নিজস্ব প্রতিবেদক: সারা দেশে সব প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেড় কোটি শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে দুপুরের খাবার সরবরাহে একটি নীতির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে দেশের ১০৪ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরা পেতে যাচ্ছে রান্না করা খাবার। গতকাল মন্ত্রিসভায় এটি অনুমোদন পায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি ২০১৯’ অনুমোদন পায়। পরে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি জায়গায় ‘মিড ডে মিল’ চালু আছে। কীভাবে তা সমন্বিতভাবে সারা দেশে শুরু করা যায়, সেজন্যই এ নীতিমালা।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে, এমন তিন থেকে ১২ বছরের শিশুদের জন্য এ নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। তাদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় শক্তিচাহিদার ক্যালরির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ স্কুল মিল থেকে আসা নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় খাদ্য গ্রহণ নির্দেশিকা অনুযায়ী দৈনিক প্রয়োজনীয় শক্তির ১০-১৫ শতাংশ প্রোটিন থেকে এবং ১৫-৩০ শতাংশ চর্বি থেকে আসতে হবে। খাদ্যতালিকার বৈচিত্র্য ঠিক রাখতে ১০টি খাদ্যগোষ্ঠীর মধ্যে অন্তত চারটি বেছে নিতে হবে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার সহকারী উপপরিচালক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার সম্পৃক্ত থাকবেন।
এছাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলা পরিষদ এ কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত থাকবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে তিন উপজেলার স্কুলে রান্না করা খাবার এবং ১০৪টি উপজেলায় বিস্কুট খাওয়ানো হচ্ছে। ওই ১০৪টি উপজেলার মধ্যে ৯৩টিতে সরকার ও ১১টিতে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির অর্থায়নে এ কর্মসূচি চলছে।
পরীক্ষামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে বলে জানিয়ে গিয়াস উদ্দিন বলেন, রান্না করা খাবার দিলে উপস্থিতির হার ১১ শতাংশ বাড়ে। আর শুধু বিস্কুট দিলে উপস্থিতি বাড়ে ছয় শতাংশ। ওইসব এলাকায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ছয় দশমিক ছয় শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি দেখতে পেয়েছি। রান্না করা খাবারের এলাকায় রক্তস্বল্পতা ১৬ দশমিক সাত শতাংশ এবং বিস্কুট দেওয়া এলাকায় চার দশমিক সাত শতাংশ কমেছে।
এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই মন্ত্রিসভা জাতীয় স্কুল মিল কর্মসূচি নীতি অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান গিয়াস উদ্দিন। ‘একই বিস্কুট নিয়মিত খেতে চায় না বাচ্চারা। খাবারের বৈচিত্র্য বিবেচনায় আমরা বিস্কুট, কলা ও ডিম কমন রাখার চেষ্টা করছি। আর বৃহস্পতিবার অর্ধদিবসে শুধু বিস্কুট রাখব।’
গিয়াস উদ্দিন জানান, শুধু বিস্কুট দিলে প্রতিদিন প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য ৯ টাকা হারে বছরে দুই হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা লাগবে। পাঁচ দিন রান্না করা খাবার ও এক দিন বিস্কুট দিলে খরচ হবে পাঁচ হাজার ৫৬০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। বিস্কুট এবং ডিম, কলা ও রুটি দিলে ২৫ টাকা হারে খরচ হবে সাত হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা।
আমরা সব মডেলই চালাব, যেখানে যেটা প্রযোজ্য হয়। ভবিষ্যতে সব ইউনিয়নে এ কর্মসূচি শুরু করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে সারা দেশ কভার করা হবে। তবে সরকারের সঙ্গে স্থানীয় কমিউনিটির সম্পৃক্ততা ছাড়া এ কর্মসূচি সফল করা যাবে না, কারণ স্কুলগুলোয় রান্নাঘর করতে হবে। এজন্য পিপিপি মডেলে করতে পারলে এটি সফল হবে।
দেশে বর্তমানে ৬৬ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৩৪৯টি স্কুলের ৩০ লাখ শিক্ষার্থীকে এখন খাওয়ানো হচ্ছে। তাতে ৪৭৪ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। পরীক্ষামূলক এ ব্যবস্থা ২০২০ সাল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়ে গিয়াস উদ্দিন বলেন, নীতিমালার আলোকে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে সারা দেশে বাস্তবায়ন শুরু হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ কর্মসূচিতে চর ও হাওর এলাকাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা আছে, ভবিষ্যতে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে পাঁচ দিন রান্না করা খাবার এবং এক দিন উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন বিস্কুট সরবরাহ করা হবে।
অনুমোদন পেল ‘স্কুল মিল নীতি’
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা পাবে রান্না করা খাবার
