দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধির পথে এগোচ্ছে। এই সমৃদ্ধির অর্থনীতি গড়তে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করছে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা লাখো প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্স, যা কোনোমতেই অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই প্রবাসীদের সম্মানিত অবস্থানে উপস্থাপন করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও সেগুলো বাস্তবায়নে সরকারি পর্যায়ের আমলারা কতটুকু আন্তরিক, সেটা বিবেচ্য বিষয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. আহমেদ আল কবীর এবং সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী।
ড. আহমেদ আল কবীর বলেন, দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধির পথে এগোচ্ছে। দেশের অর্থনীতি যে কয়টি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার মধ্যে বড় চালিকাশক্তি হচ্ছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। এই সমৃদ্ধির অর্থনীতি গড়তে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করছে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা লাখো প্রবাসীর পাঠানো রেমিট্যান্স। যা কোনোমতে অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই প্রবাসীদের সম্মানিত অবস্থানে উপস্থাপন করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এ ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে কিন্তু এ পর্যায়ে আমলারা কতটুকু আন্তরিক সেটা বিবেচ্য। দেশের বিমানবন্দর থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোয় যারা নিয়োজিত, তারা বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। যাদের বিদেশের দূতাবাসে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের দায়িত্ব সেদেশে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত প্রবাসীদের নানা সুযোগ-সুবিধা ও সাহায্যে-সহযোগিতা করা। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করা হয় না। আসলে এখানে কাঠামোগত বিষয়গুলোতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। প্রশাসনিক যেসব কার্যক্রম রয়েছে, সেগুলো খুব মন্থর। শুধু এ বিষয়েই নয়, দেশের সব ক্ষেত্রে বিষয়টি লক্ষ করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাংক, বিমানবন্দরসহ আরও বিভিন্ন খাতে এরকম চিত্র দেখা যাচ্ছে।
এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হচ্ছে। প্রবাসীদের রেমিট্যান্স দেশের উন্নয়ন তথা অর্থনীতিতে যথেষ্ট অবদান রাখছে। কিন্তু প্রবাসীদের সেভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আসলে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রবাসীদের যে সম্মান বা মর্যাদা দেখানো হচ্ছে, তার বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিফলিত হচ্ছে না। বিশেষ করে বিমানবন্দর কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ব্যাংক, থানা, চিকিৎসক যেখানেই যান না কেন, ভালো ব্যবহার করা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, প্রবাসীদের অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করেই গঠন করা হয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড বন্ড। এটি চালুর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদেশ থেকে বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স দেশে আনা। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা বলেছেন, বিদেশে কর্মরত শ্রমিক ছাড়া আর কেউ ওই বন্ড কিনতে পারবেন না। দীর্ঘদিন ওই বন্ড বন্ধ ছিল। কিছুদিন আগে আবার চালু করা হয়েছে। কথা হচ্ছে, যেখানে যাকে বসানো হয়েছে দেশকে সাহায্য করার জন্য, সেখানে সাহায্যের বদলে দেশকে নাজেহাল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওইসব ব্যক্তির দেশে বিনিয়োগের কোনো জায়গা নেই। তারা যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবেন, সেখানেও কোনো ভরসা পাচ্ছেন না। কারণ, বাজারে বিভিন্ন কারসাজির মাধ্যমে কিছু ব্যক্তি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। ফলে বিনিয়োগকারীরা দিন দিন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। পুঁজিবাজারে ভালো মানের বন্ড নেই, যেখানে বিনিয়োগ করে নিরাপদ থাকবে। অর্থাৎ যেখানে লভ্যাংশের ভিত্তিতে অর্থ বিনিয়োগ করবেন, সেখানে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এ ধরনের ব্যক্তিদের প্রসিকিউশনে আনা উচিত এ জন্য যে, কেন এ ধরনের বিষয় তার মাথায় এলো। হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, তাদের জবাবদিহির আওতায় না এনে বরং পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। আবার এতগুলো লোক বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকে এবং দেশে রেমিট্যান্স পাঠায়। যখন তারা দেশে ছুটি কাটাতে আসেন, তখন কোনো দল করতে পারেন না, কোনো বড় সংগঠন তৈরি করতে পারেন না। ফলে তাদের অবদান সেভাবে তুলে ধরতে পারেন না। যদি প্রবাসীরা সবাই এক সপ্তাহ বা এক মাস দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে দেন, তাহলে দেখবেন দেশের কী অবস্থা হয়।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ