Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:02 am

প্রসাধনপণ্যে শুল্ক ছাড়ের সুবিধা পাচ্ছে না ভোক্তা

নাজমুল হুসাইন: গত বছরের নভেম্বরে আমদানি পর্যায়ে অধিকাংশ প্রসাধনীর ওপর শুল্ক ছাড় দেয় সরকার। এতে কমেছে এসব পণ্যের আমদানি খরচ। কিন্তু দাম কমার সুবিধা পাচ্ছেন না ভোক্তারা। গত তিন মাস ধরে কম শুল্কে আমদানি করলেও ভোক্তা পর্যায়ে দাম কমায়নি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এর মাধ্যমে তারা অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নিচ্ছে। জনস্বার্থে শুল্ক ছাড় দেওয়া হলেও বঞ্চিত হচ্ছে ভোক্তারা।

গত বছরের ২ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এক প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সর্বনি¤œ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত ১ নভেম্বর আরেকটি গেজেটে তা সংশোধন করা হয়। এতে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি শুল্কহার না কমালেও আমদানি মূল্য কমিয়ে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের ওই সংশোধিত গেজেটে আমদানি মূল্য কমানোর তালিকায় প্রসাধনী পণ্যের পরিমাণ ছিল সর্বোচ্চ। এছাড়াও কয়েক ধরনের শিশুখাদ্য, বাচ্চাদের খেলনা, বেকারি, ইলেকট্রনিকস পণ্যসহ খাদ্য ও গৃহস্থালি পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছিল। মূল্য বাড়ানো হয়েছিল দু-একটি পণ্যের।

প্রজ্ঞাপনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নারীদের মুখ, ত্বক ও শরীরে ব্যবহƒত ক্রিম, মেকআপ কিট ও ফাউন্ডেশনের ওপর শুল্কায়নের ক্ষেত্রেও আমদানি মূল্য কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে এশিয়ার মধ্যে কোনো দেশ থেকে এখন এসব পণ্য পাঁচ ডলার এবং এশিয়ার বাইরের কোনো দেশ থেকে আমদানিতে আট ডলার মূল্য ধরে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। যদিও আগে এশিয়ার মধ্যের দেশ থেকে আমদানিতে ছয় ডলার ও এশিয়ার বাইরের থেকে আমদানিতে ১০ ডলার ধরে শুল্কায়ন করা হতো। একইভাবে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনারের আমদানির ক্ষেত্রে এশিয়ার দেশগুলোর সাড়ে তিন থেকে কমিয়ে তিন ডলার এবং অন্যান্য অঞ্চলের ক্ষেত্রে পাঁচ ডলারের পরিবর্তে চার ডলার করা হয়েছে।

আইশ্যাডো, আইলাইনার, আই ভ্রু পেন্সিল ও মাশকারা এশিয়ার দেশগুলো থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ছয় ডলার পরিবর্তে চার ডলার এবং এশিয়ার বাইরের ১০ ডলারের পরিবর্তে সাত ডলার করা হয়েছে। এছাড়া সুগন্ধি ও টয়লেট্রিজের প্রতি কেজির মূল্য এশিয়ার মধ্যে ছয় ডলার ছিল, যা এখন পাঁচ ডলার। এশিয়ার বাইরে ১০ ডলারের পরিবর্তে হয়েছে আট ডলার। ডিওডোরেন্টস (রোল অন, বডি স্প্রে) তিন থেকে কমিয়ে আড়াই ডলার এবং অন্যান্য দেশের বেলায় ছয় ডলার থেকে কমিয়ে চার ডলার করা হয়েছে। এভাবে আরও অনেক প্রসাধন পণ্যে আমদানি মূল্য কমিয়ে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু দেশের বাজারে এসব প্রসাধন পণ্যের দাম কমানো হয়নি। বিভিন্ন মার্কেট ও সুপারশপগুলোতে ওসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। যদিও তিন মাসের বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ায় এখন দেশের বাজারগুলোর শুল্ক ছাড়ের পরে আমদানি করা পণ্য বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারাও এসব পণ্য আমদানিকারকদের থেকে আগের দামেই কিনছেন বলে জানা গেছে। ফলে সুবিধা পাচ্ছে শুধু আমদানিকারক কোম্পানিগুলো।

এ বিষয়ে একাধিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ কসমেটিকস অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জাহাঙ্গীর আলম শেয়ার বিজকে বলেন, যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা খুবই নগণ্য। এসব পণ্যের চাহিদাও কম। এতে বাজারে তেমন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। আর আমদানিকারকদের পণ্য আনা-নেওয়ার খরচ প্রতি নিয়তই বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন পণ্যের আমদানির ওপর সরাসরি শুল্ক ছাড়ের দাবি করেছিলাম। তাতে পণ্যের দাম অনেক কমানো যেত। কিন্তু তা না করে শুধু আইওয়াশের মতো একটি ছাড় দেওয়া হয়েছে।

বাজারের ব্যবসায়ীরা সুবিধা পাচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে গুলশান শপিং সেন্টারের পাইকারি প্রসাধনী বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘অনন্যা’-এর স্বত্বাধিকারী আবুল হামিদ বলেন, শুল্ক ছাড়ের কথা আমরা শুধু শুনেছি। কিন্তু আমদানিকারকরা কোনো পণ্যেই সেই সুবিধা দেননি। উল্টো বাজারে দাম বাড়ছে।

শুধু নারীর এসব প্রসাধনীই নয়, ২ জুন জারি করা প্রজ্ঞাপনে এয়ারফ্রেশনার ও কার এয়ার ফ্রেশনারের দামও কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে। কমেছে মশার কয়েল ও অ্যারোসল, প্রাকৃতিক মধু, ফারমেন্টেড নয় এমন ব্র্যান্ডেড সবুজ চা (গ্রিন টি), বাল্ক আকারে আমদানি করা অন্যান্য সবুজ চা, ফলের জুস, সবজির জুস কিংবা বিভিন্ন ফল ও সবজির মিক্স জুস, সয়া সস, টমেটো ক্যাচাপ, এনার্জি ড্রিংক, একইভাবে ওভালটিন, হরলিকস, কমপ্ল্যান, বাচ্চাদের স্কুল ব্যাগ, ট্রলি স্কুল ব্যাগ, ব্যাটারিচালিত খেলনা, হালকা নাশতা, শিশুদের খাদ্যপণ্যের শুল্ক; যা বাজারে আগের দরেই বিক্রি হচ্ছে।

অপরদিকে আমদানি মূল্য বেড়েছে কয়েকটি পণ্যের। আগে যে কোনো ধরনের তাস আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের (প্যাকেট) মূল্য ২০ সেন্ট ধরে শুল্কায়ন হতো। এখন তা ২৫ সেন্ট করা হয়েছে। এছাড়া পুরুষের ব্যবহৃত প্রি-সেইভ জেল ও ফোম আমদানিতে প্রতি কেজির আমদানি মূল্য নির্ধারণ করা ছিল এশিয়ার দেশগুলোর ক্ষেত্রে তিন ডলার, যা এখন ব্র্যান্ডেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ছয় ডলার এবং নন-ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে চার ডলার।