Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 3:04 pm

প্রবাসী পুঁজি বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিন

গতকালের শেয়ার বিজে ‘পুঁজিবাজারে প্রবাসী বিনিয়োগ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেই’ শিরোনামে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, তা কার্যত একটি গঠনমূলক সমালোচনা। কেননা সেখানে পুঁজিবাজারে প্রবাসী বিনিয়োগ কেন আরও বাড়ছে না, সেটিই মূল লক্ষ্যবস্তু। উল্লেখ্য, মোট যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে মুনাফা ফেরত নিয়ে যাওয়ার পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকে, তাকেই নিট বিদেশি বিনিয়োগ ধরা হয়। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, অর্থাৎ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে পুঁজিবাজারে, যা মূলত প্রবাসী বিনিয়োগ। আমাদের প্রতিনিধি আরও জানাচ্ছেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৭০ লাখ ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫৬ কোটি টাকার মতো। তার মানে, আলোচ্য ৬ মাসে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে নিট বিদেশি বিনিয়োগ তথা ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট বেড়েছে ২৬ গুণেরও বেশি। তার কারণ প্রধানত দুটি বলে প্রতীয়মান প্রথমটি অভ্যন্তরীণ, দ্বিতীয়টি বহিঃস্থ। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, উভয় কারণ এখনও চলমান এবং যথেষ্ট জোরালো।

খেয়াল করার মতো বিষয়, ২০১০-১১ সালের বিপর্যয়ের পর টানা ৬ বছর মন্দার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে স্থানীয় পুঁজিবাজার। তার পর মূলত গত বছরের শেষ ভাগ থেকে চাঙাভাব ফেরে বাজারে। মাঝে কয়েক দিন লেনদেন ও সূচক হ্রাস পেলেও ফের ঊর্ধ্বমুখী হয় সূচক এবং সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেন। প্রবাসীরা শেয়ারবাজারের চলমান এ বাস্তবতা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকবেন। সম্ভবত এজন্যই স্থানীয় পুঁজিবাজারে বাড়ছে প্রবাসীদের বিনিয়োগ। দ্বিতীয় কারণটি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট সংশ্লিষ্ট। ব্রেক্সিটের অর্থনৈতিক প্রভাব কেমন হতে পারে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি। এও অস্বীকার করা যাবে না, ইউরোপ ও আমেরিকায় ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে অভিবাসনবিরোধী মনোভাব। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আরোহণ সেখানকার অভিবাসীদের ভাবিয়ে তুলেছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও সঞ্চিত অর্থ বিনিয়োগ নিয়ে স্বভাবতই চিন্তিত তারা। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) উচিত, অধিক হারে প্রবাসী বিনিয়োগ আকর্ষণে উপযুক্ত কৌশল নির্ধারণ ও তা কার্যকর করা। স্থানীয় পুঁজিবাজারে প্রবাসী বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে তা বাজারের মানোন্নয়নে সহায়ক হবে বলে অনেকের বিশ্বাস। সেজন্য উপযুক্ত পরিবেশ হচ্ছে প্রাথমিক প্রণোদনা। তা স্থানীয় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেরও অনুকূলে বটে। কথা হলো, ওই উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সাধারণ কিছু প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে আগে। যেমন দুর্বল ও ভিত্তিহীন কোম্পানিগুলো যেন বাজারে তালিকাভুক্ত হতে না পারে এবং সার্বিকভাবে পুঁজিবাজার যেন সাধারণ অর্থনীতির বিনিয়োগ পাওয়ার হাউজ হয়ে ওঠে।

স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি হেতু অনেক সময় লেনদেন অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। এটি প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আবার কেউ মনে করেন, এখনও বেশ কিছু ফাটকা উপাদান রয়েছে বাজারে, যেগুলোকে সময়ে সময়ে তৎপর হয়ে উঠতে দেখা যায়। চিহ্নিত ওইসব উপাদান অপসারণে মনোযোগী হওয়া উচিত কর্তৃপক্ষের। কেউ বলবেন না, স্থানীয় পুঁজিবাজার উন্নয়নে কিছুই করছে না বিএসইসি। তা নয়। বরং সাম্প্রতিককালে তাদের সক্রিয়তা অতীতের তুলনায় বেশি। কিন্তু কথা হলো, তাদের কাছ থেকে আরও বেশি প্রত্যাশা করে জনগণ। আর সেগুলো পূরণের পথে স্থিরভাবে এগিয়ে যেতে থাকলে তা শুধু প্রবাসী বিনিয়োগ কেন, সব ধরনের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতেই অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস।