পলাশ শরিফ: ‘কিউট’ বাংলাদেশের মানুষের কাছে পরিচিত একটি নাম। কিউট মানে সাবান, স্নো, সুগন্ধি প্রভৃতি। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে প্রসাধনের বাজারে কেবল দেশি পণ্যেরই প্রাধান্য ছিল। গ্রামবাংলায় এককালে খুব বেশি দোকান ছিল না। তখন লেইস-ফিতাওয়ালা বা ফেরিওয়ালার কাঁধে ঝুলে অন্যসব দেশি প্রসাধন পণ্যের সঙ্গে ‘কিউট’ পৌঁছে যেতো গ্রাম থেকে গ্রামে।
দিন বদলেছে, সময় এখন মুক্তবাজার অর্থনীতির। বিদেশি পণ্য অবাধে দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশের প্রসাধন বাজারও। বাহারি রঙচঙে মোড়ক, বিজ্ঞাপন আর বিদেশি চটকের কাছে ম্রিয়মাণ হয়ে পড়েছে দেশি পণ্য। বাজার হারাচ্ছে গুণগত মানসম্পন্ন এসব পণ্য। তবে অতীতের মতো আজও গুণগতমান ও স্বকীয়তার ওপর ভর করে টিকে আছে কিউট। শুধু ‘টিকে আছে’ বললে বরং কম বলা হয়। বলা চলে দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করছে। কারণ কিউট না বলে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম বললে ‘একনামে’ প্রতিষ্ঠানটিকে চেনা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পড়বে। এখানে পণ্যের সুনামের কাছে খোদ উৎপাদক প্রতিষ্ঠানই অনেকটা ‘ম্রিয়মাণ’।
কিউটের শুরু আর সাফল্যের গল্প জানতে আমাদের একটু পেছনে ফিরে যেতে হবে। আজকের স্বনামখ্যাত ‘কিউট’ পণ্যের জন্ম শিল্পপতি কাজী মাহ্তাব উদ্দিন আহমদের হাত ধরে। তিনি ১৯৪৬ সালের ১ নভেম্বর পুরান ঢাকার চকবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা কাজী আবদুল ওয়াহেদ ছিলেন কাপড় ব্যবসায়ী। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে বড় কাজী মাহ্তাব। আগুনে পুড়ে বাবার ব্যবসায় বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছিল। এ কারণে পড়াশোনা শেষ করার আগেই জীবিকার সন্ধানে নামেন তিনি। জীবনযাপনের প্রয়োজনে বই ফেরি করা থেকে ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকতাসহ অনেক কাজ করেছেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতক শেষ করে ১৯৭৩ সালে তাবানি বেভারেজে যোগ দেন।
চাকরির পাশাপাশি ছোট ভাই কাজী আশরাফকে সঙ্গে নিয়ে প্রসাধন ব্যবসা শুরু করেন। তার সেই প্রচেষ্টা ১৯৮২ সালে মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজের পথচলার মধ্য দিয়ে প্রাণ পায়। সে সময় তথ্য-প্রযুক্তি, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ও জনবলসহ বেশকিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যে কিউটের যাত্রা শুরু হয়। উদ্ভাবনী কর্মকৌশল আর উন্নত মানের কারণে অল্প সময়ের মধ্যে প্রসাধনসামগ্রী জগতে আস্থার নাম হয়ে ওঠে ‘কিউট’।
আশির দশকে দেশের বিপণন ব্যবস্থায় ‘ব্র্যান্ডিং’ বিষয়টি অনেকটাই উপেক্ষিত ছিল। অনেকেরই এ বিষয়ে তেমন আগ্রহ কিংবা ধারণা ছিল না। তবে সফল ব্যবসায়ী কাজী মাহ্তাব উদ্দিন এক্ষেত্রে দূরদর্শিতার পরিচয় দেন। তিনি ব্যবসা প্রসারে ব্র্যান্ডিংয়ের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। সে বিবেচনায় উৎপাদিত প্রসাধন পণ্যের নাম দেন ‘কিউট’।
কিউটের নতুন পণ্যকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য প্রচারের ক্ষেত্রে অভিনব কৌশল বেছে নেওয়া হয়। যেমন জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি সচেতনতামূলক বিলবোর্ড-বিজ্ঞাপন দেওয়ার প্রচলনও শুরু করে এ প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে দেশজুড়ে শক্তিশালী একটি বিপণন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। এমন নতুন নতুন চিন্তাধারার কারণে প্রতিষ্ঠার ৩৫ বছর পরও ‘কিউট’ শক্ত ভিতের ওপর সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে।
‘কিউট’ ব্র্যান্ডের প্রসাধন পণ্য নিয়ে বাণিজ্যমেলায় অংশ নিয়েছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজ। মেলার ৩০ নম্বর প্যাভিলিয়নে কিউটের প্রসাধন পণ্যের সঙ্গে রয়েছে নানা উপহারসামগ্রী। মেলাকে কেন্দ্র করে নতুন সৌন্দর্য সাবান বাজারজাত করছে ‘কিউট’।
এছাড়া রয়েছে কিউট শ্যাম্পু, আফটার শেভ লোশন, শেভিং ক্রিম, পারফিউম, আতর, হারবাল হেয়ার টনিক, তেল, টুথপেস্ট, ট্যালকম পাউডার, নেলপলিশ, ভ্যানিশিং ক্রিম, বডিলোশন, সানস্ক্রিন লোশন, বেবি অয়েল, বেবি লোশন ও বেবি শ্যাম্পুসহ নানা পণ্য।
Add Comment