নিজস্ব প্রতিবেদক: অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার সহ-উদ্ভাবক সারাহ গিলবার্ট বলেছেন, মহামারির আশঙ্কা সবসময় থাকে। আমাদের নিজেদের যথাযথ প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে যখনই মহামারি আসুক, তখন আমরা করোনার থেকেও ভালো রেসপন্স করতে পারি। আমরা যদি একটি ছড়িয়ে পড়া রোগ মহামারি হওয়া থেকে আটকে দিতে পারি, তাহলে অনেক অর্থ সাশ্রয় করা যাবে। আর তাতে বিশ্ব অর্থনীতি লাভবান হবে।
গতকাল শনিবার ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় দিনে আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেশনে তিনি একথা বলেন। সেশনটি পরিচালনা করেন ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক ও প্রযোজক সাদাফ সায্।
দর্শকদের প্রশ্নের জবাবে সারাহ বলেন, ‘নতুন ভেরিয়েন্টের ক্ষেত্রে টিকা খুব ভালো কাজ করছে। ডিএনএ ও আরএনএভিত্তিক ভ্যাকসিনের তাপমাত্রার তারতম্য হয়। ডিএনএ জীবনের মতো স্থায়িত্ব আছে কিন্তু আরএনএ’র অস্তিত্ব একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তাই তার প্রোটিন উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে অনেক নি¤œ তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। ডিএনএভিত্তিক ভ্যাকসিন অ্যাস্ট্রাজেনেকা, তাই এমআরএনএ ভ্যাকসিনের থেকে বেশি তাপমাত্রায় তা ভালো থাকে। সুতরাং আরএনএ দিয়ে টিকা তৈরি করলে সেটিকে স্থিতিশীল রাখতে হলে কম তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়।’
তিনি বলেন, ‘ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে আসল ভ্যাকসিনটি এখনও বেশ ভালো কাজ করছে। যখন নতুন একটি ডোজ আপনার শরীরে প্রয়োগ করা হয়, তখন সেটি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। চতুর্থ ডোজের ক্ষেত্রে আমরা বিষয়টি বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করেছি। নতুন ভেরিয়েন্টের কথা মাথায় রেখে ভ্যাকসিন বদলাতে গেলে খুব বেশি একটা সুবিধা দেয় না। আবার নতুন টিকা তৈরি করা এবং উৎপাদন করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আর পুরো পৃথিবীজুড়েই টিকার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘অক্সফোর্ডে আমরা শুধু ভ্যাকসিন তৈরি করিনি, অনেক ড্রাগের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করেছি। এগুলোর বাইরেও অক্সফোর্ডে অনেক কাজ হচ্ছে, যা মহামারির সময় অনেক কাজে এসেছে। আমরা ঠিক করেছি যে, আমরা একসঙ্গে কাজ করব এবং নিজেদের গবেষণার কাজে অর্থায়ন সংগ্রহ করার চেষ্টা করব। শুধু ভ্যাকসিন না মহামারির বিভিন্ন প্রেক্ষাপট নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের কিছু ফান্ডিং রয়েছে। তবু আরও কিছু প্রয়োজন আছে, এসব কাজ করার জন্য। এর থেকে আমরা শিখেছি যে সহযোগিতা এবং নেটওয়ার্কিং খুবই জরুরি।’
বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অনেক গ্রুপের মধ্যে সহযোগিতা, গবেষকদের সঙ্গে সংযোগ। আমাদের বিভিন্ন ধরনের মানুষের প্রয়োজন হয়েছে। সুতরাং এই প্রেক্ষাপটে বলতে পারি যে, বাংলাদেশের এরকম নেটওয়ার্ক তৈরি করা প্রয়োজন অথবা যে নেটওয়ার্ক আছে তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হবে। প্রতিযোগিতার মনোভাব না রেখে একসঙ্গে টিম হয়ে কাজ করতে হবে। যারা ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা করেন এবং তৈরি করেন তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। নতুন ভ্যাকসিন তৈরি কিংবা সেই ভ্যাকসিনের পরীক্ষা করার জন্য একসঙ্গে কীভাবে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করা যায়, সেটা নিয়ে ভাবতে হয়।’
অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের সহ-উদ্ভাবক সারাহ গিলবার্ট বলেন, ‘আমরা এখানে টাকা কামানোর উপায় খুঁজছি না। আমাদের প্রচুর পরিমাণে ভ্যাকসিন প্রয়োজন। যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি সেটি খুব সহজে সম্ভব হবে। যদি সবাই নিজের জায়গায় আলাদা আলাদাভাবে কাজ করে তাহলে সেটি সহায়ক হবে না। আমাদের সবাইকে একত্র করতে হবে।’