মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ : দীর্ঘদিন পর পুঁজিবাজারে সেকেন্ডারি মার্কেটে অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে। সম্প্রতি সেকেন্ডারি মার্কেটে কিছুটা ছন্দপতন হলেও চাঙা রয়েছে প্রাইমারি বা আইপিও মার্কেট। এর কারণ হিসেবে সাম্প্রতিক সময়ে আইপিওতে ভালো
মুনাফা হওয়ায় এবং বাজারে নতুন আইপিওর অফার থাকায় এর প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে। এর জের ধরে বাড়ছে বিও অ্যাকাউন্ট সংখ্যা। গত এক মাসে বাজারে দুটি কোম্পানির আইপিও থাকায় এ সময়ের মধ্যে বিও বেড়েছে ২৪ হাজারের বেশি। সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দৈনিক গড়ে খোলা হচ্ছে এক হাজার ২০০টি বিও। সর্বশেষ ২০ কার্যদিবসে মোট বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৩৮টি। আগস্টের শেষে পুঁজিবাজারে বিও সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৬০ হাজার ৬৫৬টি। বর্তমানে বিও সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৮৪ হাজার ৫৯৪টি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পরপর কয়েকটি কোম্পানির আইপিও লটারি বিজয়ীরা পেয়েছেন শেয়ারের চড়া দর। সর্বশেষ বিবিএস কেব্লসের শেয়ারে দর পেয়েছেন প্রত্যাশার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। যে কারণে এ মার্কেটের প্রতি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। এর জের ধরে বাড়ছে বিও অ্যাকাউন্ট।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘প্রাইমারি মার্কেট থেকে যখন বিনিয়োগকারীরা ভালো মুনাফা করতে পারে, তখন এ মার্কেটের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ে। যে কারণে এ রকম সময়ে বিও সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।’
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বের সব পুঁজিবাজারেই উত্থান-পতন আছে। এটা খুবই স্বাভাবিক। এর মধ্যে থেকেই বাজার থেকে গেইন করে নেওয়াই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। তিনি বলেন, আমাদের দেশের জনগণ দিন দিন পুঁজিবাজার বিষয়ে সচেতন হচ্ছে। এখন তারা মার্কেটের সামান্য পতনে ভয় পান না। যে কারণে তারা এ বাজারে আসছেন। কেউ যদি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেন, তাহলে তিনি পুঁজিবাজার থেকে ভালো রিটার্ন পেতে পারেন।’
বাজারসংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের মূল্য-আয় অনুপাত রয়েছে বিনিয়োগের অনুক‚লে। তাদের দৃষ্টিতে এসব শেয়ার ঝুঁকিমুক্তভাবেই ক্রয়যোগ্য। অন্যদিকে বর্তমানে বাজারে অতিমূল্যায়িত শেয়ার নেই বললেই চলে। যে কারণে এ বাজারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাদের মতে, পুঁজিবাজারে নতুন মুখ যোগ হওয়ার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে ব্যাংকে আমানতের সুদের হার কমে যাওয়া। সুদ কম হওয়ায় ব্যাংক ছেড়ে পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন তারা। তাদের যুক্তি, ভালো কোম্পানিতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করলে লভ্যাংশের মাধ্যমেই ব্যাংক থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাদের মতে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের অনুক‚ল পরিবেশ রয়েছে। অন্যদিকে মানি মার্কেটের অবস্থা গ্রাহকদের সন্তোষজনক নয়। যে কারণে তারা পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতিবছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল।
এর আগে সময়মতো বিও ফি না দেওয়ায় গত বছর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তিন লাখের বেশি বিও। সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রধানত দুই কারণে এবার অসংখ্য বিও বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকে বাজারের মন্দা পরিস্থিতি, অন্যটি প্রাইমারি মার্কেট থেকে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা না পাওয়া। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা ৫০০ টাকা দিয়ে বিও নবায়ন করেননি। ফলে এসব অ্যাকাউন্ট বাতিল হয়ে গেছে।
Add Comment