প্রযুক্তির আসক্তি থেকে সন্তানকে দূরে রাখুন

প্রযুক্তি আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে প্রযুক্তিগত সেবা। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয় ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে ইন্টারনেট সেবা। বিশেষ করে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন, আইফোন, ট্যাব, স্মার্টফোন প্রভৃতি আজ শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী এমনকি বয়স্কদের হাতেও পৌঁছেছে। চোখের সামনে অনলাইনে খুলে যাচ্ছে অজানা বিস্ময়, না-দেখা নতুন জগৎ। সহজে কম সময়ে প্রযুক্তির কল্যাণে হাতের নাগালে পাওয়া যায় সব তথ্য। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে কাউকে ইন্টারনেটের ব্যবহার থেকে বঞ্চিত রাখার সুযোগও তো নেই।

শিশুরা ইন্টারনেটে একদমই উম্মুক্ত। যে কারণে এখন তারাও ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা হোক কী পারদর্শিতা বড়দের চেয়ে কোনো ক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই শিশুরা। ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ভুল তথ্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শিশু-কিশোর-তরুণ নিজেদের ঠেলে দিচ্ছে নানা অন্যায়-অপকর্মের দিকে। ফলে সমাজে সহিংসতা, যৌন অপকর্ম ও নির্যাতন দিন দিন বাড়ছে। তাদের হাতে সহজে ইন্টারনেট ব্যবহারের উপকরণ পৌঁছানোর ফলে এ অপব্যবহারে হার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে তারা ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছে নৈতিকতা ও মূল্যবোধ থেকে। সে সঙ্গে বেড়েছে সাইবার অপরাধীদের দৌরাত্ম্য। শিশুরা এ অপব্যবহারের প্রধান শিকার। বাড়ছে পর্নোগ্রাফির ব্যবহারও। এর ক্ষতিকর দিকের মাথায় রাখা প্রয়োজন। অল্প বয়স থেকেই তাদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্রাউজিং সম্পর্কে অভিহিত করা প্রয়োজন।

 

ইন্টারনেটে আসক্তি জন্মায় যেভাবে

বাবা-মায়েরা সন্তানকে শান্ত রাখতে মুঠোফোনসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র তাদের হাতে তুলে দেন। এ থেকে সন্তানের মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যাস জন্মায়

বাবা-মায়েরা ইন্টারনেট-নির্ভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মগ্ন থাকেন। এতে সন্তানেরা উৎসাহিত হয়

নিরাপত্তাহীনতার অজুহাতে সন্তানকে সব সময় ঘরে বন্দি ও চোখে চোখে রাখতে চান অনেক অভিভাবক এ জন্য মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ তুলে দিয়ে স্বস্তি অনুভব করেন, যা শিশু কিশোরদের যন্ত্রের প্রতি আসক্ত করে ফেলে

 

সন্তান ইন্টারনেটে আসক্ত কি না বোঝার উপায়

অনলাইনে বসলে সময়ের জ্ঞান থাকে না

নেটে বসার জন্য ঘুম বিসর্জন দেয়

অনলাইনে থাকাকালীন কোনো কাজ করতে বললে ক্ষেপে যায়

নেটে বসতে না দিলে ক্ষিপ্ত হয়

হোমওয়ার্কের বদলে নেটে বসাকে গুরুত্ব দেয়

বাড়তি সময় নেটে কাটানোর ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে

অনলাইনে নিত্যনতুন বন্ধু তৈরি করে

পুরোনো শখগুলোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে

 

ক্ষতিকর প্রভাব

শিশুকে আত্মকেন্দ্রিক, অসহনশীল ও অসামাজিক করে তুলে

বুদ্ধির বিকাশে সৃষ্টিশীলতা নষ্ট করে দেয়

খেলাধুলার সময় কেড়ে নেয়। এতে শিশুরা শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক শিশুর ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে

পারিবারিক সদস্যদের মধ্যে বন্ধন কমিয়ে দেয়

স্বাভাবিক আচার ব্যবহারের ওপর প্রভাব ফেলে

মাথা ব্যথা, চোখব্যথা, চোখ দিয়ে পানি পড়াসহ চোখের দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দেয়

ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোকসহ নানা জটিলতা বাড়ায়

পড়ালেখাসহ সব কাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। হতাশা কিংবা বিষণœতায় ভোগে। এমনকি ঘটাতে পারে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও

খিটখিটে মেজাজ আর অস্থিরতা দেখা দেয়। সম্পর্কের জটিলতা সৃষ্টি হয়

সাইবার অপরাধের শিকার হওয়া কিংবা সাইবার জগতের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে

আসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনা যায়

নৈতিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। নীতিবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে অশুভ দিকগুলো থেকে সে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে। এছাড়া অভিভাবকদের কিছু জ্ঞান প্রয়োগ করতে হবে

১৮ মাস বয়সী শিশুদের কোনোভাবেই স্ক্রিনের সামনে আনা যাবে না

১৯ থেকে ২৪ মাস বয়সী শিশুদের পরিচর্যাকারীর তত্ত্বাবধানে স্বল্প সময়ের জন্য সময় কাটাতে দেবেন

দৈনিক এক ঘণ্টা শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখানো যেতে পারে কিন্তু সেটা হতে হবে অভিভাবকের সঙ্গে

৫ থেকে ১৮ বছরের শিশুদের সময় বেঁধে দিতে দিন

সময় মেনে চলতে উৎসাহিত করুন। সে কতক্ষণ সোস্যাল মিডিয়া, টিভি, ভিডিও গেম, ইন্টারনেটে সময় কাটাবে তা নির্ধারণ করে দিন

সন্তানের যাবতীয় পাসওয়ার্ড জানুন। তবে লুকিয়ে নয়, তাকে জানিয়েই তার নিরাপত্তার জন্য পাসওয়ার্ডটি আপনার জানা দরকার

সন্তানকে সময় দিতে হবে। সন্তান কি করছে, কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে চলছে খোঁজ নিতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান। যদি মা-বাবা প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত থাকেন, সেক্ষেত্রে নিজেরা প্রথমে এ বদভ্যাস দূর করুন

বিদ্যালয়ে সচেতনতা প্রচার শুরু করলে তারা

কু-প্রভাব থেকে রক্ষা পাবে

ইন্টারনেটের কুফল থেকে সন্তানদের বাঁচাতে বিকল্প হিসেবে খেলাধুলা কিংবা পরিবারের সদস্যদের সময় দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। প্রতিদিন বিকালে পড়া শেষে তাকে খেলাধুলার সময় দিতে হবে

তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। সব বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে

জন্মদিন কিংবা বিশেষ দিনে শিশুদের বই উপহার দিন। বই ও পত্রিকা পড়া, টিভিতে খবর দেখানো, ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে দেখানো প্রভৃতি অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে তাদের জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত হবে

শিশুদের নাগালের বাইরে রাখুন মোবাইল ফোন

বাসার ডেস্কটপ কমন এরিয়ায় রাখুন। শিশু যেন আপনার সামনে মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ প্রভৃতি ব্যবহার করে

নিরাপত্তামূলক অনেক সফটওয়্যার আছে। সেগুলো ব্যবহার করুন। বাসার সংযোগ থেকে কোনো নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা উচিত নয়

আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করতে চাই। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, প্রযুক্তি যেন আমাদের ব্যবহার না করে। বিশেষ করে শিশুদের প্রযুক্তি ব্যবহারে অভিভাবক, পারিবারিক বন্ধন, শিক্ষক, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও ইন্টারনেট সেবাদাতাসহ সমাজের সবার সচেতন হতে হবে। ব্যবহারের শুরু থেকে সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে এটি শুধু খেলার মাধ্যম নয়। জানারও মাধ্যম। শিশুদের সামনে প্রযুক্তি ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।

 

শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০