Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:16 pm

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে উৎসাহ জোগান

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিতে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের এ মন্তব্যের যথার্থতা নিয়ে সন্দেহ নেই। আগেও অনেক বিশ্লেষক এমন মন্তব্য করেছেন। তবে পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়েছে বলে মনে হয় না। গতকালের শেয়ার বিজে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতের পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ হলেও এখানে তা মাত্র ১০ থেকে ২০ শতাংশের মতো। এর কারণ নিয়েও প্রশ্ন উঠবে স্বভাবতই। আমাদের ধারণা, এ ইস্যুতে বিস্তর আলোচনা হলেও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ জোগানোর মতো কাঠামোগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সেজন্যই তাদের বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারছে না পুঁজিবাজার। আমরা মনে করি, এ ধারা থেকে বের হতে শিগগির পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এটা করতে হবে শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় নয়, বাজারের স্বার্থেও। এজন্য যেসব কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, সেসব ব্যাপারে নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি ও সুবিবেচনা প্রত্যাশিত। তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কিছুটা হলেও অগ্রগতি অর্জন করা যাবে।

পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির কথা বলা হয় মূলত ডে ট্রেডিং প্রবণতা কমানোর জন্য। এটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও। এর অবসান ঘটানো না গেলে এমন বিনিয়োগের হার বৃদ্ধি পেলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে এটি দেখাশোনার জন্য থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাসম্পন্ন ও অভিজ্ঞ লোক। তারাই যদি এ থেকে বেরোতে না পারেন, তাহলে পুঁজিবাজার বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এমন প্রবণতা থেকে নিবৃত্ত করা কি সহজ হবে? আমরা চাইব, এ ব্যাপারেও দৃষ্টি দেবেন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারকরা। সংশ্লিষ্টদের বুঝতে হবে, বিদ্যমান প্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসে বাজারের স্থিতিশীলতায় ভ‚মিকা রাখলে তারাও এর সুফল পাবেন।

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ঘিরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বেশ কিছু প্রত্যাশা লক্ষ করা গেছে চলতি অর্থবছরের বাজেট-পূর্ববর্তী বিভিন্ন আলোচনায়। বাজেট ঘোষণায় অবশ্য সেসবের অনেকগুলো থেকে গেছে অপূর্ণ। ওইসব নিয়ে কি আলোচনা নতুনভাবে শুরু হতে পারে না? অর্থ মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা কি পারে না সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসতে? আমরা চাইব, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে এ ধরনের আলোচনা আবার শুরু হোক। এতে পরিস্থিতির উন্নয়নে নতুন কিছু সুপারিশও আসবে। পুঁজিবাজারে একটি খাতের দাপট দেখা যাচ্ছে কিছুদিন ধরে। সন্দেহ নেই, এতে লোভে এবং কখনও আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অন্য খাতের বিনিয়োগকারীরা। তারা ব্যাপকভাবে ওইসব খাতের শেয়ার ছেড়ে দিতে শুরু করলে বাজারে সৃষ্টি হয় অস্থিতিশীলতা। তখন দেখা যায়, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতোই আচরণ করছেন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এ সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে এমনটি অপ্রত্যাশিত। এ অবস্থায় কোনো প্রতিষ্ঠান মোট বিনিয়োগের সর্বোচ্চ কত ভাগ একটি খাতে রাখতে পারবে, সেটি নির্দিষ্ট করা যায় কি না ভেবে দেখতে পারেন নীতিনির্ধারকরা। এতে নতুন কোনো জটিলতা সৃষ্টি হবে কি না, সে ব্যাপারে অভিমত নেওয়া যেতে পারে বিশেষজ্ঞদের।

বাজারে যদি ভালো কোম্পানি কিংবা শেয়ার না থাকে, তাহলে কোনো কিছুর বিনিময়েই এর প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করা যাবে না। এজন্য পুঁজিবাজারে ভালো কিছু কোম্পানির অন্তর্ভুক্তি যে প্রয়োজন, সেটাও বলা হচ্ছে বহুদিন থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ ব্যাপারে কিছু তৎপরতা দেখালেও তার ফল এখনও দৃশ্যমান নয়। ওইসব কোম্পানি বাজারে অন্তর্ভুক্ত হতে যাতে আগ্রহ বোধ করে, সেজন্য জোগানো যেতে পারে প্রণোদনা। তাদের দাবি মানার ক্ষেত্রে দূরদর্শিতা দেখানো গেলে কাজটি সহজ হবে। নীতিনির্ধারকদের মনে রাখা দরকার পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একদিকে প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অন্যদিকে আরও বেশি ভালো কোম্পানি।