প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক তিন স্তরেই কমছে ঝরে পড়ার হার

আবদুল হাকিম আবির: একসময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ শিক্ষার্থী ভর্তি করাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টগুলোর (এমডিজি) মধ্যে অন্যতম ছিল শতভাগ শিশুকে স্কুলে আনা। সরকার ও উন্নয়ন সহযোগীদের নানা উদ্যোগের ফলে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুরোপুরি সফল হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয় ঝরে পড়া রোধ। বিশেষ করে মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কমেছে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ প্রকাশিত শিক্ষা পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে দেশের শিক্ষার এ চিত্র উঠে এসেছে।

ব্যানবেইসের ২০১৬ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্যমতে প্রাথমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বর্তমানে ঝরে পড়ার হার ২০ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার ৪০ শতাংশ। ঝরে পড়ার হার কমার বিষয়টিকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০০৮ সালে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ছিল ৫০ শতাংশ। এর পরের বছরগুলোয় ধারাবাহিকভাবে কমেছে ঝরে পড়ার হার। ২০০৯ সালে প্রাথমিকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার নেমে আসে ৪৫ শতাংশে। এর পরের বছর তা আরও কমে নেমে আসে ৩৯ শতাংশে। আর ২০১৩ সালে এ হার ২১ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে ২০ শতাংশে নেমে আসে।
অন্যদিকে মাধ্যমিক স্তরে ২০০৮ সালে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ছিল ৬১ শতাংশ। ২০০৯ সালে তা নেমে আসে ৫৫ শতাংশে। এরপর ২০১১ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৫৩ শতাংশ। এর পরের বছরগুলোয় মাধ্যমিক স্তরে ঝরে পড়ার হার কমেছে দ্রুতগতিতে। ২০১২ সালে এ হার নেমে আসে ৪৪ শতাংশে। আর ২০১৫ সালে এ হার ছিল ৪০ শতাংশ।

এদিকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেও ২০০৮ সালের পর ধারাবাহিকভাবে কমেছে ঝরে পড়ার হার। বছরটিতে এ স্তরে ঝরে পড়ার হার ছিল ৪৬ শতাংশ। এর পরের বছর তা নেমে আসে ৪২ শতাংশে। ২০১১ সালে এ হার ছিল ৩৭ শতাংশ। এরপর ২০১৩ সালে ২১ এবং ২০১৫ সালে ২০ শতাংশে নেমে আসে।

শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার এ নিম্নহারকে দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য আশাব্যঞ্জক মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ বিষয়ে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী শেয়ার বিজকে বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বাড়ছে, পাশাপাশি ঝরে পড়ার হারও কমছে। তবে ঝরে পড়ার এ হারকে এখনও উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার অনেক কম। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে ঝরে পড়ার হারকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে হবে।

এদিকে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণকে ভালোভাবে কাজে লাগানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে ব্যানবেইসের প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা শামসুল আলম বলেন, গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, আমরা ক্রমেই ইতিবাচক অবস্থানে যাচ্ছি। তবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধের পাশাপাশি শিক্ষার মানও যাতে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যায়- সে বিষয়ে নজর রাখতে হবে।

প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে এক লাখ ২২ হাজার ১৭৬টি। এগুলোতে এক কোটি ৯০ লাখ ৬৭ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। সরকারি ও বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল আছে ২০ হাজার ২৯৭টি, যেখানে শিক্ষার্থী ৯৭ লাখ ৪৩ হাজার। এছাড়া চার হাজার ১১৩ কলেজে শিক্ষার্থী ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০