নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নেয়া হয়েছিল বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের শুরুতেই। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে রূপকল্পও গ্রহণ করা হয়। এতে দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যক্তি খাতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক খাত এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ডিজিটাল প্রগ্রেস অ্যান্ড ট্রেন্ডস রিপোর্ট ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে অর্ধেকেরও কম প্রতিষ্ঠানে (ফার্ম) কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। আর ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৪৬ শতাংশে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। অথচ ভিয়েতনাম ও চিলিতে শতভাগ প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। পোল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়ায় এ হার ৯৯ শতাংশ, ব্রাজিলে ৯৭ শতাংশ, জর্জিয়ায় ৯৬ ও প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৯৫ শতাংশ। এছাড়া কেনিয়ায় ৭৯ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ৭২, ঘানায় ৬৯, ইথিওপিয়ায় ৫৩ এবং বুরকিনা ফাসোয় ৫২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। যদিও ভিয়েতনামে শতভাগ প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। ব্রাজিল ও পোল্যান্ডে এ হার ৯৯ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৯৮, প্রতিবেশী দেশ ভারতে ৯৭, চিলিতে ৯৫ ও জর্জিয়ায় ৯৪ শতাংশ। এছাড়া কম্বোডিয়ায় ৮১ শতাংশ ও কেনিয়ায় ৬৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে শুধু কম্পিউটার বা ইন্টারনেট সংযোগ কম থাকাই নয়, বরং ব্যবসার কাজে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যম ব্যবহারেও অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে তিনটি মাধ্যমকে বিবেচনা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। সেগুলো হলোÑওয়েবসাইট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ক্লাউড কম্পিউটিং। এ তিনটি মাধ্যম ব্যবহারেও পেছনের সারিতে রয়েছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ব্যবসার প্রয়োজনে ওয়েবসাইট ব্যবহার করে বাংলাদেশের মাত্র ৩৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান তথা ফার্ম। এক্ষেত্রে চিলির ৬৮ শতাংশ, ব্রাজিল ও পোল্যান্ডে ৬২, ঘানার ৬০, কেনিয়ার ৫৯, দক্ষিণ কোরিয়ার ৫০, কম্বোডিয়ার ৩৮ ও ভিয়েতনামের ৩৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইট ব্যবহার করে। আর ব্যবসার কাজে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বাংলাদেশের মাত্র ২৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। অথচ ভারতে এ হার ৮৪ শতাংশ, চিলির ৭৫, কেনিয়ার ৬৮, ব্রাজিলের ৬৭, ঘানার ৫১ এবং কম্বোডিয়ার ৫০ শতাংশ।
অন্যদিকে বাংলাদেশের মাত্র ৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ব্যবসার কাজে ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে ব্রাজিলের ৪৫ শতাংশ, ঘানার ৪৩, চিলির ৪১, কেনিয়ার ৪০, কম্বোডিয়ার ২০, দক্ষিণ কোরিয়ার ১৭ ও পোল্যান্ডের ১২ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ক্লাউড কম্পিউটিং ব্যবহার করে। আর পণ্য বিক্রিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাংলাদেশের মাত্র এক শতাংশ প্রতিষ্ঠান এবং ইলেকট্রনিক অর্ডার গ্রহণ করে মাত্র পাঁচ শতাংশ প্রতিষ্ঠান।
বিল পরিশোধে বাংলাদেশের মাত্র ২১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অনলাইন ব্যাংকিং এবং ৪১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। আর ৪৫ শতাংশ গ্রাহক ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণ বা প্রদান করে। যদিও প্রতিবেশী দেশ ভারতের ৬৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান অনলাইন ব্যাংকিং বা অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। তবে দেশটির ৩৫ শতাংশ গ্রাহক ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণ বা প্রদান করে।
এদিকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ম্যানুফ্যাকচারিং বাংলাদেশের তেমন কোনো মূল্য সংযোজন বা ভ্যালু অ্যাডিসন নেই। তবে আইসিটি সেবায় মূল্য সংযোজন বছরে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার। আইসিটি ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে মাত্র ২২ হাজার মানুষ নিয়োজিত রয়েছে। তবে আইসিটি সেবায় নিয়োজিত রয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার। আইসিটি পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২০২১ সালে মাত্র দুই কোটি ৪০ লাখ ডলার। তবে ওই বছর আইসিটি সেবা রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৭২ কোটি ডলারের বেশি।
প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের পাশাপাশি ব্যক্তি খাতেও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন সূচক তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, ডিজিটাল সেবা গ্রহণে (অ্যাডাপসন) অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এ দেশে মাত্র ৩৯ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করছে। এর মধ্যে ব্রডব্যান্ড সংযোগ রয়েছে সাত শতাংশের ও মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ ৩২ শতাংশ জনগোষ্ঠীর। মাসে একজন ব্যবহারকারী মোবাইলে গড়ে তিন দশমিক ২০ গিগাবাইট (জিবি) ডেটা ব্যবহার করে।