প্রভাবশালীদের ব্যাংক লেনদেনে অধিক সতর্ক থাকার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যাংকিং লেনদেনের ক্ষেত্রে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্তি সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর চিফ অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং কমপ্লায়েন্স অফিসারদের সঙ্গে এক সভায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, শেখ হাসিনার পতনের পর পুরো দেশে এক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব ব্যাংক খাতেও পড়েছে। দখল হওয়া ব্যাংকের মালিকানা পুনরুদ্ধার, অর্থপাচারে সহায়তাকারীদের অপসারণ ও অবৈধ নিয়োগ বাতিল, চাকরিতে পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে ব্যাংকে ব্যাংকে বিক্ষোভ চলছে। ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে বুধবার নজিরবিহীন বিক্ষোভের পর গতকাল কয়েকটি ব্যাংকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বেনামি ঋণের বড় অঙ্কের অর্থ উত্তোলন করতে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি বিএফআইইউ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। বড় অঙ্কের লেনদেন থেকে বিরত থাকতেও বলা হয়েছে।

গতকাল বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আগের যেসব নির্দেশনা রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব নির্দেশনায় কোথায় সমস্যা হচ্ছে, তা জানতে চাওয়া হয়। নগদ টাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে সতর্ক করা হয়। এখন অনলাইনভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম নেই। তাই অনেকে বিভিন্ন শাখা থেকে ভেঙে ভেঙে বড় অঙ্কের টাকা উত্তোলন করে ফেলছে, যা শাখা পর্যায়ে বোঝা যায় না। এসব প্রধান কার্যালয়ের সিবিএসে হিট করে। তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়। যদি সন্দেহজনক কিছু পায়, তাহলে দ্রুত যাতে রিপোর্ট করতে নির্দেশনা দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ এবং ব্যাংক মালিকরা অর্থ সরানোর চেষ্টা করবে। তাই এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের ব্যাংক লেনদেনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে, যেটা আগেও ছিল। তবে তা বাস্তবতার কারণে ব্যাংক করতে পারবে না। এখনকার পরিস্থিতি কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে, আশা করা যায় বিচারব্যবস্থা ঠিক থাকবে। সেক্ষেত্রে তাদের বলা হয়েছে, আগে যা করতে পারেননি বা নতুন যা হবে, তা দ্রুত বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট করতে।
তাছাড়া ব্যাংক খাতে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। গুজবগুলো যাচাই-বাছাই করে কাজ করতে নির্দশনা দেয়া হয়। গুজবের কারণে ব্যাংক খাতে গ্রাহকের কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতেও বলা হয়।

সাধারণত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে এ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে থাকে বিএফআইইউ। তবে বিএফআইইউ-প্রধান না থাকায় প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব হয়নি। এর আগে বুধবার সকালে স্বেচ্ছাচারিতা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের তোপের মুখে বিএফআইইউয়ের প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর এবং একজন উপদেষ্টা ব্যাংক থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। এছাড়া হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকে আসছেন না। অনেকে বলছেন, দেশ থেকে পালাতে তিনি অনেক মহলে দেনদরবার করে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, অনেক দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদ তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থাকা দুর্নীতির টাকা সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। সরকার পতনের পর বুধবার ইসলামী ব্যাংক তাদের একটি প্রতিষ্ঠানের ৫৪৮ কোটি টাকা তোলার চেক প্রত্যাখ্যান করেছে। জানা গেছে, টপ টেন ট্রেডিং কোম্পানির ইস্যু করা এই চেকটি এসেছিল চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখায়। কোম্পানিটি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য যে নম্বরটি দিয়ে রেখেছিল, তা বন্ধ পাওয়া গেছে। দেশব্যাপী অস্থিরতার মধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ উত্তোলনের এই চেষ্টা সন্দেহজনক হওয়ায় টাকা উত্তোলনের ওই চেক প্রত্যাখ্যান করেছেন ব্যাংকটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০