নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝড়, বন্যা, খরা ও দাবানলের কারণে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ৪ কোটি ৩০ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে বলে নতুন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চরম আবহাওয়ার প্রভাবে গড়ে প্রতিদিন ২০ হাজার শিশু তাদের ঘড়-বাড়ি ছেড়েছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ হয়েছে ঝড়-বন্যার কারণে। বাকিরা খরা ও দাবানলের শিকার হয়েছে।
‘ভয়ংকর দাবানল, ঝড় ও বন্যার প্রবেশ যেকোনো শিশুর জন্যই আতঙ্কের,’ বলেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলছে, শিশুদের নিয়ে এই ধরনের প্রতিবেদন এটাই প্রথম। আবহাওয়াজনিত ঘটনাগুলোর কারণে শিশুদের বাস্তুচ্যুতির হিসাব এখন পর্যন্ত পরিসংখ্যান আকারে ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, এসব ঘটনায় পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০২০ সালে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভুটানের ১৫ লাখ শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ২০২১ সালে টাইফুন রাইয়ের কারণে ফিলিপিন্স, পালাউ ও ভিয়েতনাম জুড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে আরও ১৫ লাখ শিশু।
সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে ফিলিপিন্স, ভারত ও চীনে। ২০১৬ সাল থেকে পরবর্তী ছয় বছরে এ তিনটি দেশে বাড়ি ও স্কুল ছেড়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ শিশু। ভৌগোলিকভাবে দেশগুলো ঝড়-বন্যাপ্রবণ। আর জলবায়ু সংকটের কারণে এই ঝুঁকি আরও প্রকট হতে চলেছে। এই তিনটি দেশ দুর্যোগের আগেই বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এটিও উচ্চসংখ্যক বাস্তুচ্যুতির কারণ হতে পারে।
প্রতিটি দেশের জনসংখ্যার তুলনায় বাস্তুচ্যুত শিশুদের সংখ্যার দিকে তাকালেও ভিন্নচিত্র দেখা যায়। ২০১৭ সালে হারিকেন মারিয়ার আঘাতে বিপর্যস্ত হয়েছিল ছোট ক্যারিবিয়ান দ্বীপ দেশ ডমিনিকা। ছয় বছরের মধ্যে সেখানে ৭৬ শতাংশ শিশু বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
দক্ষিণ সুদান ও সোমালিয়ায় বন্যার কারণে সর্বোচ্চ অনুপাতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে শিশুরা। বন্যায় পৃথকভাবে দেশ দুটির ১১ ও ১২ শতাংশ শিশু তাদের বাড়িঘর ছেড়েছে। উভয় দেশই দুর্যোগের আগে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে অনেক কম, যা শিশুদের আরও বেশি ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।
অন্যদিকে সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও আফগানিস্তানে খরার কারণে ১৩ লাখের বেশি শিশু ইতোমধ্যে তাদের ঘর-বাড়ি ছেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার দাবানলও শিশুদের বাস্তুচ্যুতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে তারা আরও বড় আকারের বাস্তুচ্যুতির শিকার হতে পারে বলে ইউনিসেফ জানিয়েছে।
রাসেল বলেন, বাস্তুচ্যুতির প্রভাব বিধ্বংসী হতে পারে। তারা বাড়িতে ফিরবে কি না, স্কুলে ফিরবে কি না বা তারা আবারও উচ্ছেদের শিকার হবে কিনা, সেটি নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। দুর্যোগের কারণে বিভিন্ন জায়গায় স্থানান্তরিত হওয়ার বিষয়টি তাদের জীবন বাঁচাতে পারে, কিন্তু আদতে এটিও সমস্যার বিষয়।
ইউনিসেফ বলছে, স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি যাই হোক না কেন, বাস্তুচ্যুতির ফলে শিশুদের অপব্যবহার, পাচার ও নির্যাতনের ঝুঁকি বাড়তে পারে। পাশাপাশি অপুষ্টি, রোগ ও টিকাদানও অপর্যাপ্ত হয়ে উঠতে পারে। মানবসৃষ্ট জলবায়ু সংকট বাড়ার কারণে চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো আরও গুরুতর এবং স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠছে।
প্রতিবেদনে গবেষণার বরাতে বলা হয়েছে, প্রতি এক ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য বন্যায় বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতির ঝুঁকি ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।
রাসেল বলেন, ‘শিশুদের জন্য ক্রমবর্ধমান এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের কাছে জ্ঞান ও সরঞ্জাম রয়েছে। কিন্তু আমরা খুব কাজ করছি খুব ধীরে।’
