Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 7:24 pm

প্রশ্ন ফাঁস নতুন কিছু নয়: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক : প্রশ্ন ফাঁস নতুন কিছু নয়। কখনও প্রচার হয়, কখনও হয় না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোম সফর শেষে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী চালের দর বৃদ্ধি, খালেদা জিয়ার মামলার রায়, রোহিঙ্গা প্রসঙ্গসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন গণমাধ্যমের সঙ্গে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের পর এ প্রথম তিনি গণমাধ্যমের সামনে কথা বলেন। সূত্র: বিডিনিউজ।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন ফাঁস প্রসঙ্গে মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘মন্ত্রী কী নিজে প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে গেছেন; নাকি সচিব গেছেন? কে প্রশ্ন ফাঁস করেছে খুঁজে দিন, আমরা শাস্তি দেব। কোনোদিকে দোষ না পেয়ে একটা নিয়ে খোঁচাখুঁচি করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চানÑপ্রশ্নগুলো কতদিন আগে ফাঁস হয়েছে? ২০ মিনিট আগে প্রশ্ন ফাঁস হলে আপনি কি করবেন? তিনি বলেন, আর আমাদের এখানে এত বেশি ট্যালেন্টেড কে আছে যে, আধঘণ্টা আগে, ২০ মিনিট আগে ওই প্রশ্ন অনুযায়ী বই খুলে উত্তর মুখস্থ করে খাতায় লিখবে।

তিনি আরও বলেন, এখন সবার হাতে ফোন, কেউ ছবি তুলে দিতে পারে। তাহলে বলুন ‘টিক’ মার্কটা (নৈর্ব্যক্তিক) বন্ধ করে দেব, আপনারা লিখুন, আমরা বন্ধ করে দেব।

খালেদা জিয়ার রায় ও কারাদণ্ড প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দুই বোন, আমাদের একটি মাত্র বাড়ি। আমার বাবা সারা জীবন জনগণের জন্য কাজ করেছেন; ওই বাড়িটি তাই জনগণের জন্য দিয়ে দিয়েছি। আমরা ট্রাস্ট করে ১৭০০-১৮০০ জনকে সহায়তা করি। আমরা এটা নিয়ে খুব একটা প্রচারও করি না।

শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আমাকে শ্যাওলা ধরা একটি ভবনে রাখা হয়েছিল, খাট ছিল ভাঙা। তাকে (খালেদা জিয়া) রাখা হয়েছিল স্পিকারের বাড়িতে। তার সঙ্গে এই ফাতেমাকেও দেওয়া হয়েছিল। এটা গোপন ছিল। ডিআইজি হায়দার (সামছুল হায়দার সিদ্দিকী) সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। আদালত দিয়েছেন। বেশি কিছু তো দেওয়ার নেই, একজন মেইড সার্ভেন্ট দিয়েছে। যদি আরও কিছু ডিমান্ড করে! এ ছাড়া খালেদা জিয়ার রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কোনো টেলিফোন পাননি বলেও জানান  শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানে যেভাবে আছে, যারা জনগণের ওপর বিশ্বাস করে, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। বিএনপি গায়ের জোরে বলতে পারে নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। কারণ তাদের জš§ই হয়েছিল গায়ের জোরে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছিল দুদক। আর আদালত রায় দিয়েছেন। সেখানে সরকারের কিছু করার নেই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষেত্রবিশেষে, ব্যক্তিবিশেষে দুর্নীতি করলে কোনো কথা হয় না। আদালত রায় দিয়েছেন। আদালতের রায়ের আগে বিএনপি নির্বাচন কমিশনে গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের জন্য জমা দিয়েছে। তারা যখন একেকজনকে নিয়োগ করে, তখন দেখবেন গঠনতন্ত্রের ধার ধারে না। যাকে যখন খুশি পদ দিয়ে যাচ্ছে। যিনি চেয়ারপারসন, তার হাতে সব ক্ষমতা। যেটি আমার হাতে নেই। আওয়ামী লীগে প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং পরে কাউন্সিলে এ জাতীয় বিষয় পাস হয়। এ ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপিতে কী একজন নেতাও নেই যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা যেত? যিনি মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়ে গেলেন, তাকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হলো। যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে এফবিআই তদন্ত করে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছিল। তাকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন করা হলো। বিএনপিতে এখন খুব কর্মঠ নেতা দেখা যাচ্ছে, তাদের মধ্যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত করা গেল না কেন? বিএনপি চেয়ারপারসনের কী দলের কারও ওপর ভরসা নেই, যাকে দায়িত্ব দিয়ে যাওয়া যায়? যারা কাজ করছেন, তারা কি এ পদ পাওয়ার যোগ্য নন?

বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে মামলার রায় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মামলা যখন শুরু হয়, তখন রফিকুল হক সাহেব তার আইনজীবী ছিলেন। তখন রফিকুল হক বলেছিলেন, টাকা দিয়ে দিন, তাহলে আর মামলা থাকে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ টাকা এসেছিল এতিমদের জন্য। সেই টাকা এতিমরা আর চোখে দেখেনি। কত হাত ঘুরে ওই টাকা তার কাছে চলে আসে। কোরআনেও শাস্তির কথা বলা আছে। এতিমের টাকা খেলে আদালত শাস্তি দেন, আল্লাহও শাস্তি দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায় তো আমি দিইনি, রায় দিয়েছেন আদালত। তাদের নিজেদের লোকেরাই তো মামলা দিয়েছেন। সেখানে মামলা করেছে দুদক। ১০ বছর এ মামলা চলেছে। যার কার্যদিবস প্রায় ২৬১ দিন। সেখানে ৮০ বারের বেশি হাই-আপিল বিভাগে রিট করে সময় নেওয়া হয়েছে। তিনবার আদালত পরিবর্তন করা হয়েছে। সময় চাওয়া হয়েছে ১০৯ বার।

অপকর্ম না করলে ৩২ ধারা নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই: ৫৭ ধারা বাদ দিয়ে নতুন ডিজিটাল আইন হয়েছে; এ আইনটি গণমাধ্যমকর্মীদের ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগ হবে না বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, সাইবার ক্রাইম একটি বিরাট সমস্যা। এ দেশসহ সারা বিশ্বে এ সমস্যা আছে। আপনাদের এত ভয় কেন? কেউ যদি এমন অপরাধ করেন, তাহলে তার ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা হবে। ফৌজদারি আইন (সিআরপিসি) অনুযায়ী কেউ অপকর্ম না করলে সেখানে অপপ্রয়োগ কেন হবে। প্রযুক্তি যেমন সুযোগ করে দেয়, মাঝেমধ্যে দুঃসহ যন্ত্রণাও দেয়।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার নানা টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা আট হাজার নিতে বলেছে এখন, আমরা বলছি আট হাজার আগে নিক, তারপর দেখব এদের সঙ্গে কী ব্যবহার করা হয়। নেওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য ভাসানচরে ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। প্রথমে এক লাখ মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।