শেয়ার বিজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটে গত সপ্তাহে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর রেকর্ড লেনদেন হয়েছে। এমনকি বেশিরভাগ শেয়ারের দাম কমলেও সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। খবর: এপি।
মেটা প্ল্যাটফর্মস ও আমাজনের কারণে ওয়াল স্ট্রিটের বেঞ্চমার্ক সূচক এসঅ্যন্ডপি ৫০০ বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। এতে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে তাদের সূচক। গত ১৪ সপ্তাহের মধ্যে ১৩ সপ্তাহেই টানা উত্থান চলছে এই সূচকের। বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম, যা ওয়াল স্ট্রিটের সূচকের উত্থানে বিশেষ ভূমিকা রাখে, এমন কোম্পানিগুলোর কারণে নাসডাক কম্পোজিট সূচক ১ দশমিক ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে ডাও জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ সূচকে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর প্রভাব নেই। তবু গত সপ্তাহে তাদের সূচক শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ বা ১৩৪ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। ওদিকে ছোট কোম্পানি নিয়ে গঠিত রাসেল ২০০০ সূচক কমেছে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।
সরকারি বন্ডের দাম বৃদ্ধি পাওয়া শেয়ারগুলোর ওপর চাপ পড়ছে। বন্ডের দাম বৃদ্ধির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মী নিয়োগের হার বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। দেশটির শ্রমবাজারে গত মাসে অর্থনীতিবিদদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে।
কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য ফিরে আসার ফলে মন্দার আশঙ্কা দূর হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে এজন্য ফেডারেল রিজার্ভের বা ফেডের নীতি সুদহার কমানোর বিষয়ে বৈঠকের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। নীতি সুদহার কমানো হলে অর্থনীতির ওপর থেকে চাপ কমে আসবে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে গতি বৃদ্ধি পাবে এবং এ কারণে রেকর্ড উচ্চতায় রয়েছে ওয়াল স্ট্রিট। ফেডের প্রধান জেরোম পাওয়েল গত সপ্তাহে বলেছিলেন, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত থাকছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়।
মরগান স্ট্যানলির ই-ট্রেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস লারকিন বলেন, মার্চে নীতি সুদহার নিয়ে যে বৈঠক হবে তাতে সুদহার কমানোর সম্ভাবনা নেই। কেননা শ্রমবাজার শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
শ্রমবাজারের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের হার ৩ দশমিক ৮৮ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ দশমিক ০২ শতাংশ হয়েছে।
সিএমই গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, মার্চের পর মে মাসে ফেড নীতি সুদহার বৃদ্ধির বিষয়ে বৈঠক করতে পারে বলে মনে করা হলেও শ্রমবাজারের প্রতিবেদন প্রকাশের পর ধারণা করা হচ্ছে, জুনের আগে নীতি সুদহার নিয়ে বৈঠক হবে না।
প্রশ্ন উঠেছে, নীতি সুদহারের কারণে পুঁজিবাজারের অবস্থান শক্তিশালী হবে কি না। অ্যনেক্স ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ব্রায়ান জ্যাকবসন বলেন, মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। তবে মূল্যস্ফীতি আরও না কমা পর্যন্ত ফেড পিছু হটবে না বলেই ধরে নেয়া যায়।
গত শুক্রবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা প্ল্যাটফর্মসের শেয়ারের দাম ২০ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সবশেষ প্রান্তিকে প্রত্যাশার তুলনায় বেশি মুনাফা করায় তাদের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বিনিয়োগকারীদের শিগগির লভ্যাংশ দেয়া হবে।
আলোচ্য প্রান্তিকে প্রত্যাশাতীত মুনাফা করায় আমাজনের শেয়ারের দাম ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দুই প্রতিষ্ঠান ওয়াল স্ট্রিটে সুপরিচিত ‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন’-এর সদস্য। সূচকের উত্থানে তাদের বিশেষ অবদান রয়েছে।
ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেনের আরেক সদস্য অ্যাপলের শেয়ারের দাম কমেছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। তবে এই প্রতিষ্ঠানটিও অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে।
চার্টার কমিউনিকেশন্সের শেয়ারের দাম কমেছে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি সর্বশেষ প্রান্তিকে প্রত্যাশার চেয়ে কম মুনাফা করেছে।
এদিকে ইউলিটি স্টকগুলোর শেয়ারের দাম কমেছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। উচ্চ নীতি সুদহারের কারণে এই শেয়ারগুলোর পতন হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে গত সপ্তাহে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে ৫২ দশমিক ৪২ পয়েন্ট যুক্ত হয়ে ৪ হাজার ৯৫৮ দশমিক ৬১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
