চঞ্চল রহমান: শঙ্কার মেঘ উড়ে গেছে দিন কয়েক আগেই। নির্ধারিত সময়েই বাংলাদেশে আসছে অস্ট্রেলিয়া। যদিও শুরুর দিকে এ সিরিজ নিয়ে ছিল চরম অনিশ্চয়তা। তারপরও অনেক দিন পর ঘরের মাঠে নামার অপেক্ষায় ছিল টাইগাররা। তাই তো বেশ আগেই অজি বধের প্রস্তুতি শুরু করে লাল-সবুজরা। তাতে কোনো ঘাটতি রাখছেন না মুশফিকুর রহিমরা। যে কারণে মিরপুর পর্ব শেষে হাথুরুসিংহের শিষ্যরা অনুশীলনে ব্যস্ত চট্টগ্রামে। মূলত বন্দরনগরীর আবহাওয়া ও কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতেই সেখানে গেছেন তারা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের ভেন–্য চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। যে কারণে বন্দরনগরীতে নিজেদের ঘাঁটি গেড়েছেন মুশফিকরা। যদিও মাশরাফি ছাড়াও এ ক্যাম্পে নেই সিপিএল (ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজে যাওয়া সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। এদিকে ডেঙ্গ জ্বর থেকে সেরে ওঠা এনামুল হক বিজয়কেও রাখা হয়নি স্কোয়াডে। নেই আবুল হাসান, মুক্তার আলী এবং মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। যে কারণে চট্টগ্রাম ক্যাম্পে সুযোগ পেয়েছেন নাজমুল হোসেন ও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের দুই অফ স্পিনার সানজিত সাহা এবং নাঈম হাসান। প্রথম দিন চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অধীনে চট্টলায় কঠোর অনুশীলন করেন সাব্বির-সৌম্যরা। প্রধান কোচ ছাড়াও হাই পারফরম্যান্সের (এইচপি) কোচ মিজানুর রহমান ও সোহেল ইসলাম ব্যাটিং-বোলিংয়ে জাতীয় দলের দেখভাল করছেন।
চট্টগ্রাম পর্বে বোলারদের দীক্ষা দিচ্ছেন কোর্টনি ওয়ালশ। তার অধীনে রিভার্স সুইংয়ে মনোযোগী ছাত্র তাসকিন আহমেদ-মোস্তাফিজুর রহমানরা। মূলত অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের ঘরের মাঠে কাবু করতেই নতুন অস্ত্র শিখছেন তারা। এছাড়া আলাদা করে কিছু টেকনিক শেখাচ্ছেন বোলিং কোচ। এ নিয়ে তাসকিন বলেন, ‘এ কন্ডিশনে রিভার্স সুইং একটা অস্ত্র হতে পারে। আমরা সেটা নিয়ে কাজ করছি। শিখতে চেষ্টা করছি কীভাবে বল রিভার্স করানো যায়। সবাই চেষ্টা করছি, কীভাবে আরও ধারাবাহিকভাবে নিখুঁত লাইনে বল করা যায়। এখানে উইকেট তেমন একটা পেস সহায়ক হবে না। অনেক ধৈর্য ধরতে হবে। পুরোনো বলের কারুকাজ বাড়াতে হবে আমাদের।’
নিবিড় অনুশীলনের জন্য চট্টগ্রামের উইকেটে বসানো হয়েছে গ্রানাইটের সøাব, সেখানে বল ফেলা হচ্ছে তুমুল গতিতে। লাফিয়ে বল ছুটে আসছে ব্যাটসম্যানের বুক-ঘাড় বরাবর। পুল-হুকের পাশপাশি শর্ট বলের ডিফেন্স আর ছেড়ে দেওয়ার অনুশীলন চলছেই। মূলত অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলারদের ভাবনা মাথায় রেখেই এ অনুশীলন। আগেও দেখা গেছে, এ দেশের উইকেটেও শর্ট বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাবু করেন প্রতিপক্ষ ফাস্ট বোলাররা।
গত দুদিনের মতো আজও বন্দরনগরীতে অনুশীলন করবে লাল-সবুজরা। একদিন বিশ্রামের পর বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার প্রস্তুতি ম্যাচ। মূল সিরিজের আগেই ক্রিকেটাররা অবশ্য নিজেদের পরখ করার সুযোগ পাচ্ছেন।
এর আগে অস্ট্রেলিয়া সফরের প্রস্তুতি টাইগারদের শুরু হয়েছিল ১০ জুলাই। প্রথম ধাপে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ছাড়াই ১৮ দিন ফিটনেস ট্রেনিং করেন মুশফিকরা। এ সময় ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ণ দৃষ্টি রাখেন সবার ওপর। এর মধ্যে ক্রিকেটাররা যে যার মতো করে ব্যাটিং-বোলিংটা ঝালিয়ে নিতেন, যা কাজে দিয়েছে সবার। টাইগারদের ফিটনেস ক্যাম্প দেখে সন্তুষ্ট মারিও। তিনি আশা করেন আসন্ন সিরিজে এ ক্যাম্প অনেক উপকারে আসবে।
ঘরের মাঠে বাংলাদেশ শেষ টেস্ট খেলেছিল গত বছরের শেষ দিকে। প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। মিরপুরে সিরিজের শেষ টেস্টে ইংলিশদের হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল টাইগাররা। ঠিক সেখান থেকেই এবার শুরু করতে চায় মুশফিকরা। যে কারণে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে অনুশীলনে সিরিয়াস হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। সবাই চান হোম কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে অজিদের হারাতে। এ বিশ্বাস নিয়েই মাঠের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে লাল-সবুজের সেনানিরা। ২ টেস্টের সিরিজ খেলতে আগামী ১৮ আগস্ট ঢাকায় আসার কথা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের। প্রথম টেস্ট শুরু মিরপুরের শের-ই-বাংলায় ২৭ আগস্ট। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।
Add Comment