পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের স্থান। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করার কথা। অথচ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর স্বল্পমেয়াদি বা ডে ট্রেডিং বিনিয়োগে ঝোঁক বেশি দেখা যায়। তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কী করবেন? এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীকে সঠিক আচরণ করতে হবে এবং স্বল্প বা ডে ট্রেডিং বিনিয়োগ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শাহজাহান মিনা ও হাইডেলবার্গ সিমেন্টের পরিচালক গোলাম ফারুক।
গোলাম ফারুক বলেন, ২০১০ সালে ব্যাংক খাতে ২২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ ছিল। এখন তা প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়াল। এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ যেখানে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ধারণক্ষমতা তিন শতাংশ, সেখানে ১০ থেকে ১১ শতাংশ হলো। এটি আসলে ব্যাংকের জন্য খারাপ দিক। পুঁজিবাজারে প্রায় ৩০টি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত। বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ারেরদরেই নাজুক অবস্থা। আর এ অবস্থার জন্য দায়ী খেলাপি ঋণ। তাই দেশের অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ব্যাংক খাতের উন্নয়ন করতে হবে। নতুন সরকার নতুন শক্তি নিয়ে এসেছে; কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়টি সঠিকভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজার হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের কথা; সেখানে তাদের স্বল্পমেয়াদি বা ডে ট্রেডিং বিনিয়োগে ঝোঁক বেশি দেখা যায়। তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কী করবেন। এখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঠিক আচরণ করতে হবে এবং স্বল্প বা ডে ট্রেডিং বিনিয়োগ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
এম শাহজাহান মিনা বলেন, ব্যাংকে যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ রয়েছে, সেটি আদায় না করে বরং ঋণ পরিশোধে সময় বাড়ানো হয়েছে। এতে করে হয়তো কাগজে-কলমে ঋণের পরিমাণ কমে যাচ্ছে; কিন্তু এক বছর পর আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। আবার এসব খেলাপি ঋণ কিছু ইচ্ছাকৃতভাবে এবং কিছু অনিচ্ছাকৃতভাবেই হচ্ছে। এক্ষেত্রে যদি নিয়ম পরিবর্তন করা হয়, তাহলে ভালো ঋণগ্রহীতা কমে যাবে এবং খারাপ ঋণগ্রহীতা বেড়ে যাবে। এতে ব্যাংক খাতে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না। আসলে ইতিবাচক ফল না আসার পেছনে বিশেষ কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। ব্যাংকিং আইনে পরিচালনা-সংক্রান্ত আইন পরিবর্তন করা হয়েছে। এটি আসলে ব্যাংক ব্যবস্থায় পরিচালনার জন্য খারাপ দিক। এখন ব্যাংক খাত পরিচালনায় যে পরিমাণ সুশাসনের অভাব দেখা যাচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে সুশাসনের অভাব বেশি ঘনীভূত হবে। এতে ব্যাংকে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং ব্যাংকের আয় কমে যাবে। ফলে ব্যাংকে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আবার বাজারের পেছনে মূল শক্তি হচ্ছে ব্যাংক খাত। মানি মার্কেটের সঙ্গে ক্যাপিটাল মার্কেট ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাজারকে ভালো করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু গত এক বছরে সেটি সম্ভব হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান মনে করেন, বাজারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো সর্ম্পক নেই। এটি আসলে ভুল ধারণা। কারণ, মানি মার্কেটের সঙ্গে পুঁজিবাজার অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
তিনি আরও বলেন, একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাংক যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পুঁজিবাজারও গুরুত্বপূর্ণ। পুঁজিবাজারকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে এবং সামনে আরও উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অর্থাৎ দেশের জিডিপি গ্রোথ বাড়াতে হলে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ছাড়া সম্ভব নয়।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ