প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে নিন কার্যকর পদক্ষেপ

 

সম্প্রতি দেশে পাবলিক পরীক্ষা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী থেকে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়েছে। প্রথমদিকে বিষয়টি অস্বীকার করলেও অতিসম্প্রতি তা স্বীকার করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শেয়ার বিজসহ একাধিক দৈনিকে গতকাল প্রকাশিত সংবাদে আমরা দেখতে পাই, দুদকের এক মানববন্ধনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য দায়ী করেছেন কিছু শিক্ষকের অসততাকে। তিনি বলেছেন, নিয়মানুসারে পরীক্ষার দিন সকালে শিক্ষকদের হাতে প্রশ্ন পৌঁছানোর পর তার ছবি তুলে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে কিছু বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষার আগের রাতেও ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনার পরও পরীক্ষা বাতিল করা হয়নি।

বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটাই পরীক্ষানির্ভর। কিছু অভিভাবক যে কোনো উপায়ে সন্তানের ভালো ফল দেখতে চান। আর একশ্রেণির শিক্ষকসহ অনেকেই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের আড়ালে দেশে গড়ে উঠেছে প্রশ্ন ফাঁসের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। তাদের গ্রাহক মূলত সেই উচ্চাকাক্সক্ষী অভিভাবকরা। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পরীক্ষার ঠিক আগমুহূর্তে ইন্টারনেটে ঢাকা থেকে সরাসরি কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠালে তা ফাঁস হতো না। কিন্তু দেশব্যাপী সব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের সুযোগ নাও থাকতে পারে। সেটি নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুরো বিষয়টি দেখভালের জন্য সব কেন্দ্রে প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ ও বিশ্বস্ত কর্মকর্তা প্রয়োজন।

অভিভাবক, শিক্ষক ও কোচিং ব্যবসায়ীদের মধ্যে দুর্বৃত্তায়ন ঘটলে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা সত্যি কঠিন। শিক্ষামন্ত্রী পর্যন্ত আক্ষেপ করে বলেছেন, তারা এমন পরিবেশে রয়েছেন, যেখানে সবকিছু খুলে বলাও যায় না; সহ্যও করা যায় না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত কেন এতটা অসহায়, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। গত দশকে একজন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পাবলিক পরীক্ষায় নকল প্রতিরোধে অনেকাংশে সক্ষম হয়েছিলেন। এখনও সে ধারা মোটামুটি অব্যাহত থাকলেও প্রশ্নপত্র ফাঁস বলা যায় মহামারী আকার ধারণ করেছে। এ কারণে ভালো ফল নিয়ে বেরিয়েও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পাস পর্যন্ত করতে পারছে না। পরীক্ষার সময় কেন্দ্রীয়ভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রাখার কথাও চিন্তা করেছিল সরকার। কিন্তু সেটি গ্রহণযোগ্য ও স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। শিক্ষা কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর তৎপরতার পাশাপাশি সচেতন হতে হবে জনগণকেও। ফাঁস করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফল লাভ করলেও ভবিষ্যতে যে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়, তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত। মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির বিষয়ে যে ‘জিরো টলারেন্সে’র কথা মন্ত্রী বলেছেন, তার প্রয়োগ ঘটাতে হবে পরীক্ষা কেন্দ্রেও। পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা আশা করবো, পুরো বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এবং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার প্রশ্ন ফাঁস রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০