প্রশ্ন ফাঁস তদন্তে হাইকোর্টের কমিটি গঠন

নিজস্ব প্রতিবেদক  : এসএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সমাধান খুঁজতে বুয়েটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রশাসনিক কমিটি এবং প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তদন্তে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের বিচারিক কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

গতকাল একটি রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই আদেশ দেন। পাশাপাশি প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন আদালত। আদালতের লিখিত আদেশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে কমিটি গঠন এবং পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–য়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিচারিক তদন্ত কমিটির কাজ হচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কারা জড়িত, কীভাবে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, কোন কোন মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে, তা খুঁজে বের করা এবং এর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা থাকলে এর শাস্তি কী হওয়া উচিত, তা নির্ধারণ করা।’

ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে এই কমিটিতে থাকবেন নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন করে উপ-সচিব।

ব্যারিস্টার বড়–য়া আরও বলেন, ‘প্রশাসনিক কমিটির কাজ হচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁস প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় এবং ভবিষ্যতে কোনো পাবলিক পরীক্ষায় যেন এ ঘটনা আর না ঘটে, এর কী কী সমাধান আছে, সেগুলো নির্ধারণ করা।’

ড. কায়কোবাদের নেতৃত্বে এই কমিটিতে থাকবেন বুয়েটের অধ্যাপক সোহেল রহমান, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, কম্পিউটার সোসাইটির একজন বিশেষজ্ঞ এবং সিআইডির ডিআইজি পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।

আদেশের কপি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে কমিটিকে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে বলে জানান ব্যারিস্টার বড়ুয়া। কমিটি দুটিকে সময় দেওয়া হয়েছে ৩০ দিন।

চলতি এসএসসি পরীক্ষা বাতিল করে নতুন প্রশ্নপত্র দিয়ে আবার পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিচারিক ও প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠন এবং প্রশ্ন ফাঁসের অপরাধ দমনে আইন প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদনটি করা হয়েছিল।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রশ্ন ফাঁসের বিভিন্ন প্রতিবেদন যুক্ত করে আদালতে গত বুধবার আবেদনটি করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, সিকদার মাহমুদুর রাজি, মো. রাজু মিয়া ও নূর মোহাম্মদ আজমী।

রুলের জবাব দুই সপ্তাহের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব, আইন সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং উইংয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্যপ্রযুক্তি সচিব, বিটিআরসি’র সচিব-চেয়ারম্যান, বিটিসিএল প্রধান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক-চেয়ারম্যান, ঢাকা-রাজশাহী, কুমিল্লা-যশোর, চট্টগ্রাম, বরিশাল-সিলেট এবং দিনাজপুর উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং পুলিশের মহাপরিদর্শককে।

এদিকে বর্তমান প্রশ্ন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়া স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন।

নানা চেষ্টার পরও প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে না পারায় অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন।

এসএসসির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধে ব্যর্থতা কেন অবৈধ হবে না, হাইকোর্টের এই রুল জারির পর তার বক্তব্যÑবর্তমান পদ্ধতিতে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভবপর নয়।

সবার মতামত নিয়ে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে বলে জানালেও চলতি এসএসসির পর এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হবে না, তেমন নিশ্চয়তাও দিতে পারেননি সচিব।

গতকাল সচিবালয়ে সোহরাব সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন ফাঁস রোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের নতুন এমন কোনো প্রক্রিয়া, এমন কোনো পদ্ধতিতে যেতে হবে, যেখানে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগ থাকবে না।’

হাইকোর্টের রুলের বিষয়ে সচিব সোহরাব বলেন, ‘আদালত যে আদেশ দেবেন আমরা অবশ্যই পরিপূর্ণভাবে প্রতিপালন করব। আমাদের কোনো নিষ্ক্রিয়তা থাকলে সে বিষয়ে আমাদের বক্তব্য অবশ্যই আদালতের কাছে উপস্থাপন করব।’

প্রশ্নপত্র ফাঁস প্রসঙ্গে গত বুধবার তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে পরীক্ষা পদ্ধতি, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও শিক্ষার্থী মূল্যায়নে পরিবর্তন আনতে হবে। এছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে আমরা যে পরীক্ষা গ্রহণ করি, প্রশ্ন তৈরি করি ও প্রশ্ন তৈরি করা থেকে যে প্রক্রিয়ায় প্রশ্নটি পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছায়, এ প্রক্রিয়াটি দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই পরিচালিত হয়ে আসছে। এতে এত মানুষ যুক্ত যে, পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা দেওয়া যে কারও জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ। এটা সত্যি সত্যিই দুরূহ। চার-পাঁচজন মানুষ থাকলে যে নিরাপত্তা দেওয়া সহজ, বেশি মানুষ থাকলে সেটা সহজ নয়।’

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০