প্রধান সহকারী নিয়োগে এক আয়কর বিভাগে ‘দুই নিয়ম’

রহমত রহমান: আয়কর অফিসে ‘প্রধান সহকারী’ পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সার্কেলের যাবতীয় রিপোর্ট প্রধান সহকারী তৈরি করেন। ফলে পদটি শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। জনপ্রশাসনের ‘কমন নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯’ অনুযায়ী, প্রধান সহকারী পদটি পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। কাস্টমস বিভাগ এই নির্দেশনা পুরোপুরি মেনে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করছে। আয়কর বিভাগের কয়েকটি কর অঞ্চলও একই বিধিমালা অনুসরণ করছে। কিন্তু নতুন কর অঞ্চল কমন নিয়োগ বিধিমালা মানছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। কর কর্মচারীদের প্রশ্নÑকিছু কর অঞ্চল নির্দেশনা মানছে, কিছু মানছে না। এক আয়কর বিভাগে দুই নিয়ম চালু করায় হতাশ কর্মচারীরা।

তাদের দাবি, নতুন কর অঞ্চলে প্রধান সহকারী সরাসরি নিয়োগ করা হচ্ছে। ফলে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান সহকারী তো কখনও আয়কর অফিসে কাজ করেননি। কর আদায় তো দূরের কথা, তিনি কীভাবে রিপোর্ট তৈরি করবেন? এই পদে সরাসরি নিয়োগের ফলে অফিস সহকারী থেকে শুরু করে উচ্চমান সহকারী পর্যন্ত পদগুলোয় কর্মরতরা আগামী ২০ বছরে বা কখনও পদোন্নতি পেয়ে কর পরিদর্শক হতে পারবেন না। সেজন্য নতুন কর অঞ্চলে প্রধান সহকারীর পদ পূরণে পুরোনো কর অঞ্চল থেকে পদোন্নতি দিয়ে এই পদ পূরণের দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় তারা আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, সব আইন অনুসরণ করেই প্রধান সহকারী পদে সরাসরি নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

আয়কর বিভাগের সূত্রমতে, প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা রয়েছে। তবে কমন পদগুলোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ‘কমন নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯’ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। আয়কর বিভাগ নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৬-এ মোট ৪১টি পদ রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি পদ ‘কমন নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯’ অনুযায়ী নিয়োগ ও পদোন্নতির যোগ্য পদ। বাকি ৩২টি পদ আয়কর বিভাগের নিজস্ব নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৬ অনুযায়ী নিয়োগ ও পদোন্নতির যোগ্য। সব অধিদপ্তর, পরিদপ্তর বা দপ্তরের নিয়োগ বিধিমালায় কমন পদগুলো অর্থাৎ ‘কমন নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯’ অনুসরণ করে নিয়োগ ও পদোন্নতি কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। আয়কর বিভাগে নতুন কর অঞ্চলগুলোয় সাঁটলিপিকার কাম-কম্পিউটার অপারেটর, সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, অফিস সহায়ক পদে কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রধান সহকারী পদে কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে না। এই বিধিমালা অনুযায়ী ‘প্রধান সহকারী’ পদটি সরাসরি নয়, শতভাগ পদোন্নতি যোগ্য পদ।

এনবিআর সূত্রমতে, কাস্টমস রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিশনারেট, কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা (উত্তর) ‘প্রধান সহকারী’ পদটির জন্য কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করে জিও জারি করেছে। এছাড়া কর অঞ্চল-৩, চট্টগ্রাম ও কর অঞ্চল সিলেট ‘প্রধান সহকারী’ পদটি পূরণে কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

বিভিন্ন কর কর্মচারীরা বলছেন, কর অঞ্চল সিলেট ও কর অঞ্চল-৩, চট্টগ্রাম কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুসরণ করে প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী পদের জন্য নিয়োগ ও পদোন্নতি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। তাহলে নতুন কর অঞ্চলে এই দুটি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে শতভাগ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে কেন? একই ডিপার্টমেন্টে আলাদা নিয়ম কেন? কমন নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী নিয়োগের ছাড়পত্র থাকা সত্ত্বেও সরাসরি প্রধান সহকারী পদে নিয়োগ দিলে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সব পদে প্রায় ৯৯ শতাংশ পদোন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে তারা কখনও কর পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পাবেন না। কারণ সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান সহকারীরা সবাই পদোন্নতিপ্রাপ্তদের আগে সিনিয়র হয়ে যাবেন। এনবিআর চাইলে বিভিন্ন কর অঞ্চল থেকে পদোন্নতি দিয়ে নতুন কর অঞ্চলে এই পদ পূরণ করতে পারে।

কর কর্মচারীরা জানিয়েছেন, একসময় কর্মচারীদের মধ্যে বেশিরভাগের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম ছিল। কিন্তু এখন বেশিরভাগ কর্মচারী উচ্চশিক্ষিত। পদোন্নতির স্বপ্ন নিয়ে কর্মচারীরা যোগ দিয়েছেন, দিচ্ছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন বা আশা এখন ঝুঁকিতে।

কর্মচারীরা এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শতভাগ নিয়োগ না দিয়ে পুরোনো কর অঞ্চল থেকে অফিস সহকারী পদে যারা ১০-১২ বছর চাকরি করছেন, তাদের ‘উচ্চমান সহকারী’ পদে নতুন কর অঞ্চলে পদোন্নতি দিলে নতুন কর অঞ্চল ও কর্মচারী-উভয়ের জন্য ভালো হতো। সার্কেলের প্রধান সহকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ। সার্কেলের যাবতীয় রিপোর্ট সবকিছু প্রধান সহকারী করে থাকেন। একজন প্রধান সরকারী সে সরাসরি নিয়োগ পেয়ে কী রিপোর্ট দেবেন, তিনি তো রিপোর্ট সম্পর্কে কিছুই জানেন না। যদি পুরোনো লোক সমন্বয় করে দেয়া হতো, তাহলে কাজ ও রাজস্ব আদায় ভালো হতো। এনবিআর চাইলে নতুন ও পুরোনো কর্মচারী সমন্বয়ের জন্য আবার আন্তঃবদলি চালু করতে পারে। আন্তঃবদলি না থাকায় এবং পদোন্নতি না দেয়ায় কর্মচারীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানিয়েছেন কর্মচারীরা।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে এনবিআর সদস্য (কর প্রশাসন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) সৈয়দ মোহাম্মদ আবু দাউদ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি। তবে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, নতুন কর অঞ্চলে প্রধান সহকারী নিয়োগ করা হচ্ছে ‘কর বিভাগ নীতিমালা ২০১৬’ অনুযায়ী। তাতে বলা আছে, প্রধান সহকারী পদে পদোন্নতিযোগ্য কেউ না থাকলে সরাসরি নিয়োগ করা যাবে। নতুন কর অঞ্চল নবসৃষ্ট হওয়ায় সেখানে প্রধান সহকারী পদোন্নতিযোগ্য কেউ নেই। তাহলে সরাসরি নিয়োগ না করলে এ পদগুলো পূরণ কীভাবে হবে? তাই সেখানে কমন নিয়োগ বিধিমালা প্রয়োগের সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে পাবলিক সার্ভিস কমিশন, জনপ্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের সদস্য নিয়ে নিয়োগ কমিটি রয়েছে। তারা বুঝেশুনেই নিয়োগ দেবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০