প্রভাব বিবেচনা করে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে

অনেকের ধারণা, কৌশলগত অংশীদারের বিষয়টি নিয়ে টার্নওভার অনেক কমে গিয়েছিল। আসলে কৌশলগত অংশীদারের সঙ্গে বাজার পতনের কোনো সম্পর্ক নেই। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাব তৈরি হওয়ার পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু পদক্ষেপ জড়িত ছিল। তারা নীতিমালা পরিবর্তন করে এবং তা কিছুদিনের ব্যবধানে আবার সংশোধন করে। এতে বড় বিনিয়োগকারীরা আস্থা হারিয়ে ফেলেন। কাজেই বাজারে কী প্রভাব পড়বে, তা বিবেচনা করে বাজার-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। যাদের জন্য এসব নীতিমালা প্রণীত হচ্ছে, তারা কতটুকু সুবিধা পাচ্ছেন সে বিষয়টিও দেখা দরকার। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ আহছান উল্যা, শেলটেক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালক মোহাম্মদ মইন উদ্দিন এবং আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা, সঞ্চালনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
মোহাম্মদ আহছান উল্যা বলেন, কৌশলগত অংশীদার বাছাইকরণ হিসেবে চীন ও ভারতের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিল। অবশেষে চীনই ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত অংশীদার হতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কথা হচ্ছে, বাজারে কৌশলগত অংশীদার আসলে কী হবে? চীনের দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ২৫ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবে এবং ৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে বিনিয়োগকারীদের হাতে। ইতোমধ্যে ৪০ শতাংশ শেয়ার ট্রেকহোল্ডারদের কাছে রয়েছে। বাকি ৩৫ শতাংশ পরবর্তীতে আইপিওর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কাজেই এ বিষয়টি হয়ে গেলে চীনের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মতো ফান্ড ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পাবে। আর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পাওয়া মানে সব শেয়ারহোল্ডার কিছুটা হলেও সুবিধা পাবেন। আর এ কৌশলগত অংশীদার হওয়ার সুফল দেশের বাজার হয়তো দু-তিন বছর পর পাবে বলে মনে করি। কারণ যে কোনো নীতিমালার সুফল পেতে হলে কিছু সময় লাগে। তাছাড়া কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীন পুঁজিবাজারে এলে বাজার ভালো হবেÑবিনিয়োগকারীদের এমন মনস্তাত্ত্বিক ধারণার একটি সুফল হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই আমরা পাব।
মোহাম্মদ মইন উদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজারে কৌশলগত অংশীদার আসলে দীর্ঘ মেয়াদে সুবিধা পাওয়ার একটি বাজার হবে। তবে অনেকেই মনে করেন, কৌশলগত অংশীদারের বিষয়টি নিয়ে শেষ কয়েক মাসে বাজারের টার্নওভার অনেক কমে গিয়েছিল। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজারের প্রতি আস্থার অভাব তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, কৌশলগত অংশীদারের সঙ্গে বাজার পতনের কোনো সম্পর্ক নেই। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার অভাব তৈরি হওয়ার পেছনে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু পদক্ষেপ জড়িত বলে মনে করি। তারা নীতিমালা পরিবর্তন করে এবং তা কিছুদিনের ব্যবধানে আবার সংশোধন করে। এতে বড় বিনিয়োগকারীরা তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলেন। কাজেই বাজারে কি প্রভাব পড়বে, তা আগেই বিবেচনা করে তারপর বাজার-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। যাদের জন্য এসব নীতিমালা প্রণীত হচ্ছে, তারা কতটুকু সুবিধা পাচ্ছেনÑসে বিষয়েও আলোচনা করা দরকার।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, ২০১০-১১ সালের বাজারধসের এতদিন পরও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজারের প্রতি পরিপূর্ণ আস্থা ফিরে আসেনি। কারণ তখন ধসে যে পরিমাণ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই এখন বাজার থেকে চলে গেছেন। গতবার শুধু একটি বছর বাজার ভালো ছিল; সেটিও শুধু ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক খাতের মাধ্যমেই হয়েছিল। কারণ সেবার আর্থিক খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারদর অনেক বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বছরের শুরুতেই ব্যাংক খাতের বিভিন্ন কেলেঙ্কারির খবরে আবার তারা খারাপ অবস্থায় চলে যায়। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু পদক্ষেপে বাজার একটি নেতিবাচক অবস্থায় চলে যায়। তবে আমার ধারণা, নির্বাচনের আগে ও পরে বাজার ধীরে ধীরে ভালো হয়ে যাবে।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০