Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 11:13 am

প্রবৃদ্ধির শীর্ষে পশ্চিম, আদায়ে শীর্ষে এলটিইউ, রেকর্ডে চট্টগ্রাম

রহমত রহমান: বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে কমিশনারেট পর্যায়ে ভ্যাট আহরণে শীর্ষে রয়েছে ভ্যাট উত্তর কমিশনারেট। আর সর্বোচ্চ ভ্যাট আদায় করেছে এলটিইউ। তবে কমিশারেট পর্যায়ে আহরণ প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয়বারের মতো শীর্ষে রয়েছে ভ্যাট পশ্চিম কমিশনারেট। প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় শীর্ষে ভ্যাট উত্তর ও তৃতীয় শীর্ষে রয়েছে ভ্যাট দক্ষিণ কমিশনারেট। আর ভ্যাট আদায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঘর পেরিয়েছে কেবল তিনটি কমিশনারেট। এর মধ্যে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট থেকে আলাদা হওয়ার পর প্রথমবারের মতো ১০ হাজার কোটি টাকার অঙ্ক পেরিয়েছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। বরাবরের মতো সর্বোচ্চ ভ্যাট আদায় করেছে এলটিইউ। তবে এলটিইউ এবারই প্রথম অর্ধলাখ কোটি টাকার ভ্যাট আদায়ের রেকর্ড করেছে। এলটিইউ একাই মোট ভ্যাট লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের বেশি আদায় করেছে। বাকি অর্ধেক ভ্যাট ১১টি কমিশনারেট আদায় করেছে। কেবল রংপুর কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি মাইনাস। বিদায়ী অর্থবছর গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি আদায় হয়েছে। ভ্যাট আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এনবিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছর ১১টি ভ্যাট কমিশনারেটের মধ্যে ২৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট। গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ। প্রবৃদ্ধিতে দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে ঢাকা ভ্যাট উত্তর কমিশনারেট। এই কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি ২০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট। এই কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। চতুর্থ অবস্থানে যশোর। এই কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। পঞ্চম অবস্থানে চট্টগ্রাম। এই কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ষষ্ঠ অবস্থানে খুলনা। এই কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। সপ্তম অবস্থানে ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেট। এই কমিশনারেটের প্রবৃদ্ধি ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ। এছাড়া সিলেট ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ, রাজশাহী ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ, এলটিইউ ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ, কুমিল্লা ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও রংপুর মাইনাস ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ।

আরও দেখা গেছে, ভ্যাট আদায়ের দিক থেকে এলটিইউ শীর্ষে রয়েছে। এলটিইউ ২০২১-২২ অর্থবছর পাঁচটি বঙ্গবন্ধু টানেলের ব্যয়ের সমান রাজস্ব আদায় করেছে। বিদায়ী অর্থবছর এলটিইউ ৫২ হাজার ৪৬২ কোটি ২৩ লাখ রাজস্ব আদায় করেছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় তিন হাজার ২১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। শুধু জুন মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় চার হাজার ১২৩ কোটি টাকা। জুন মাসে আদায় প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ১৫ শতাংশ। বিদায়ী অর্থবছর এলটিইউ রাজস্ব আদায়ে দুটি রেকর্ড করেছে। প্রথমটি হলো এলটিইউ’র ইতিহাসে প্রথমবার ৫০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড। দ্বিতীয়টি হলো, জুনে চার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়। বিদায়ী অর্থবছর এনবিআরের ভ্যাট আদায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এলটিইউ একাই আদায় করেছে প্রায় অর্ধেক।

কমিশনারেটের হিসাবে দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছর ১১টি কমিশনারেটের মধ্যে তিনটি কমিশনারেট ১০ হাজার কোটি টাকার ঘর পেরিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেট সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ১৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা আদায় করেছে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ২৪৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায় করেছে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট। এই কমিশনারেট আদায় করেছে ১০ হাজার ৯০৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যা গত অর্থবছরের চেয়ে এক হাজার ৪৬৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট থেকে আলাদা হওয়ার পর এবারই প্রথম আদায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঘর পেরিয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছর এই কমিশনারেট আদায় করেছিল ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছর আদায় করেছিল ৯ হাজার ৪৩৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট ১০ হাজার কোটি টাকার ঘর পেরিয়েছে। এই কমিশনারেট বিদায়ী অর্থবছর আদায় করেছে ১০ হাজার ৮০১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় এক হাজার ৬৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ঢাকা পশ্চিম ভ্যাট কমিশনারেট আদায় করেছে ৪ হাজার ৬২ কোটি ১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৭৮৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেট আদায় করেছে ৪ হাজার ১৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৪৬৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট আদায় করেছে ৩ হাজার ৩১১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৮৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা বেশি।

খুলনা ভ্যাট কমিশনারেট আদায় করেছে ২ হাজার ৭৭৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৩৪৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা। যশোর ভ্যাট কমিশনারেট আদায় করেছে ২ হাজার ১২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ২৯৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বেশি। রাজশাহী ভ্যাট কমিশনারেট আদায় করেছে ২ হাজার ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২০৮ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেশি। রংপুর ভ্যাট কমিশনারেট আদায় করেছে এক হাজার ৪২২ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৫১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা কম। সিলেট ভ্যাট কমিশনারেট আদায় করেছে এক হাজার ৩১২ কোটি ২ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৪৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বেশি।

হিসাবে দেখা গেছে, বিদায়ী অর্থবছর ভ্যাট খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৩৫৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১০ হাজার ৮৪৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আদায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে জুন মাসে কেবল আদায় হয়েছে ১৩ হাজার ২০৯ কোটি ১১ লাখ টাকার বেশি, যা গত অর্থবছরের জুন মাসের তুলনায় প্রায় এক হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বেশি।