নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের তরুণদের দক্ষতা বাড়াতে রাজধানীতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমেলা। মেলার প্রতিপাদ্য ‘মেধাই সম্পদ, বিজ্ঞান প্রযুক্তিই ভবিষ্যৎ’। এবারের মেলায় সারা দেশ থেকে মোট ২৫৬ প্রতিযোগী অংশ নিচ্ছেন। প্রতিটি জেলা থেকে এবারের জাতীয় অলিম্পিয়াডে সিনিয়র গ্রুপে ১২৮ ও জুনিয়র গ্রুপে ১২৮ অলিম্পিয়াড অংশ নেন।
এবারের ৩৯তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমেলায় স্টল থাকছে ১৯২টি। জুনিয়র গ্রুপ, সিনিয়র গ্রুপ ও বিশেষ গ্রুপ এই তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে মোট ১৯২টি দল ১৯২টি স্টলে তাদের বিজ্ঞানভিত্তিক উদ্ভাবন প্রদর্শন করবে। বিজ্ঞানবিষয়ক এ মেলায় কুইজ প্রতিযোগিতায় আটটি বিভাগে মোট ২৪টি দল অংশগ্রহণ করে। প্রতি দলে তিনজন করে প্রতিযোগী প্রতিযোগিতার সুযোগ পায় এবারের কুইজ প্রতিযোগিতায়।
সারা দেশ থেকে আসা তরুণরা আবিষ্কার করেছেন কীভাবে তেল ও বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা কমানো যায়, কীভাবে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, বাংলাদেশকে কীভাবে উন্নত বিশ্বে পরিণত করা যায়।
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসেছে মো. রাহীক ওয়াসিক ও শাদমান সৌদিক। তাদের প্রকল্পের নাম ডিজিটাল বাংলাদেশ। রাহীক ওয়াসিক শেয়ার বিজকে বলে, ‘আমাদের দেশে অনিরাপদ রেলক্রসিং ও গেটম্যানের অবহেলায় প্রতি বছর ২২০ থেকে ২৫০ জন রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করে এবং অনেকে গুরুতরভাবে আহত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা উদ্ভাবন করেছি ‘অটোমেটিক রেলওয়ে গেট কন্ট্রোল’ যার মাধ্যমে একদিকে যেমন লেভেলক্রসিংজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব, অন্যদিকে লেভেলক্রসিং কাজে নিয়োজিত কর্মীকে কোনো উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করা সম্ভব। প্রকল্পটিতে স্মার্ট লেজার সেন্সর টেকনোলজি যা ট্রেনের গতিবিধি লক্ষ করে, সে অনুযায়ী লেভেলক্রসিংয়ে অটোমেটিকভাবে গেট খুলবে ও বন্ধ থাকবে, লেভেলক্রসিংয়ে ভুলের আশঙ্কা থাকবে না এবং দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে।’
ঝালকাঠি থেকে মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন সাইদ খান। তার চিন্তা কীভাবে দেশের বিদ্যুৎ ও তেলের ওপর চাপ কমানো যায়। তিনি বলেন, ‘ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জের মাধ্যমে যান চলাচল করতে পারবে। এর জন্য গাড়ির সক্ষমতা অনুযায়ী দুই সেট ব্যাটারি নিয়ে তেল ও বিদ্যুৎ ছাড়াই যে কোনো ধরনের যানবাহন চালানো যাবে। আর যানবাহনের চাকা ঘোরার মধ্য দিয়েই ব্যাটারি চার্জ হবে কোনো বিদ্যুৎ ছাড়াই। অর্থাৎ এক সেট ব্যাটারির মাধ্যমে গাড়ি চলবে, অন্য সেট চাকা ঘোরার মাধ্যমে চার্জ হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে যানবাহন ব্যাপকহারে বাড়ছে। এর চাপ পড়ছে তেল ও বিদ্যুতের ওপর। কীভাবে বিদ্যুৎ ও তেলের ওপর চাপ কমানো যায়, এমন ভাবনা থেকেই এই প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু করি গত পাঁচ বছর আগে। আশা করছি এই প্রকল্প দেশের তেল ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সাহায্য করবে।’
গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে ৩৯তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায়ের সভাপতিত্বে বিজ্ঞানমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘আমাদের দেশের তরুণরা এখন প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি প্রগতির পথ বলে গণ্য। ইউনিয়ন ও ঢাকার মধ্যে কোনো তফাত নেই। গ্রাম থেকেও ভিডিও কলে দেশের বাইরে কথা বলা যাচ্ছে। আমরা যদি স্কুল-কলেজগুলোতে বিজ্ঞানচর্চা বাড়াতে পারি, তাহলে বিজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ বাড়বে।’
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ক্রিয়েটর প্রধান কাজী হাফিজুর রহমান, প্রফেসর ড. কাজী আবদুল ফাত্তাহসহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ‘দেশের তরুণ ও নবীদের বিজ্ঞানমনস্ক করতে এই মেলা বিশেষ অবদান রাখছে বলে আমরা মনে করি। অপ্রতিরোধ্য গতিতে আমরা এগিয়ে চলেছি। বাংলাদেশের গৌরব আজ মহাকাশে স্থান পেয়েছে। সর্বত্র আমরা মাথা উঁচু করে এগিয়ে গিয়েছি।’
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সভাপতি অধ্যপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক এমপি আগত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরাই আগামীর বাংলাদেশ। আমাদের স্থানে ভবিষ্যতে তোমরাই এসে বসবে। আমাদের দেশে মেধার কোনো অভাব নেই। আমি শিক্ষকদের বলব তাদের মেধাকে আরও গুরুত্ব দিতে। আমাদের যে মেধাশক্তি, আমাদের যে যুবশক্তি, তাদের যদি আমরা প্রযুক্তির মধ্যে নিয়ে আসতে পারি, তাহলে আমাদের উন্নতি কেউ ধরে রাখতে পারবে না।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘শুধু বিজ্ঞানমেলা করেই আমরা শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে পারছি না, তাই গত বছর থেকে বিজ্ঞানবিষয়ক কুইজ ও অলিম্পিয়াড শুরু করেছি। আশা করছি, আগামী বছর থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে এই আয়োজনটি করার চেষ্টা করব। আগামী বছর থেকে আমাদের চেষ্টা থাকবে যাতে প্রতি জেলা থেকে অন্তত একজন করে প্রতিযোগী দেশের বাইরে বিভিন্ন বিজ্ঞান আয়োজনে পাঠাতে পারি।’
প্রযুক্তির নতুন আবিষ্কার নিয়ে তিন দিনব্যাপী বিজ্ঞানমেলা শুরু
