মো. ইমান আলী ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর ১ অক্টোবর আপিল বিভাগের উল্লিখিত পাঁচ বিচারপতি এক বৈঠকে বসেন। বৈঠকে বিশদভাবে পর্যালোচনার পর ১১টি অভিযোগ প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে অবহিত করার সিদ্ধান্তে উপনীত হত তারা। এস কে সিনহা ওই সকল অভিযোগের ব্যাপারে কোনো সন্তোষজনক জবাব বা সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হলে তার সঙ্গে বিচারালয়ে বসে বিচারকাজ করা বা পরিচালনা করা সম্ভব হবে না বলেও তারা একমত হন।

এ সিদ্ধান্তের পর ওইদিন (১ অক্টোবর) সাড়ে ১১টায় এস কে সিনহার অনুমতি নিয়ে পাঁচ বিচারপতি হেয়ার রোডে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে অভিযোগগুলো নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন। দীর্ঘ আলোচনার পরে তার কাছ থেকে কোনো ধরনের গ্রহণযোগ্য ব্যাখা বা সদুত্তর না পেয়ে আপিল বিভাগের উল্লিখিত পাঁচজন বিচারপতি তাকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, এমতাবস্থায় ওই অভিযোগগুলোর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে তাদের (পাঁচ বিচারপতি) পক্ষে বিচারকাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।

এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করবেন। এ ব্যাপারে পরের দিন ২ অক্টোবর তিনি চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন। ২ অক্টোবর তিনি উল্লিখিত বিচারপতিদের কোনো কিছু অবহিত না করে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন। একই সঙ্গে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি।