প্রবৃদ্ধি দুর্বল হওয়ায় ইউরোজোনে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রভাব পড়েছে ইউরোপজুড়ে। গত মার্চে মূল্যস্ফীতি রেকর্ডের পর এপ্রিলেও নতুন রেকর্ড গড়েছে ইউরোজোন। ইউরোপজুড়ে আর্থিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল হওয়ায় প্রভাব পড়েছে ইউরোপের মূল্যস্ফীতিতে। গতকাল শুক্রবার স্ট্যাটেস্টিকস অফিস অব ইউরোস্টেট এক প্রতিবেদনে জানায়, এপ্রিলে ইউরোজনের মূল্যস্ফীতি রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়ে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশে পৌঁছাবে, যা আগের মার্চে মাসে ছিল সাত দশমিক চার শতাংশ। এটি নিজেও ছিল রেকর্ড মূল্যস্ফীতি। খবর: গার্ডিয়ান। 

ইউরোস্টেটের পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এপ্রিলের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি ভ‚মিকা রেখেছে জ্বালানি খাতে। এ অঞ্চলের জ্বালানি খাতে বছর ভিত্তিতে  দাম বেড়েছে ৩৮ শতাংশ, যদিও মার্চে জ্বালানি বেড়েছিল ৪৪ দশমিক চার শতাংশ। তবে এপ্রিলে জ্বালানি চাহিদা কিছুটা কম থাকায় জ্বালানি খাতে খরচ হ্রাস পেয়েছে। কেবল এপ্রিলেই দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইউরোজোনের খাদ্যপণ্য, পানীয় ও তামাকপণ্য মার্চের তুলনায় এপ্রিলে পাঁচ শতাংশ থেকে বেড়ে ছয় দশমিক চার শতাংশে পৌঁছেছে,  যেখানে শিল্পপণ্যের দাম মার্চের তিন দশমিক চার শতাংশ থেকে বেড়ে তিন দশমিক আট শতাংশে পৌঁছেছে এপ্রিলে এবং পরিষেবা খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দুই দশমিক সাত শাতাংশ থেকে তিন দশমিক তিন শতাংশ।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও বেশি চাপে রাখবে, যেখানে চলতি গ্রীষ্মে রেকর্ড সর্বনিম্ন দুই শতাংশ সুদহার ধরে রাখতে বেকাদায় পড়তে হবে।

ইউরোজনে প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক দুই শতাংশ: এদিকে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রুশ সেনাবাহিনী সামরিক হামলা শুরু করে। এরপর ইউরোপজুড়ে মার্চে জ্বালানির দার্ম রেকর্ড বৃদ্ধি পায়। কারণ ইউরোপের ৪০ শতাংশ জ্বালানি চাহিদা মেটায় রাশিয়া। যুদ্ধের জেরে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা

আরোপ করে। পাল্টা রাশিয়াও ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এর জেরে ইউরো অঞ্চলে তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যায়। 

ফলে গত মাসে ইউরোজোনে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইউরোজনে গত জানুয়ারি-মার্চে জিডিপি প্রবৃদ্ধি শূন্য দশমিক দুই শতাংশ বেড়েছে, যা আগের প্রান্তিক অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় শূন্য দশমিক তিন শতাংশ কম।

এদিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কেন্দ্র করে এপ্রিলে ইউরোপের শক্তিশালী দেশ ফ্রান্সের অর্থনীতি ছিল স্থবির। অন্যদিকে ইতালির জিডিপি শূন্য দশমিক দুই শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। আর জার্মানি মন্দা থেকে ফিরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সার্বিকভাবে এপ্রিলে পুরো ইউরোপের অর্থনীতি ধীরগতির ছিল, যা পাঁচ শতাংশ থেকে কমে চার শতাংশে নেমেছে।

সুদের হার কমিয়েছে রাশিয়া: এদিকে ইউক্রেনে রুশ হামলার জেরে রাশিয়াও নানা আর্থিক নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়েছে। ফলে দেশটির মূল্যস্ফীতি দিন দিন বেড়েই চলছে। এর ফলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক গতকাল সুদহার কমিয়ে ১৪ শতাংশে নামিয়েছে। ব্যাংক অব রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের চাপ কাটাতে সুদহার ১৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৪ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছে।

যদিও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। আর্থনীতিবিদদের ধারণা ছিল, সুদের হার কমিয়ে ১৫ শতাংশ করবে রাশিয়া। অন্যদিকে আর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে রাশিয়া নিজস্ব মুদ্রা রুবলে গ্যাস বিক্রি করতে চায়। এ অবস্থায় ইউরোপের জার্মানিসহ অন্তত চারটি দেশ রুবলের মাধ্যমে রাশিয়ার গ্যাস কেনার প্রতিশ্রæতি দিয়েছে।

এদিকে এপ্রিলে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেও বেড়েছে নিত্যপণ্যসহ বিভিন্ন জিনিসের দাম। ফলে ওইসব দেশেও বেড়েছে মূল্যস্ফীতি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০