নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্বের উপকূলীয় দেশগুলোর জন্য সমুদ্র হচ্ছে অপার সম্ভাবনার ক্ষেত্র। জাতীয় প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নের জন্য সমুদ্রের সম্পদের (নীল অর্থনীতির) সঠিক ব্যবহার জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশ এখনও নীল অর্থনীতির কাক্সিক্ষত ব্যবহার করতে পারছে না। এজন্য বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে উদ্ভাবনী ধারণা ও প্রযুক্তি আদান-প্রদানে জোর দেওয়া প্রয়োজন। সেইসঙ্গে উপকূলীয় দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া জরুরি।
ঢাকায় শুরু হওয়া দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নীল অর্থনীতি সংলাপে এসব কথা বলেন বক্তারা। গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দু’দিনব্যাপী এ সংলাপ শুরু হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এর উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের অর্থনীতির বড় অংশই সমুদ্রনির্ভর। নীল অর্থনীতির বৈশ্বিক আকার ২৪ ট্রিলিয়ন ডলারের মতো। বাংলাদেশও এই অর্থনীতির মধ্যে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশে এখনও নীল অর্থনীতি ব্যবহারের জন্য পূর্ণ দক্ষতা অর্জন সম্ভব হয়নি। তবে আমাদের সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার সঙ্গে সমুদ্রের সম্পদের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রবৃদ্ধি ২০২০ সালের মধ্যে আট শতাংশ অতিক্রম করবে বলে আমরা আশা করছি। এই জাতীয় প্রবৃদ্ধির পাঁচ শতাংশই নীল অর্থনীতি থেকে আহরণ করতে হবে। সেজন্য নানা উদ্যোগ চলছে।’
সভায় অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, আন্তর্জাতিক সি-বেড অথোরিটির মহাসচিব মিশেল লজ প্রমুখ বিশেষ অতিথি ছিলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশিদ আলম।
সভায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং বাণিজ্যের জন্য সমুদ্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া দেশের প্রায় এক কোটি ১০ লাখ লোক সমুদ্র উপকূলে বসবাস করছে। তাদের বিষয়ে বাংলাদেশকে বিশেষভাবে ভাবতে হচ্ছে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে। এ অবস্থায় উন্নয়নের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার ব্যবস্থাপনায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বিরোধ মীমাংসায় শান্তিপূর্ণ কৌশল নিয়ে বাংলাদেশ এরই মধ্যে সফল হয়েছে। আমরা এখন বিমসটেকসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও সহযোগিতাও গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের বলেন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের (এসডিজি) ১৪তম অভীষ্ট সরাসরি নীল অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। আমরা একে গুরুত্ব দিচ্ছি। এজন্য ৬৫ দিনের মৎস্য রক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই নীল অর্থনীতির সর্বোচ্চ সুযোগ নিশ্চিত করবে বাংলাদেশ।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জাতীয় প্রবৃদ্ধির দু-তিন শতাংশ হারাচ্ছে। এর জন্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উপকূলীয় এলাকার লোকজন। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো এ সংলাপের আয়োজন করছে। দু’দিনব্যাপী এ সংলাপে বিমসটেক দেশগুলোর কূটনৈতিক প্রতিনিধিরাসহ বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা অংশ নিয়েছেন। এতে বিভিন্ন সেশনে নীল অর্থনীতির সম্ভাবনা ও কৌশলসংক্রান্ত ভাবনা তুলে ধরেন বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা।