নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের কৃষি ও শিল্প খাতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এ দুই খাতের সুরক্ষা দিতে যা যা দরকার হয়, সরকার তা করবে। এজন্য প্রয়োজনে দিনের বেলায় বিদ্যুতের ব্যবহার বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ-বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। গতকাল রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে শিল্প খাতে জ্বালানি সংকটের প্রভাব হ্রাসের বিষয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এ সভার আয়োজন করে। এতে অংশ নেন বিভিন্ন শিল্প খাতের ব্যবসায়ীরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন উপায়ে শিল্প খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভোলায় আট কোটি ঘনফুট গ্যাস সিএনজি করে ব্যবহারের সুযোগ আছে। আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে এসব গ্যাস বার্জে (জাহাজ) করে ঢাকায় নিয়ে আসা হবে। ব্যবসায়ীরা চাইলে সিএনজি স্টেশন থেকে নিয়ে কারখানায় ব্যবহার করতে পারেন।
সভায় তৈরি পোশাকসহ দেশের বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা গ্যাস-বিদ্যুৎ নিয়ে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তারা জানান, গ্যাস না থাকায় দৈনিক প্রায় ১২ ঘণ্টা কারখানার উৎপাদনকাজ বন্ধ থাকছে। এতে ক্রয়াদেশ কমার আশঙ্কার পাশাপাশি অর্ধেক লোকের কর্মসংস্থান নিয়েও দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের বেঙ্গল গ্রুপের অনেক কারখানা আছে সাভারে। প্রতিদিন সেখানকার কর্মীরা আমাকে ফোন করে বলেন, ‘স্যার, আপনি তো এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি, কিন্তু আমাদের কারখানা দৈনিক সাত-আট ঘণ্টা করে বন্ধ থাকে।’
ব্যবসায়ীদের কথা শুনে বিভিন্ন জায়গায় গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে শিল্প খাতে সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানান তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমদানির সুযোগ যেহেতু কম, সেহেতু দেশের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে হলে কাউকে না কাউকে ব্যবহার কমাতে হবে। বিদ্যুতে গ্যাস সরবরাহ কমানো হলে লোডশেডিং বাড়বে। কিন্তু আমরা অঙ্ক করে দেখেছি, শিল্পে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে হলে সরবরাহ কমানোর খাত হিসেবে বিদ্যুৎ খাত হবে উত্তম জায়গা।’
তবে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর এসব আশ্বাসের মধ্যেই অনুষ্ঠানস্থলে দাঁড়িয়ে যান কয়েকজন ব্যবসায়ী। তারা সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দাবি করেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টার কাছ থেকে। এ সময় তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ, আমরা সরকার থেকে যা করার দরকার হয় করব, আপনারা সাহস হারাবেন না। যদি প্রয়োজন হয়, আমরা এখানে যারা আছি, তারা সবাই শপথ নেব; দরকার হলে আমরা দিনের বেলায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করব না।’
বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন, এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী, মেট্রোপলিটন চেম্বার ঢাকার (এমসিসিআই) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম চেম্বারের (সিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম, ফরেন ইনভেস্টর চেম্বারের (এফআইসিসিআই) সহসভাপতি স্বপ্না ভৌমিক, বিকেএমইএ সহসভাপতি আক্তার হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন।