নিজস্ব প্রতিবেদক: ইউরোপে তৈরি পোশাকের বাইরে আরও অনেক পণ্য রপ্তানি হলেও সেগুলোর ভোক্তা মূলত প্রবাসী বাংলাদেশিরাই। মূল ধারার বাজারে এখনও সেসব পণ্য খুব একটা পরিচিত হয়নি। এ অবস্থার উন্নয়নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রত্যেকটি দেশে প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের নিয়ে ইউরোপ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রবাসী ব্যবসায়ীদের দেশে প্রতিষ্ঠিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) বিনিয়োগের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
গতকাল এফবিসিসিআই আয়োজিত আলোচনা সভায় এ তথ্য জানান ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের সভাপতি কাজী এনায়েত উল্লাহ। এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় কাজী এনায়েত উল্লাহ জানান, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে এ উদ্যোগ কার্যকর করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইউরোপ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স প্রতিষ্ঠিত হলে ইউরোপের মূল অর্থনীতিতে বাংলাদেশি পণ্যের দৃশ্যমান উপস্থিতি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। এ চেম্বারের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের সঠিক চিত্র তুলে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও ইউরোপীয়ান বিনিয়োগ আকর্ষণে নানা কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে।
এ সময় তিনি জানান, আগে স্বাধীন হওয়া অনেক দেশকে আর্থ-সামাজিক সূচকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এসব তথ্য সঠিকভাবে বিদেশে উপস্থাপিত হচ্ছে না। যে কারণে ব্র্যান্ডিংয়ে পিছিয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফ্রান্স সফরের পর সে দেশের প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। এই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে ফ্রান্সে বাংলাদেশের ব্যাপক ব্র্যান্ডিং করতে চায় ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বার। করোনা মহামারির পর ইউরোপের শ্রম বাজারের ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরির আহ্বান জানান কাজী এনায়েত উল্লাহ।
এর আগে স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিদেশে অনেক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তারা দেশগুলোর মূল অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইজেড) নেয়ার প্রস্তাব করেন তিনি। এ দেশের অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও বিনিয়োগবান্ধব নীতিগুলো তুলে ধরে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের আয় দিন দিন বাড়ছে। বিপুল জনসংখ্যার কারণে এ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারও বিশাল। তাই এ দেশে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে প্রবাসীরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও ভূমিকা রাখতে পারেন।
এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে পিডব্লিউসি লন্ডনের বাজারের ওপর গবেষণা করছে জানিয়ে সভাপতি বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এ গবেষণার ফলাফল জানা যাবে। গবেষণার তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যকে জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেবে এফবিসিসিআই। ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশের বাজারেও একই ধরনের গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেয়া হবে।’ এ সময় ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারকে ফ্রান্সে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করার আহ্বান জানান মো. জসিম উদ্দিন।
সভার সমাপনী বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি এম এ মোমেন বলেন, বিদেশের বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছরের নভেম্বরে প্যারিসে ফ্রান্সের শীর্ষ বাণিজ্য সংস্থা এমইডিইএফ ইন্টারন্যাশনাল ও ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সাক্ষর করেছে এফবিসিসিআই। এসব কার্যক্রমের ফলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ আরও দৃঢ় হয়েছে, যা দেশে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সহায়তা করবে।
এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. আমিন হেলালী বলেন, বাংলাদেশে প্রায় সব শিল্পই রয়েছে। কিন্তু অনেকগুলোই অনানুষ্ঠানিকভাবে হওয়ায় সঠিক তথ্য উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে। ফ্রান্স বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে সম্ভাবনাময় খাত চিহ্নিত করার পরামর্শ দেন মো. আমিন হেলালী।
এছাড়া সভায় বক্তব্য দেন সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম নজরুল ইসলাম, ফ্রান্স-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিচালক রুবাবা নভেরা সায়ীদ, ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের সহ-সভাপতি ফখরুল আকন সেলিম ও এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি মো. হাবীব উল্লাহ ডন, পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী ও ড. ফেরদৌসী বেগম। সভা সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের মহাসচিব মোহম্মাদ মাহফুজুল হক।