প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
পুঁজিবাজারে অনেক সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রতারণামূলক তথ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ঠকানো হয়। বাজারে মূল্য সংবেদনশীল তথ্যের ঘোষণা দেওয়ার আগে বিএসইসির কাছে যথার্থ প্রমাণ দেওয়ার আইন চালু করতে হবে। যথার্থ প্রমাণ ছাড়া কোনো ঘোষণা দিতে পারবে না কোম্পানিগুলো। এ নিয়ম চালু করলে প্রতারণামূলক তথ্যের হাত থেকে রেহাই পাবেন বিনিয়োগকারীরা। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পিএলএফএস ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সিইও মো. আব্দুল মুকতাদির, সিএফএ এবং অর্থনীতিবিদ ড. এহসানুল আলম পারভেজ।
মো. আব্দুল মুকতাদির বলেন, বাজারের গড় গতিবিধির সঙ্গে ‘জেড’ ক্যাটাগরির গতিবিধির সম্পর্ক খুবই কম। কো-রিলেশনে দেখা যায়, বাজারের গতিবিধির সঙ্গে একটি শেয়ার কতটুকু এগোচ্ছে। যদি একই দিকে এগোয় তাহলে কো-রিলেশন ইতিবাচক এবং বিপরীতে গেলে নেতিবাচক হয়। কিন্তু অতীত ইতিহাস থেকে দেখা গেছে, ‘জেড’ ক্যাটাগরির সঙ্গে বাজারের কো-রিলেশন সাধারণত নেতিবাচক। আর এটির প্রধান কারণ আমাদের বাজারে বিদ্যমান সূচক। সূচকের সাধারণ হিসাব হয় বাজার মূলধন কার কত এবং কোন কোম্পানির মার্কেট ক্যাপিটাল কতটুকু ও তার মধ্যে বাজারে ফ্রি-ফ্লোড কতটুকু আছে, তা দিয়ে। এতে যে কোম্পানিগুলোর ফ্রি-ফ্লোড ও বাজার মূলধন অধিক, সূচকে তার অবদানও অধিক থাকে এবং যার বাজার মূলধন কম, সূচকে তার অবদানও কম থাকে। ফলে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়া-কমাতে সূচকে খুব একটি প্রভাব পরে না। সূচকে প্রভাব পরে বড় মূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বাড়া-কমাতে। ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ারদর দুই-চার টাকা বাড়লে এবং ২০-৫০ হাজার শেয়ার লেনদেন হলেই হল্টেড হয়ে যায়। আর স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর এমনিতেই বাজারে গতিবিধি বেশি হয়। বাড়ার সময় বেশি বাড়ে এবং কমার সময় বেশি কমে। ফলে যখন বিনিয়োগকারীরা বড় কোম্পানিগুলোর শেয়ার থেকে আশানুরূপ মুনাফা করতে পারে না তখন দুর্বল শেয়ারের দিকে ঝোঁকেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই বিনিয়োগকারীদের এসব শেয়ারে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকা দরকার এবং তাদের আরও সচেতন হওয়া দরকার।
এহসানুল আলম পারভেজ বলেন, ব্যাংকগুলোর শেয়ার অজ্ঞাত কারণে এত দিন অবমূল্যায়িত ছিল। কারণ ১০ টাকার একটি ব্যাংকের শেয়ার যখন ৯ টাকায় থাকে এবং ওই ব্যাংকের ১০-১৫ বছরে যে অ্যাসেট ভ্যালু হয় সে হিসাবে এ দর অবমূল্যায়িত। এজন্য আমরা অনেকেই বলেছি, বাজারে অনেক খারাপ শেয়ার আছে যেগুলো অতিমূল্যায়িত এবং কিছু ভালো শেয়ার আছে যেগুলো অবমূল্যায়িত অবস্থায় আছে। এর মধ্যে ব্যাংকের দিকে আমরা অনেকেই ইঙ্গিত দিয়েছিলাম। আর এ অবমূল্যায়িত অবস্থায় ব্যাংকের শেয়ার যারা সংগ্রহ করেছিলেন তারা লাভবান হয়েছেন। অনেকেই আবার দর অধিক বাড়ার পর শেয়ার সংগ্রহ করেছেন এবং লাভ করতে পারেননি। আমরা সব সময়ই বলি কম দামে শেয়ার সংগ্রহ করতে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা বাড়তি বাজারে শেয়ার সংগ্রহ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তিনি আরও বলেন, আইনের মধ্যে থেকে মানুষের ক্ষতি করা যায়। আর যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এ ক্ষতি করছে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এছাড়া প্রতারণামূলক তথ্য দিয়ে অনেক সময় বিনিয়োগকারীদের ঠকানো হয়। বাজারে কোনো ঘোষণা দেওয়ার আগে তার যথার্থ প্রমাণ বিএসইসিকে দিয়ে তারপর ঘোষণা দেওয়া উচিত কোম্পানিগুলোর। যথার্থ প্রমাণ ছাড়া কোনো ঘোষণা দেওয়া উচিত নয়। এতে প্রতারণামূলক তথ্য থেকে রেহাই পাবেন বিনিয়োগকারীরা।
শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম