প্রবীণ কল্যাণে সযত্ন উদ্যোগ চাই

দেশজুড়ে বিশ্ব প্রবীণ দিবস পালিত হলো পয়লা অক্টোবর। খেয়াল করার বিষয়, শুরুতে দিবসটির উদ্যাপন গুটিকয়েক নগর ও শহরে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা উপজেলা পর্যায়ে বিস্তৃত। কারণটি বোধগম্য। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বাড়ছে প্রবীণের সংখ্যা। এক পরিসংখ্যানমতে, বর্তমানে এখানে প্রবীণ তথা সিনিয়র সিটিজেনের সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখ। সংখ্যাটি ২০২৫ সাল নাগাদ এক কোটি ৮০ লাখে উন্নীত হবে বলে প্রাক্কলন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশে মানুষের গড় প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেড়ে চলেছে বলে স্থানীয় প্রবীণের সংখ্যা যথাক্রমে সাড়ে চার ও সাড়ে পাঁচ কোটিতে পৌঁছুতে পারে ২০৫০ ও ২০৬১ সালে। এ পরিসংখ্যান উপেক্ষা করার মতো নয়। আরও দুঃখজনক সার্বিক প্রবীণ কল্যাণ পরিস্থিতি। বলার অপেক্ষা রাখে না, উন্নয়নের জোয়ারে তরুণ জনগোষ্ঠীর গুরুত্ব যেমন বাড়ছে, তেমনি কমছে প্রবীণদের কদর। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার এক মর্মান্তিক কাহিনি অনেকের দৃষ্টিগোচর হয়ে থাকবে। সন্তানদের অবহেলায় গোয়ালঘরে থাকা নব্বই-ঊর্ধ্ব ওই বৃদ্ধার শেয়ালের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা আমাদের মনকে নাড়া না দিয়ে পারে না। নিঃসন্দেহে ঘটনাটি প্রবীণদের প্রতি অবহেলার একটি ‘এক্সট্রিম কেস’। ঘরে ঘরে এমন না ঘটলেও কমবেশি প্রায় সব বৃদ্ধ-বৃদ্ধাই যে কোনো না কোনোভাবে অবহেলার শিকার, তা বলা নিষ্প্রয়োজন। যে সন্তানসন্ততি বা আত্মীয়স্বজন প্রবীণদের অবহেলা করছে, তারাও করুণার যোগ্য। বস্তুত নিদারুণ ‘স্যাডিস্ট’ ছাড়া প্রবীণ বাবা-মাকে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দিতে পারে, সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ অবহেলিত প্রবীণ এবং তাদের অবহেলাকারী সন্তান-সন্ততিরা যে মাত্রায়ই হোক পরিস্থিতির শিকার। এদের মাঝে একটি গোষ্ঠী উন্নয়নের গতিবেগে ছিটকে পড়ছে; অপরটি এর সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আর কোনো দিকে দৃষ্টি দিতে পারছে না এক ধরনের ঘোরের মধ্যে রয়েছে।

কৌত‚হলোদ্দীপক বিষয়, প্রাচীন এমনকি আধুনিককালে উপনীত হওয়ার পরও ভারতীয় উপমহাদেশে শক্ত সামাজিক ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল, যেখানে সমাজে সম্মানের আসনে বসতেন প্রবীণরা। তার কিছুটা ক্ষয় হয় ঔপনিবেশিক শাসনে আর বাকিটা নব্য শিল্পায়নের ধাক্কায়। আবার শিল্পায়ন-নগরায়ণ তথা উন্নয়নকে পাশ কাটিয়ে কেবল প্রবীণ কল্যাণে কাজ করে যাবে, এটাও বোধকরি ভবিষ্যতে যারা বৃদ্ধ হবে তথা আজকের তরুণ সমাজের অভিপ্রায় নয়। তা সত্তে¡ও নিজ গরজে এখন থেকেই প্রবীণ কল্যাণে মনোযোগ দেওয়া দরকার। নইলে সময়োচিত পদক্ষেপের অভাবে আগামী দিনে দুর্ভোগ বাড়বে বৈ কমবে না। সেক্ষেত্রে কারও কারও ধারণা, কেবল পিতা-মাতা ভরণপোষণ আইনের মতো কিছু একটাই যথেষ্ট নয়। প্রবীণ কল্যাণের বিষয়টি আরও গভীরভাবে ভাবা প্রয়োজন। লক্ষ করা দরকার, (মৌলিক অধিকার বাদ দিলে) প্রবীণদের প্রধান চাহিদা তিনটি সঙ্গ, যত্ন ও চিকিৎসা। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, শেষোক্ত দুটি তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্যই প্রতুল নয়। আনুপাতিক হারে তাই প্রবীণরা সুবিধাগুলো পাচ্ছেন আরও কম। এক্ষেত্রে ‘ওল্ড হোম’-এর মাধ্যমে পরিস্থিতিকে একভাবে সামাল দেওয়ার একটি চেষ্টা চলছে বটে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয় বলেই প্রতীয়মান। প্রবীণ কল্যাণকে ঘিরেও স্থানীয় সেবা খাতের শক্তিশালী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কিন্তু রয়েছে। করপোরেটদের সিএসআর কার্যক্রমকেও এতে সম্পৃক্ত করা যাবে নিশ্চয়ই। নীতিনির্ধারকরা উপযুক্ত গুরুত্বসহ শিগগিরই সেদিকে দৃষ্টি দেবেন বলে প্রত্যাশা। অন্যথায় পরিবার-সমাজ-দেশে একসময় বিপুল ভ‚মিকা পালনকারী মানুষগুলো অবহেলার শিকার হতে বাধ্য হবেন।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০