নিজস্ব প্রতিবেদক: গতানুগতিক প্রশিক্ষণ না দিয়ে লাগসই-জুতসই প্রশিক্ষণ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন জনশক্তি কর্মসংস্থান এবং প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম। তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ কার দরকার, কী সহযোগিতার দরকার, সেটা বিবেচনায় নিতে হবে। কারিগরিতে যেসব ট্রেড এখনও শেখানো হয়, সেগুলোরও কদর কমে গেছে। নতুন নতুন ট্রেড কোর্স চালু করতে হবে। কারণ লাগসই-জুতসই প্রশিক্ষণই জীবন বদলে দিতে পারে।’ গতকাল বনানীতে এক সেমিনারে তিনি এসব কথা জানান। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ভলান্টারি সার্ভিস ওভারসিজ (ভিএসও) এই আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম আরও বলেন, ‘বেকারত্ব দূর করার জন্য আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য সরকার কাজ করছে। আমাদের সবার উচিত বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া।’ তিনি জানান, গত ৯ মাসে সাত লাখ লোক বিদেশে পাঠিয়েছে বিএমইটি। কুমিল্লা জেলা থেকে প্রতি বছর ৬৫ হাজার জনশক্তি বিদেশে যান। তিনি জানান, যেসব অঞ্চলের জনশক্তি প্রবাসে কম যাচ্ছে, বেসরকারি সংস্থাগুলো যেন সেসব অঞ্চলে বেশি করে কাজ করে।
সেমিনারে জানানো হয়, ২০১৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে যুবকদের কর্মসংস্থান প্রকল্প শুরু করে ভিএসও। উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয়ভাবে সম্ভাবনাময় পেশার জন্য দক্ষ জনসম্পদ এবং মর্যাদাসম্পন্ন কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্থানীয় এলাকায় যুবদের কর্মসংস্থানে উৎসাহিত করা। এছাড়া গ্রাম থেকে শহরমুখী প্রবণতা কমানো। ফলে জেলা ও বিভাগীয় শহরে প্রকল্পের আওতাধীন ৯৮ শতাংশ যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে।
সেমিনারে আরও জানানো হয়, ২০১৬ সালে শুরু হওয়া যুব কর্মসংস্থান প্রকল্পের আওতায় যুববান্ধব এবং স্থানীয়ভাবে পেশা নিশ্চিত করতে একটি শ্রমবাজার-বিষয়ক গবেষণা করা হয়। গবেষণাটি ২০১৮ সালে একজন ডাচ গবেষক রংপুর বিভাগে পরিচালনা করেন।
ভিএসও জানায়, প্রকল্পের আওতায় ৮৬টি যুব সংগঠন তৈরি করা হয়েছে, যাতে ৪৪ শতাংশ নারী সদস্য রয়েছে। ৭০টি যুব সংগঠনকে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিবন্ধন দিয়েছে। এর মধ্যে ১৮-৩৫ বছরের তিন হাজার ১৭৪ স্থানীয় যুবক যুব সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
আরও জানানো হয়, প্রকল্পের আওতায় যারা কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মর্যাদাসম্পন্ন কর্মসংস্থানে আগ্রহী তাদের নির্বাচিত করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে তৈরি করা হয়েছে, যারা পেশার মাধ্যমে নিজ বাড়ির কাছে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পেরেছেন।
১২টি বিষয়ে ৬৪৭ যুবক কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এর মধ্যে ৯৩ শতাংশ কারিগরি প্রশিক্ষণ সরকারের বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট বিভাগ দিয়েছে। ৭৬ জন যুবক সফলভাবে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা সনদ অর্জন করেছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকেরা ব্যবসা শুরুর পুঁজি পেয়ে অন্যদেরও উৎসাহিত করছে। ৬০৮ যুবক মর্যাদাসম্পন্ন কর্মসংস্থানে সম্পৃক্ত, যার মধ্যে ৪৫ শতাংশই নারী এবং যাদের জনপ্রতি মাসিক গড় আয় আট হাজার চার টাকা।
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন কোইকার কান্ট্রি ডিরেক্টর ডো-ইয়ংআ, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বাংলাদেশের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফিসার সাইফ মোহম্মদ মইনুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভিএসও’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান। সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন ভিএসও’র ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মো. খাবিরুল হক কামাল।